জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন বাংলা সাহিত্যের কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ (Humayun Ahmed)। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কের জ্যামাইকা হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তাঁর মৃত্যুর কারণ ক্যানসার বলেই জানত সকলে, তবে এবার লেখকের দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওনের (Meher Afroz Shaon) বিরুদ্ধে অবহেলা ও গাফিলতির অভিযোগ আনলেন এক প্রকাশক।
রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) রাতে লাইভ আলোচনায় সাংবাদিক ড. কনক সরওয়ার এবং নিউইয়র্কের বিশিষ্ট লেখক ও প্রকাশক বিশ্বজিৎ সাহা হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। প্রকাশক বিশ্বজিৎ সাহা, যিনি হুমায়ূন আহমেদের শেষ দিনগুলোতে তাঁর সঙ্গী এবং যুক্তরাষ্ট্রে তার স্থানীয় অভিভাবক ছিলেন, তিনি বলেন, হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশ থেকে লক্ষ লক্ষ ডলার পাঠানো হয়েছিল কিন্তু তৎকালীন সময়ে অর্থাভাবে চিকিৎসা বিলম্বের কথা বারবার প্রচার করা হয়। যদিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য ১০,০০০ ডলারের চেক দেন। এছাড়াও বেশ কয়েকটি সংবাদপত্র থেকেও অর্থ সাহায্য করা হয়। ব্যক্তিগত স্তরেও অনেকেই আর্থিক সাহায্য করেছিলেন।
চিকিৎসকদের মতে, হুমায়ূন আহমেদ ক্যানসার শতভাগ নিরাময় সম্ভব ছিল। তাঁর ৭টি কেমো শেষ হওয়ার পর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল তাই তাঁর অপারেশন করা হয়। অপারেশনের পর হাসপাতালে থাকার প্রয়োজন থাকলেও তাঁকে আগেভাগে ছাড়িয়ে আনা হয়, যা মারাত্মক ভুল ছিল বলে অভিযোগ করা হয়। তাঁর দাবি অপারেশনের পর প্রয়োজনীয় কেয়ার না নেওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে।
প্রকাশক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘হুমায়ূন আহমেদকে বাসায় নিয়ে যাওয়া দিনই একটি পার্টির আয়োজন করা হয়, যেখানে তিনি চেয়ার থেকে পড়ে যান। শাওন তখন আমায় ফোন করে হাসপাতালের নম্বর চাইলেও চেয়ার থেকে পড়ে যাওয়ার ঘটনা গোপন করেন এবং তাঁকে হাসপাতালে নেওয়া হয় একদিন পর। এমনকী হাসপাতালেও তাঁর পড়ে যাওয়ার বিষয়টি লুকানো হয়। পড়ে গিয়ে তাঁর সেলাই খুলে যায় এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়, যা পরিস্থিতিকে আরও সংকটময় করে তোলে’।
আরও পড়ুন- Sonu Nigam: ‘দাঁড়াতে হলে ভোটে দাঁড়ান’, কলকাতার কনসার্টে বিশৃঙ্খলা! রেগে লাল সোনু…
তিনি আরও দাবি করেন, ‘শাওন ও মাজহার তাঁর পরিবারের সঙ্গে দূরত্ব সৃষ্টি করেন এবং ছোট মেয়ে দেখা করতে এলেও তাকে অপেক্ষা করতে বাধ্য করা হয়। চিকিৎসার জন্য আসার পর তাঁকে কোনও ফোন করা হয়নি, বরং তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হলে শাওনের মাধ্যমেই তা করতে হত। হাসপাতালের মেডিকেল রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ও সংক্রমণের কারণেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে, যা অবহেলারই প্রমাণ’।
প্রসঙ্গত, হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুর পর পাওয়া জ্যামাইকা হাসপাতালের রিপোর্ট অনুযায়ী, অতিরিক্ত ব্লিডিং ও সংক্রমণের কারণে মৃত্যু হয়েছে। যদিও সেই সময় জানা যায় যে ক্যানসারে মারা গেছেন। বিশ্বজিৎ সাহা আরও বলেন, যদি এই মেডিকেল রিপোর্ট না থাকত, তাহলে তাঁর মৃত্যু শুধুমাত্র ক্যান্সারের কারণে হয়েছে বলে প্রচার করা হত। এ বিষয়ে ২০১২ সালের ১ আগস্ট, চট্টগ্রামের আইনজীবী ও লেখক নজরুল ইসলাম চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় হুমায়ূন আহমেদের স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন ও প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয় যে, অবহেলা ও গাফিলতির কারণে হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে সিআইডিকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়। সেই মামলায় আরও উল্লেখ করা হয় যে, অপারেশনের পর হুমায়ূন আহমেদকে মাংস ও পানীয় গ্রহণে বাধ্য করে শাওন।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)