স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সোমবার, প্রথম দিন মাথাভাঙা বাজারে নিয়ে যাওয়ার আগেই ইলিশ বিক্রি হয়ে গিয়েছিল নদীর চরে। সেখান থেকেই একটা ছ’শো গ্রাম ইলিশ কিনে এনে তার স্বাদ চেখে দেখেছেন মাথাভাঙার কমলেশ সরকার। তাঁর কথায়, ‘সাতশো টাকা কেজিতে একটি মাছ কিনেছিলাম। কোলাঘাট, বাংলাদেশের ইলিশের মতো স্বাদ নয়। কিছুটা খেতে নোনতা। তবে এই অঞ্চলের নদীতে ইলিশ মিলেছে সেটাই বড় কথা।’
পদ্মার ইলিশ বাংলাদেশ এ বার ভারতে পাঠাবে কিনা তা নিয়ে বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল। পুজোর মুখে সেই রুপোলি শস্য ভারতে এসেছিল। তবে উত্তরবঙ্গের মানুষ ‘ঠান্ডা’ ইলিশ থেকে মানসাই-এর ইলিশ নিয়ে বেশি খুশি। একটা সময় কোচবিহারের কালজানি, রায়ডাক নদীতেও ইলিশ মিলত। সেটা দেড় দশক আগে। হঠাৎ করে তারা উধাও হয়ে গিয়েছে। আর আসছে না। তবে মাথাভা উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা দেবপ্রিয়া সরকার (মৎস্য বিজ্ঞান) বলছেন, ‘বর্ষার সময়ে ইলিশ মাছ ডিম পাড়তে সাগর থেকে মিষ্টি জলের সন্ধানে নদীতে আসে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এখন তো বর্ষা নয়? তাহলে কেন তারা এখন নদীতে আসলো? ওই মাছগুলোর পেটে ডিম রয়েছে কিনা দেখতে হবে। যদি ডিম না থাকে তাহলে অন্য কোনও কারণ থাকতে পারে।’
কোচবিহারে নদী ও পরিবেশ নিয়ে কুড়ি বছর কাজ করছেন অরূপ গুহ। তিনি বলেন, ‘মানসাই নদী মাথাভাঙার নয়ারহাট হয়ে বাংলাদেশের লালমণিরহাটে ধরলা নদীর সঙ্গে মিশেছে। ধরলা নদী আবার গিয়ে মিশেছে ব্রহ্মপুত্রের সঙ্গে। ব্রহ্মপুত্র যা বাংলাদেশে যমুনা নামে পরিচিত তার সঙ্গে যোগ রয়েছে পদ্মার। এ ভাবেই পদ্মার ইলিশ চলে এসেছে মানসাই নদীতে।’ মাথাভাঙা মৎস্য সমবায় সমিতির সম্পাদক অনিল দাসও বলেন, ‘ব্রহ্মপুত্র নদীর সঙ্গে মানসাই নদীর সংযোগ রয়েছে।’
পুরুলিয়ার সিধো-কানহো-বীরসা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যার অধ্যাপক, তথা ইলিশ গবেষক অসীমকুমার নাথ বলেন, ‘মানসাই নদীতে ইলিশ নতুন কিছু নয়। ১৪ অক্টোবর থেকে ৪ নভেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধ। কারণ এই সময় ইলিশ ডিম ছাড়তে মিঠে জলের খোঁজে স্রোতের উল্টোদিকে উপরের দিকে উঠতে শুরু করে। এই ইলিশগুলি মেঘনা থেকে পদ্মা হয়ে ফরাক্কার দিকে চলে আসে। এই সময় কিছু ইলিশ ঝাঁক থেকে ছিটকে বিভিন্ন স্রোতে ঢুকে পড়ে। যেহেতু পদ্মার সঙ্গে মানসাইয়ের যোগ রয়েছে, তাই বছরের এই সময়ে ইলিশ উত্তরবঙ্গের নদীতে পাড়ি দেয়।’
তাই বলে জলের সীমারেখা ভুলে বাংলাদেশের পদ্মা থেকে চারশো কিলোমিটার দূরে মানসাই নদীতে। ইলিশ-প্রেমেই বুঁদ এখন মাথাভাঙা।