অয়ন ঘোষাল: কসবা কলেজে গণধর্ষণকাণ্ডে (Kasba College Gang Rape) মূল অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্রের (Manojit Mishra) সঙ্গেই গ্রেফতার তাঁর আরও ২ শাগরেদ প্রমিত মুখার্জি ও জায়েব আহমেদ। মূল অভিযুক্ত ‘ম্যাংগো’ মনোজিৎ মিশ্র ভাঙচুর, মারধর ও দাদাগিরির অভিযোগে আগে জেল খাটলেও, ২ শাগরেদের অপরাধের তেমন কোনও পূর্ব রেকর্ড নেই। কসবাকাণ্ডে এই ২ জনের নাম উঠে আসতেই, হতবাক তাঁদের পরিচিতরা।
কসবা কাণ্ডের দ্বিতীয় অভিযুক্ত প্রমিত মুখার্জি
কসবা কাণ্ডের দ্বিতীয় অভিযুক্ত প্রমিত মুখার্জি হাওড়ার চ্যাটার্জিহাট থানার ১৬/১ হরিনাথ ন্যায়রত্ন লেনের বাসিন্দা। এলাকায় ডাক নাম ঋজু। তার নাম এই ঘটনায় জড়ানোয় কিছুটা অবাক প্রতিবেশীরা। অতীতে তার কোনও অপরাধমূলক কাজকর্মের রেকর্ড নেই। প্রাথমিক তদন্তে এখনও পর্যন্ত যা উঠে এসেছে, তাতে দেখা গিয়েছে প্রমিত মূলত মনোজিৎকে অপরাধে সাহায্য করেছিল। এখন সে নিজেও সমান অপরাধী কিনা তা জানতে তাঁকে এবং মনোজিতকে নিরবচ্ছিন্ন জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিস। ১ জুলাই মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ অভিযুক্ত পুলিস হেফাজতে থাকবে। নির্যাতিতার মেডিক্যাল পরীক্ষার রিপোর্ট এবং ফরেনসিক টিম শুক্রবার ঘটনাস্থল থেকে যে যে নমুনা সংগ্রহ করেছে তা সম্মিলিতভাবে পরীক্ষা করে নির্যাতিতার বয়ানের ওপর ভিত্তি করে প্রমিত ঠিক কীভাবে ঘটনায় যুক্ত তা নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইছে পুলিস। মূল অভিযুক্ত এই কলেজের প্রাক্তনী এবং চুক্তিভিত্তিক কর্মী। ফলে কোন ধরনের চাপের মুখে মূল অভিযুক্ত অর্থাৎ মনোজিৎকে সাহায্য করেছিল এবং মদত দিয়েছিল প্রমিত, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কসবা কাণ্ডের তৃতীয় অভিযুক্ত জায়েব আহমেদ
কসবা কাণ্ডের তৃতীয় অভিযুক্ত জায়েব আহমেদ তিলজলা থানা এলাকার ৬৪/এ, গুলাম জিলানী খান রোডের বাসিন্দা। এলাকায় একেবারেই পরিচিত নয়। কার্যত এই ঘটনায় নাম উঠে আসার পর এলাকাবাসী প্রথম গতকাল এই নামটি শুনলেন বলে অনেকে দাবি করেছেন। আইন কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। কলেজ শুরুর অনেক আগে থেকেই প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেত। ফিরত বেশ রাত করেই। পুলিশের কাছে ছাত্রী অভিযোগে জানিয়েছে, কলেজে ঢোকার কিছুক্ষণ পরেই মনোজিত্ তাঁকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। ছাত্রী জানিয়ে দেন, তাঁর প্রেমিক আছে এবং তিনি অন্য কাউকে ভালোবাসেন। এরপরই মনোজিতের আচরণ পালটে যায়। অভিযোগ, তারপর কলেজের প্রধান গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাইরে যাওয়ার রাস্তা আর থাকে না। গার্ডরুমে নিয়ে গিয়ে শুরু হয় মানসিক ও শারীরিক অত্যাচার। ছাত্রীটি কাঁদছিলেন, পা ধরে বারবার বলেছিলেন, ‘আমার শরীরটা ভালো নয়, দয়া করে ছেড়ে দাও।’ কিন্তু কিছুই শোনেনি মনোজিত ও তার দুই সঙ্গী, দাবি নির্যাতিতার।
‘ম্যাংগোদা এরকম করবে ভাবতেই পারিনি’
জায়েব আহমেদ বোসপুকুর তালবাগান ক্রসিং থেকে ধরা পড়ে। রিফিউজ করার আক্রোশ থেকে ঘটানো এই ঘৃণ্য অপরাধ পূর্ব পরিকল্পিত কিনা তা খতিয়ে দেখতে জায়েবের মোবাইল ফোনের পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা চলছে। কলেজের প্রাক্তনী, একসময়ের দাপুটে ছাত্র নেতা এবং বর্তমানে কলেজেই চুক্তিভিত্তিক কাজ করা মনোজিত কোনওভাবে জায়েবকে অপরাধে সামিল হতে প্রভাবিত করেছিল কিনা তাও খতিয়ে দেখছে পুলিস। ওদিকে কলেজের বর্তমান এক ছাত্র বিস্ফোরক দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, “ম্যাংগোদা এরকম করবে ভাবতেই পারিনি। কলেজে যথেষ্ট দাপট এবং প্রভাব ছিল। ফেস্ট অর্গানাইজ করত। কলেজ ছুটির পর এখানেই বা আশেপাশের চায়ের দোকানে হ্যাং আউট করত। আড্ডা মারত। আমার দাদার মতো ছিল। খাতায়কলমে অফিসিয়াল ছাত্র নেতা না হলেও কলেজে ম্যাংগোই ছিল কমান্ডার।”
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)