জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নদীর জলের মতো দীর্ঘ চার দশক সময় গড়িয়েছে। এতদিন পর হারিয়ে যাওয়া মাকে ফিরে পেয়ে আনন্দে উৎফুল্ল একমাত্র ছেলে বিশ্বজিৎ মন্ডল। খুশি প্রতিবেশীরাও। দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিংয়ের মাতলা ৪ নম্বর এলাকার বাসিন্দা ঝড়ুপদ মণ্ডল বিয়ে করেছিলেন বারুইপুরের চম্পাহাটী এলাকার অঞ্জলিকে। দিব্যি চলছিল মণ্ডল দম্পতির সংসার। বিয়ের পরই মন্ডল দম্পতির এক সন্তান হয়। ছেলে বিশ্বজিত মণ্ডলের বয়স যখন দুবছর, ঠিক তখনই মণ্ডল পরিবারে নেমে আসে অন্ধকার। বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর বাড়িতে ফিরে আসেনি ঝড়ুর স্ত্রী। সালটা ইংরেজির ১৯৮৫।

আরও পড়ুন- আমেরিকায় লাফিয়ে বাড়ছে নোরো ভাইরাস, জানুন কেন এর ভ্যাকসিন তৈরি করা যাচ্ছে না

ঝড়ু ও তার পরিবারের লোকজন বিস্তর খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে হতাশায় ভেঙে পড়ে।  রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে খোঁজখবর করেছিলেন ঝড়ু। শুধু রাজ্যে নয়,ভিনরাজ্যেও খোঁজ করেছিলেন। অগত্যা স্ত্রী বিহনে শোকে কান্নায় ভেঙে পড়ে। একমাত্র সন্তান বিশ্বজিতকে বুকে আগলে রেখে স্ত্রীর খোঁজ করেন। এমত অবস্থায় বছর ২ অতিক্রান্ত হয়।

এদিকে, প্রতিবেশীদের চাপে ঝড়ু নতুন করে ঘর বাঁধে এক মহিলার সঙ্গে। ভেঙে যাওয়া সংসার জোড়া লাগিয়ে ঝড়ুর দ্বিতীয় স্ত্রী নিজের ৩ সন্তানদের সঙ্গে সৎ ছেলেকেও আদরযত্নে বড় করে। আজও সৎ ছেলের সঙ্গে সৎ মায়ের সম্পর্ক অত্যান্ত ভালো।
ঝড়ু ভুলে যায় প্রথম স্ত্রীর কথা। ছেলে মেয়েদের বিয়েও হয়ে যায়। এমনকি গত প্রায় বছর ৪ আগে ঝড়ু সন্ন্যাস নেয়। ক্যানিংয়ের স্থানীয় একটি মঠেই থাকেন। অন্যদিকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে বাড়িতে ফেরার ইচ্ছা থাকলেও পথ ও ঠিকানা ভুলে যাওয়ায় আর বাড়িতে ফেরা হয়নি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলা অঞ্জলির। পাশাপাশি কমেছে শ্রবণ ক্ষমতাও। কথাবার্তাতেও আছে হালকা অসংলগ্নতা। এমন ভাবেই অঞ্জলি দেবীর জীবন থেকে দীর্ঘ ৪০ বছর কেটে গিয়েছে রাজপথ, ফুটপাথ, ষ্টেশন বাজারহাট এলাকায়।

দীর্ঘ প্রায় ৪০ বছর পর আচমকা ট্রেনে চেপে ক্যানিং ষ্টেশন নামেন। টলমল পায়ে ষ্টেশন থেকে ট্রেনের সামনে পড়ে যাচ্ছিলেন। কয়েকজন টোটো চালক তাঁকে উদ্ধার করে। কোন রকমে খোঁজ খবর নিয়ে হাজির হয় মাতলা ৪ নম্বর বাজার এলাকার ঝড়ুর বাড়িতে। ঝড়ুর পরিবারের বর্তমান সদস্যরা কেনই বা তাকে চিনবে! পরে ঝড়ু সামনে এসে তাকে চিনতে পারে। বাক্ রুদ্ধ হয়ে পড়ে সকলে। যেন দিবাস্বপ্ন দেখছে। এরপর হারিয়ে যাওয়া মায়ের সাথে আলাপ করে ছেলে বিশ্বজিত। চল্লিশ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া স্মৃতি ফিরে আসে। এমন কাকতালিয় ঘটনার খবর চাউর হতেই মণ্ডল বাড়িতে ভীড় জমায় প্রতিবেশীরা। ঘটনার কথা জানতে পেরে হাজির হন এলাকার বিশিষ্ট সমাজসেবী রবীন্দ্র নাথ অধিকারী। তিনি অঞ্জলি দেবীর হাতে পুষ্পস্তবক দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দেন।
 
অঞ্জলি দেবীর কথায় ছেলেকে ছেড়ে আর যাব না। ছেলের কাছেই যেন আমার মৃত্যু হয়।

অন্যদিকে অঞ্জলি দেবীর একমাত্র ছেলে বিশ্বজিতের কথায়, দুবছর বয়সে মা হারিয়ে গিয়েছিল বাবার কাছে শুনেছিলাম। দীর্ঘ প্রায় উনচল্লিশ বছর মায়ের কোন স্নেহ পাইনি। আক্ষেপ ছিল। জন্মদাত্রী মাকে যখন পেয়েছি আর যাতে হারিয়ে না যায় সেভাবেই আগলে রাখব।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version