কেন যুগল বন্দনা? লক্ষ্মীপুজো কমিটির সম্পাদক ভুবন মণ্ডল বলেন, ‘বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী নারায়ণের দুই স্ত্রী। লক্ষ্মী ও সরস্বতী। সে কারণেই নারায়ণের সঙ্গে তাঁর দুই স্ত্রীর পুজো করা হয়। এই পুজোর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল চাল ও বিউলি ডালের তৈরি জিলিপি। স্বাদে আলাদা হওয়ায় এই জিলিপির খ্যাতিও রয়েছে। এ বারে জিলিপি দোকান দেওয়ার জন্য প্রায় তিন লক্ষ টাকা নিলাম হয়েছে। জিলিপি তৈরির বরাত পেয়েছেন গ্রামের বীরেশ্বর মণ্ডল। মণ্ডল সম্প্রদায়ের মানুষজন পুজোর খরচের বেশিরভাগটাই বহন করেন। বিঘা প্রতি জমির উপরে নির্দিষ্ট চাঁদা স্থির করে পুজোর বাজেট তৈরি করা হয়।’
তাঁর সংযোজন, ‘হাড়দা গ্রামের লক্ষ্মীপুজোই শারদোৎসব। এখানে দেবীকে অন্নভোগের পাশাপাশি নাডুর ভোগ, জিলিপি, লুচি ও সুজি নিবেদন করা হয়। দুর্গাপুজোর থেকেও বেশি আনন্দ। পুজোকে কেন্দ্র করে পাঁচদিন ধরে আয়োজন করা হয় নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। পুজো দেখার জন্য বহু পর্যটক গ্রামে আসেন। পুজোর ঘট নিয়ে আসার সময়ে বিশেষ গ্রিন আতসবাজির ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
জিলিপির বরাত পাওয়া বীরেশ্বর বলেন, ‘লক্ষ্মীপুজোর প্রাঙ্গণে কেবলমাত্র একটিই দোকান থাকে। নিলামের মাধ্যমে ওই দোকান নিতে হয়েছে। ৩০০ থেকে ৩৫০ কুইন্টালের বেশি জিলিপি বিক্রির আশা করছি। চালের গুড়ো দিয়ে তৈরি করা হয় এই জিলিপি। জিলিপির স্বাদ বাজারের অন্য জিলিপির থেকে আলাদা। আজ, বুধবার থেকে লক্ষ্মীপূজা শুরু হবে। চলবে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত।’
পুজোর শুরু কী ভাবে? জানা গিয়েছে, হাড়দা গ্রামের শুঁড়ি সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা ‘মোড়ল’ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। গ্রামের বাসিন্দা অক্রুর মোড়লকে দেবী লক্ষ্মী স্বপ্নে দেখা দিয়ে বলেন, জ্ঞান ও সম্পদের দুই রূপকে একসঙ্গে পুজো করতে। তাহলেই নাকি গ্রামের মানুষ জ্ঞানের পাশাপাশি বিত্তশালী হয়ে উঠবেন। সেই ‘স্বপ্নাদেশ’ এখনও মেনে চলেন বাসিন্দারা। ফলে, যত ব্যস্ততা থাক, যত কাজ থাক, কোজাগরী পূর্ণিমার পুজোয় গ্রামে হাজির হন সকলে। প্রতি বছরই একই কাঠামোর উপরে মৃন্ময়ী প্রতিমা তৈরি করা হয়। লক্ষ্মীর বাম পাশে অবস্থান করেন দেবী সরস্বতী। দু’পাশে চার জন সখী। স্থানীয়রা সখীদের বলেন ‘লুক-লুকানি’।