এই সময়: গত তিন বছরে একাধিক ঝড়ের সাক্ষী থেকেছে সুন্দরবন। তাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। চার বছর আগে তছনছ করে গিয়েছিল উম্পুন। আর ১৫ বছর আগে আয়লার ঝাপটায় লন্ডভন্ড হয়েছিল রাজ্য। প্রশাসনের অন্দরে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এ বার দানা কি সেই দুই ঝড়ের স্মৃতি নতুন করে ফিরিয়ে দেবে?দানার ক্ষত আয়লা-উম্পুনের মতো ততটা প্রবল হবে কিনা তা অবশ্য বুধবার রাত পর্যন্ত স্পষ্ট হয়নি। তবে ‘ঘর পোড়া গরু’ প্রশাসন প্রস্তুতিতে কোনও খামতি রাখতে চাইছে না। সব বিভাগ থেকেই জারি করা হয়েছে সর্বোচ্চ স্তরের সতর্কতা। বুধবার থেকেই দুই ২৪ পরগনা এবং পূর্ব মেদিনীপুরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে ফেরি চলাচল। আজ, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে রেল-উড়ান চলাচল বন্ধ রাখা হবে। উপকূলবর্তী এলাকা এবং দুই ২৪ পরগনার দ্বীপ এলাকা থেকে সরানো হয়েছে বাসিন্দাদের।

বিভিন্ন পর্যটন স্থান থেকেও সরে যেতে বলা হয়েছে পর্যটকদের। পর্যাপ্ত ত্রাণের সঙ্গে জরুরি অবস্থার জন্য তৈরি রাখা হয়েছে উদ্ধারকারী দলও। নবান্নের তরফ থেকে ন’টি জেলার প্রশাসনকে সব রকম ব্যবস্থা তৈরি রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। চার মন্ত্রী এবং ন’জন আমলাকে বিভিন্ন জেলায় পরিস্থিতির উপরে নজর রাখতে বলা হয়েছে। খোলা হয়েছে একাধিক কন্ট্রোল রুম। ঠিক হয়েছে, সেখানেও একাধিক মন্ত্রী থাকবেন। নবান্ন থেকে জানানো হয়েছে, দানার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে পারে পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূল সংলগ্ন এলাকায়।

ওই দুই জেলায় লাল সতর্কতা জারির পাশাপাশি কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ২৪ পরগনা এবং ঝাড়গ্রামে। এখানে অতি ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। তালিকায় রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম-লাগোয়া বাঁকুড়া জেলাও। সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া দুই মেদিনীপুরের পরিস্থিতির উপরে নজর রাখবেন। বনমন্ত্রী বিরবাহা হাঁসদা থাকবেন ঝাড়গ্রামে, মৎস্যমন্ত্রী বিপ্লব রায়চৌধুরী চলে গিয়েছেন দিঘায়। সুন্দরবন উন্নয়নমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র হাজরাকে সুন্দরবনের পরিস্থিতির উপর নজর রাখার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মঙ্গলবারই পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা-মন্দারমণি, শঙ্করপুর এলাকা থেকে পর্যটকদের ফিরে যেতে বলা হয়েছিল। বুধবার পুলিশ-প্রশাসনের কর্মীরা হোটেলে হোটেলে গিয়ে খোঁজ নেন কেউ রয়ে গিয়েছেন কিনা। কয়েকজন পর্যটক ঝড় দেখার জন্য থাকতে চাইলেও এ দিন বিকেলে তাঁদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়। দিঘা-শঙ্করপুর হোটেলিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক বিপ্রদাস চক্রবর্তী বলেন, ‘প্রশাসনের নির্দেশ পাওয়ার পরে বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হোটেলগুলি থেকে ৮০-৮৫ শতাংশ পর্যটক চলে গিয়েছেন। বাকিরা রাতে ফিরে যাবেন।’ যাতে কেউ জলে নেমে পড়তে না-পারেন, তার জন্য সমুদ্রের ঘাটগুলির রাস্তা বাঁশের ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ওল্ড দিঘা থেকে নিউ দিঘা পর্যন্ত সমুদ্রের পাড় দড়ি দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ ও ন্যশনাল ডিজ়াস্টার রিলিফ ফোর্স (এনডিআরএফ)-এর কর্মীরা মাইকিং করে স্থানীয় বাসিন্দাদের সতর্ক করার সঙ্গে তাঁদের উপকূল এলাকা থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত উপকূল এলাকা থেকে ৫০ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে আনা হয়েছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন পুলিশ জেলার ফ্রেজ়ারগঞ্জ, ঘোড়ামারা, সাগরদ্বীপ, মৌসুনী দ্বীপের বাসিন্দাদের লঞ্চে করে নিরাপদ শিবিরে সরিয়ে আনা হয়েছে।

Cyclone Dana : আজই হানাদারি দানার, বাংলার কান ঘেঁষে ওডিশায় ল্যান্ডফল রাতে

প্রশাসনের তরফে ওই শিবিরগুলিতে পর্যাপ্ত খাবার, পানীয় জল এবং বিদ্যুতের জন্য জেনারেটরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বুধবার গঙ্গাসাগরে আসা ভিন্ রাজ্যের তীর্থযাত্রীদের কাকদ্বীপের লট নম্বর এইট ফেরিঘাটে আটকে দেয় পুলিশ প্রশাসন। গঙ্গাসাগরে থাকা সমস্ত তীর্থযাত্রীদের এ দিন দুপুরের মধ্যে প্রশাসনিক নিরাপত্তায় সাগরের কচুবেড়িয়া ঘাট থেকে ভেসেলে করে কাকদ্বীপে পৌঁছে দেওয়া হয়। ভিন্ রাজ্য থেকে আসা যাত্রীদের পুলিশ স্থানীয় সাইক্লোন সেন্টারে নিয়ে যায়। গঙ্গাসাগর, পাথরপ্রতিমা এবং বকখালির উপকূলে মোতায়েন করা হয়েছে এনডিআরএফ। বকখালির হোটেল থেকে পর্যটকদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। দুর্যোগে অশান্ত সমুদ্রে আটকে পড়া ২৫ জন মৎস্যজীবীকে বুধবার উদ্ধার করে সুন্দরবন পুলিশ জেলার কর্মীরা।

বুধবারই আশাকর্মীদের মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রত্যন্ত এলাকা ৬৫ জন অন্তঃসত্ত্বা মহিলাকে আনা হয়েছে সাগর গ্রামীণ হাসপাতালে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট, হাসনাবাদ, হিঙ্গলগঞ্জ, সন্দেশখালি, মিনাখাঁ ব্লকে সবরকমের প্রস্তুতি এ দিনই সেরে ফেলা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিদ্যাধরী, ইছামতী, কালিন্দী, রায়মঙ্গল, কলাগছি, ডাঁসা প্রভৃতি নদী তীরের বাসিন্দাদের সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে সাইক্লোন সেল্টারে। সন্দেশখালির আতাপুর তালতলার ঘাট, মনিপুর, ভাঙা তুষখালি, ধামাখালি, হিঙ্গলগঞ্জের সর্দারপাড়া, যোগেশগঞ্জ, গোপালের ঘাট, সাহেবখালি, দুলদুলি, হাসনাবাদের ট্যাংরামারি, বিশপুর, বাঁশতলি এলাকার বাঁধের অবস্থা ভালো নয় বলে সেখানে সেচ কর্মীরা মেরামতির কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version