মৃত্যুঞ্জয় দাস ও পার্থ চৌধুরী: বহু প্রতীক্ষার অবসান। দুদিন আগেই জানা গিয়েছিল, এবার সারদা মায়ের গাঁ জয়রামবাটি পর্যন্ত ছুটবে ট্রেন! রেলের লাইন পাতা থেকে শুরু করে স্টেশন তৈরির কাজ প্রায় শেষ। চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। দেশবিদেশের ভক্ত ও পুণ্যার্থীরা এবার সরাসরি ট্রেনে চড়েই পৌঁছে যেতে পারবেন মায়ের গাঁয়ে। দীর্ঘদিন ধরে এই সুযোগের প্রতীক্ষায় বিস্তীর্ণ এলাকার সাধারণ মানুষ থেকে ভক্তজন।

Zee ২৪ ঘণ্টার সব খবরের আপডেটে চোখ রাখুন। ফলো করুন Google News

তারপর আজ, বৃহস্পতিবারই মায়ের গাঁ জয়রামবাটিতে গড়াল রেলের চাকা। এল ‘কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটি’র ট্রেন। যে ট্রেনকে ঘিরে দেখা গেল হাজার হাজার মানুষের আবেগ আর উচ্ছ্বাস। লোকসভায় প্রসঙ্গ তুলে দ্রুত যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর দাবি সাংসদের। দীর্ঘ জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে মা সারদার পবিত্র জন্মস্থান জয়রামবাটিতে গড়াল রেলের চাকা। আজ, বৃহস্পতিবার কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির বিশেষ ট্রেনটি জয়রামবাটির পবিত্র মাটি ছুঁতেই ট্রেনকে ঘিরে উপচে পড়লেন এলাকার হাজার হাজার মানুষ। তাঁদের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস আর আবেগ ছিল চোখে পড়ার মতো। অন্য দিকে, এদিনই কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির ট্রেন যাত্রার প্রসঙ্গ লোকসভায় তুলে দ্রুত ওই রেলপথে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের দাবিও জানান বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ। 

রেলপথে প্রাচীন মল্লভূমের রাজধানী বিষ্ণুপুর তথা রাজ্যের অন্য অংশের সঙ্গে মা সারদার পবিত্র জন্মস্থান জয়রামবাটিকে জুড়ে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয় ২০০০ সালের গোড়ায়। তৎকালীন কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, বিষ্ণুপুর থেকে জয়রামবাটি হয়ে তারকেশ্বর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করা হবে।

এরপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গিয়েছে। বিভিন্ন উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে পার হয়েছে রেল প্রকল্পটি। ধাপে ধাপে প্রকল্পের কাজ শেষ করে কখনো বিষ্ণুপুর  থেকে গোকুলনগর পর্যন্ত, আবার কখনো সেই রেলপথ সম্প্রসারিত করে বিষ্ণুপুর থেকে ময়নাপুর পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারপর থেকেই ভাবাদিঘি সমস্যার কারণে শ্লথ হয়ে যায় প্রকল্পের কাজ। অত্যন্ত ধীর গতিতে হলেও চলতি বছরের গোড়াতেই  ময়নাপুর থেকে জয়রামবাটি পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের কাজ শেষ হয়। নতুন পথে গোপীনাথপুর ও জয়রামবাটী দুটি স্টেশন তৈরি করা হয়। তারপরেই রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়, মা সারদার পবিত্র জন্মস্থান জয়রামবাটি পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু করা হবে। 

আর এরই প্রক্রিয়া হিসাবে আজ আর একধাপ এগোল রেল কর্তৃপক্ষ। আজ কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির বিশেষ ট্রেন চালানো হয় সম্প্রসারিত ওই রেলপথে। বিশেষ ট্রেন হলেও এই প্রথম মায়ের গাঁয়ে পৌঁছল ট্রেন। স্বাভাবিকভাবেই যা নিয়ে জয়রামবাটির মাতৃমন্দিরের সন্ন্যাসী-ভক্ত থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের আবেগ-উচ্ছ্বাস ছিল দেখার মতো। এদিন রেলের তরফে নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময়ের বহু আগে থেকেই ট্রেন দেখতে সাধারণ মানুষেরা ভিড় জমান জয়রামবাটি স্টেশনে। উপচে পড়া সেই ভিড় ঠেলে সাড়ে তিনটা নাগাদ কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটির বিশেষ ট্রেন পৌঁছে যায় মায়ের গাঁয়ে। প্রথম দিনের এই ট্রেনযাত্রার সাক্ষী থাকতে স্টেশনে হাজির ছিলেন মাতৃমন্দিরের ভক্ত সন্ন্যাসীরাও। স্থানীয়দের দাবি, আগামীদিনে ওই রেলপথে নিয়মিত ট্রেন চলাচল শুরু হলে জয়রামবাটিতে দেশ-বিদেশের ভক্তদের আনাগোনা যেমন সহজতর হবে, তেমনই বদলে যাবে গোটা এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিবেশ।

