অয়ন ঘোষাল: এপার বাংলা শিল্পীরা (Indian Artist) সহ অভিনেতা অভিনেত্রীদের বাংলাদেশ (Bangladesh) অভিনয়ের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে বেশ কিছু মাস ধরে। কিন্তু বাংলাদেশের অভিনেতা অভিনেত্রীরা এ দেশে এসে অভিনয় করছেন, সাফল্য অর্জন করছেন, সাংস্কৃতিক আদার প্রদান করছেন। বাংলাদেশ এক্ষেত্রে এত বাধা নিষেধ আরোপ করেছে সেখানে ভারত বা পশ্চিমবঙ্গের সাংস্কৃতিক জগৎ (Tollywood) এত উদারতা দেখাচ্ছে কেন- সোশ্যাল মিডিয়ায় এমনই বিস্ফোরক প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য মহিলা তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তথা কলকাতা পৌরসভার বরো চেয়ারম্যান জুঁই বিশ্বাস (Jui Biswas)

সাধারণ নাগরিক হিসেবে আবেদন: 

তৃণমূল নেত্রী হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে এই আবেদন করছেন তিনি। নিজের সোশ্যাল মিডিয়ায় জুঁই বিশ্বাস লেখেন, ‘এটি সত্যি যে সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেখা গেছে, পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীরা বাংলাদেশে কাজ করতে গেলে প্রশাসনিক জটিলতা, ভিসা জট বা এমনকি ডিটেনশন-এর মতো ঘটনাও ঘটছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক ও দুশ্চিন্তার বিষয়। যদি দুই দেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান হয়, তাহলে সেটা দুই-পক্ষের হওয়া উচিত—না যে এক তরফা উদারতা দেখাতে হবে, না এক তরফা বন্ধুত্ব মেনে নিতে হবে।

পশ্চিমবঙ্গ ব্রাত্য কেন: 

বাংলাদেশ যদি ভারতীয় শিল্পীদের জন্য সুযোগ সীমিত করে রাখে, তাহলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, ভারত কেন বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য দরজা খোলা রাখছে?

জয়া আহসানকে নিয়ে বিতর্ক: 

জয়া আহসান নিঃসন্দেহে একজন প্রতিভাবান অভিনেত্রী, কিন্তু প্রশ্নটা প্রতিভার নয়—প্রশ্নটা ন্যায়বিচার ও ভারসাম্যের। যখন ভারতীয় শিল্পীরা সীমাবদ্ধতায় ভোগেন, অথচ বাংলাদেশি শিল্পীরা এখানে বড় সুযোগ পান, তখন তা সবার চোখে বৈষম্য বলে মনে হয়।এখানে পশ্চিমবঙ্গের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কি সেই চরিত্রগুলো করতে অক্ষম? অবশ্যই না। তাহলে বারবার বিদেশি শিল্পীদের এমন ‘বাড়তি’ গুরুত্ব দেওয়ার যুক্তি কী?

producer/ director রা দেশ বিরোধী কাজ করছে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিৎ নয় কি?

মুক্ত শিল্পচর্চার পরিসর: 

যে কোনও শিল্পচর্চাই অবশ্যই মুক্ত হওয়া উচিত, কিন্তু তার মধ্যে দেশীয় শিল্পীদের সুযোগ দেওয়াটাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। যখন তাদের কাজের সুযোগ বিদেশি শিল্পীদের দিয়ে দেওয়া হয় (যেখানে সেই দেশ ভারতীয় শিল্পীদের আটকে দেয়), তখন সেটি দায়বদ্ধতার অভাব বলেই মনে হয়।
শুধু প্রতীকী সহযোগিতা নয়, স্থায়ী নীতিগত অবস্থান দরকার।
যেমন:
 • যদি পাকিস্তানি শিল্পীদের ভারত নিষিদ্ধ করে, তাহলে বাংলাদেশি শিল্পীদের জন্য শর্তহীন মঞ্চ কেন?
 • একতরফা সংস্কৃতিক আদান-প্রদান কি আর রাজনীতি বা কূটনীতিতে কার্যকর?