একসময় বাঁকুড়ার জয়রামবাটি থেকে কলকাতায় স্বামী রামকৃষ্ণদেবের কাছে যাওয়ার জন্য ট্রেনে চড়েই যাতায়াত করতেন জগজ্জননী মা সারদা। কিন্তু তখন সে পথ ছিল বড় কষ্টের। জয়রামবাটি থেকে গরুর গাড়িতে চড়ে প্রায় ৪০ কিমি পাড়ি দিয়ে পৌঁছাতে হত বিষ্ণুপুর স্টেশনে। সেখান থেকে ট্রেনে চড়ে যেতে হত কলকাতায়। সেটা এবার বদলে যাচ্ছে।

বাঁকুড়া থেকে হাওড়া সরাসরি রেলযোগ কি চালু হতে চলেছে?

বিজেপি সাংসদ সৌমিত্র খাঁয়ের একটি ফেসবুক পোস্ট ঘিরে সেই জল্পনা আবার ডানা মেলেছে। এই রেল যোগাযোগ শুরু হলে বাঁকুড়া ও পূর্ব বর্ধমান জেলার এক বিরাট অংশের মানুষ উপকৃত হবেন।

আরও পড়ুন: Baba Vanga Predictions: আসবে অপ্রত্যাশিত সব বদল! বড়সড় এবং মাথা-ঘোরানো ব্যাপার-স্যাপার ঘটবে এই সব রাশির জীবনে…

আরও পড়ুন: Shani Gochar 2025: ৩০ বছর পরে মীনে শনি! মহা সৌভাগ্যের সূচনা হতে চলেছে এই কয়েকটি রাশির জীবনে, আসছে দারুণ সুসময়…

সাংসদ সৌমিত্র খাঁ দীর্ঘদিন ধরে সংসদে এই রেল চলাচল শুরুর দাবি করে আসছন। সাংসদ তাঁর ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘বিষ্ণুপুরই আমার প্রাণ। কয়েকদিন আগে আমি সম্মানীয় রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোজিকে বাঁকুড়া থেকে ভায়া মশাগ্রাম হয়ে হাওড়া পর্যন্ত যে নতুন ইন্টারসিটি ট্রেনের জন্য আবেদন করেছিলাম, আজ সেটা পাস হয়ে গেল। তার চিঠিও চলে এসেছে। এবং আমার যেটা স্বপ্ন ছিল দীর্ঘদিন ধরে, জয়রামবাটি স্টেশন থেকে বড় গোপীনাথপুর স্টেশনে রেললাইনের কাজ কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে এবং ২৭ তারিখ ট্রেন যাবে।’

একই সঙ্গে তাঁকে লেখা কেন্দ্রীয়  রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোর একটি চিঠিও সৌমিত্র প্রকাশ করেছেন। ওই চিঠিতে তিনি এই রেল যোগাযোগ চালুর জন্য প্রয়োজনীয় খোঁজ নিতে বলেছেন। প্রসঙ্গত, গত নভেম্বরে হাওড়া বর্ধমান কর্ড লাইনের মশাগ্রাম স্টেশনে কাজকর্ম সম্পূর্ণ হয়েছে।

এর ফলে বাঁকুড়া-মশাগ্রাম হয়ে সরাসরি হাওড়া যাওয়া যাবে। কমবে যাত্রার সময়। এর ফলে, খড়গপুর হয়ে নয়, এবার বাঁকুড়া-মশাগ্রাম হয়ে সরাসরি হাওড়া পৌঁছবে ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। বিষ্ণুপুরের সাংসদ সৌমিত্র খাঁ  কয়েকদিন আগে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণোকে বাঁকুড়া থেকে মশাগ্রাম হয়ে হাওড়া পর্যন্ত নতুন ইন্টারসিটি ট্রেনের জন্য আবেদন করেছিলেন। তাঁর দাবি, সেটি অনুমোদন পেয়েছে এবং চিঠিও এসে গিয়েছে। রেলের এই উদ্যোগ পর্যটক-সহ দক্ষিণ দামোদরের সাধারণ মানুষের জন্য এক বড় সুখবর। নতুন এই ট্রেন পরিষেবার ফলে বিশেষভাবে উপকৃত হবেন দক্ষিণ দামোদর ছাড়াও ইন্দাস পাত্রসায়রের মানুষ। এতদিন এই সব এলাকার যাত্রীদের বাঁকুড়া, বর্ধমান ও দুর্গাপুর এসে ট্রেন ধরতে হত। কিন্তু এবার তাঁরা সরাসরি কলকাতা পৌঁছতে পারবেন। রেলযাত্রীরা জানিয়েছেন, এই ট্রেন চালু হলে এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নতি হবে। পড়াশোনার জন্য যাতায়াতের সুযোগ বাড়বে। 

এখন যাত্রীদের নজর, কবে থেকে এই ট্রেন পরিষেবা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়, সেই দিকেই। যাত্রীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে এক বড় ধরনের সুবিধা হয়ে উঠতে পারে।

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version