অর্থনৈতিক ক্ষতি: 

এটি নিছকই অর্থনৈতিক ক্ষতির প্রশ্ন নয়। এটি একটি  ‘soft power’ বা সাংস্কৃতিক ক্ষমতার প্রশ্ন। যখন ভারতের শিল্পীরা অন্য দেশের বাজারে প্রবেশ করতে পারে না, অথচ বিপরীতে সেই দেশের শিল্পীরা ভারতে ব্যবসা, সম্মান এবং সুযোগ পান, তখন এটা কেবল ‘বাণিজ্য’ নয়—ভারসাম্যহীনতা ও আত্মমর্যাদার প্রশ্ন।

আমরা উদারতা দেখাচ্ছি—কিন্তু তার মূল্য দিচ্ছে নিজেরাই। উদারতা কূটনৈতিক সম্পর্কের একটি দিক হতে পারে, কিন্তু তার ভিত্তি হওয়া উচিত পারস্পরিকতা।
বন্ধুত্ব কাঁধে কাঁধ রেখে চলে, হাঁটু গেঁড়ে নয়।’

সবার উপরে দেশের প্রশ্ন: 

জি ২৪ ঘন্টার মুখোমুখি হয়ে তিনি আরও জানান, ‘আমার রাজনীতি করার ধরন আলাদা বিজেপি রাজনীতি করার ধারণা আলাদা। কিন্তু সবার উপরে দেশের প্রশ্ন। আমাদের দেশের শিল্পীরা বাংলাদেশে কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না। একজন নাগরিক হিসেবে এবং একজন জনপ্রতিনিধি হিসেবে, শিল্পীদের কণ্ঠস্বর হয়ে এই প্রশ্ন তুলছি। সমগ্র বাংলাদেশে একটা ভয়ভীতির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কোনও ভারতীয়, বাংলাদেশে কাজ করতে ভয় পাচ্ছে। কোনও শিল্পী ওখানে পারফর্ম করতে পারছে না। কলাকুশলী-সিঙ্গার-ডান্সার-নায়ক-নায়িকা পারফরম্যান্স সঙ্গে যুক্ত কেউ বাংলাদেশের শুটিং করতে পারছে না। যদি করতে পারত, তাহলে আমি গর্বিত হতাম।

বাংলাদেশে জটিলতা: 

বাংলাদেশ সব সময় বন্ধুত্বপূর্ণ দেশ ছিল। কিন্তু ভারতীয় শিল্পীদের কণ্ঠস্বর বাংলাদেশ আটকে দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ভিসা জটিলতা নয় প্রশাসনের জটিলতা নয়, বাংলাদেশের সরকারকে প্রচুর পরিমাণে ট্যাক্স দিতে হয় একটা ইভেন্ট অর্গানাইজ করতে গেলে। বাংলাদেশের নায়ক নায়িকারা ভারতবর্ষে এসে বা অন্য কোন জায়গায় গিয়ে শুটিং করছে। ভারতীয় শিল্পীরা পিছিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেশে কি এমন কোন অভিনেত্রী পাওয়া গেল না যে জয়া আহসানের চরিত্রটি অভিনয় করতে পারতেন? জয়া নিঃসন্দেহে একজন বিশাল বড় অভিনেত্রী। ওঁর প্রতিভা নিয়ে আমার কোন বক্তব্য নেই।

আরও পড়ুন: R.G.Kar Rape Case Sanjay Roy Case:’আমাকে ফাঁসানো হয়েছে, বেকসুর খালাস করে দিন,’ সঞ্জয় রাইয়ের আর্জি গ্রহণ করল কোর্ট, আরজি কর কাণ্ডে ফের তোলপাড়…

আরও পড়ুন: CRPF JAWAN DEATH in Chhattisgarh: বাবার ক্যানসার, বোনের বিয়ের খরচ… মাথায় ৩০ লাখের বোঝা! বউয়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে বলতেই গু*লি CRPF জওয়ানের…

বাংলাদেশের কোন অভিনেত্রী যদি ভারতবর্ষে স্বাধীনতাভাবে কাজ করেন, যে পরিমাণ বাণিজ্য তারা এখানে এসে করতে পারছেন, যে পরিমাণ সংস্কৃতিক আদান-প্রদান ওঁরা করতে পারছেন, আমাদের দেশের শিল্পীরা বাংলাদেশে গিয়ে সেটা করতে পারছে না কেন? এখানকার যে সমস্ত নির্দেশক পরিচালক প্রযোজক বাংলাদেশের শিল্পীদের এখানে অভিনয় করার সুযোগ দিচ্ছেন তারা কি মনে হচ্ছে না অন্যায় করছেন? আমাদের দেশে ট্যালেন্টের অভাব রয়েছে? যেখানে আমাদের শিল্পীদেরকে আটকে দিচ্ছে বারবার অন্যদের সেখানে অন্যদেরও শিল্পীদের নিয়ে আমরা কেন কাজ করব? এজন্য শিল্পী হওয়া দরকার পড়ে না। সাধারণ নাগরিক হিসেবে আমাদের বক্তব্য।’

 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version