প্রবীর চক্রবর্তী: একুশের মঞ্চ থেকে বাংলার বাইরে বাংলাভাষীদের উপর অত্যাচারের তীব্র বিরোধিতা করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমি মরার জন্য তৈরি কিন্তু বাংলা ভাষার উপর কোনও অপমান-অসম্মান মানব না। একটা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে রেজাল্টটা দেখেছেন তো? মহারাষ্ট্রে মতুয়াদের উপর অত্যাচার করেছে। অসমে মা কালীর মন্দির ভেঙে দিলেন আর নির্বাচনের সামনে মা কালী- মা দুর্গার কথা মনে পড়ল?”
একুশের মঞ্চে একটি কাগজ তুলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেন, বেশ কয়েকটি রাজ্যে নাকি একটি করে সার্কুলার কেন্দ্রীয় সরকার পাঠিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সন্দেহভাজন কেউ হলেই সেই ব্যক্তিকে নাকি একমাস পর্যন্ত আটক করে রাখা যায়। মমতা দাবি করেন, হাজার জন বাঙালিকে আটক করা হয়েছে। ওড়িশা, দিল্লিতে বাঙালিদের ওপর ‘অত্যাচার’ নিয়ে অভিযোগ করেন মমতা। মমতা বলে, ‘যাকে যাকে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক করা হয়েছিল, তাদের মামলা করে ছাড়িয়ে এনেছি আমরা। এরা বাংলা ভাষায় কথা বলত বলে।’
তৃণমূল সুপ্রিমো বলেন, “বিচারের বানী নিরবে নিভৃতে কাঁদছে। আগেরবার বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙ্গেছিল। আর এই দেখুন বিজেপির সার্কুলার। আমাদের পাঠায়নি, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোকে পাঠিয়েছে। এখানে বলা হয়েছে যাকে মনে হবে, সন্দেহ হবে বাংলাদেশি বলে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিতে হবে। বাংলা ভাষার উপর চলছে বিরাট সন্ত্রাস। বাংলা এসব মানবে না। এখানে সব মানুষের অধিকার সংরক্ষিত হবে। বিজেপির একজন বলছেন এখানে নাকি ১৭ লক্ষ রোহিঙ্গা রয়েছে। আরে সারা পৃথিবীতে কত রোহিঙ্গা আছে ? একটা রিপোর্ট বলছে সারা পৃথিবীতে মোট প্রায় ১৩/১৪ লক্ষ রোহিঙ্গা আছে”।
মমতা আরও বলেন, “কোচবিহারের এই ভাই উত্তম, রাজবংশী মানুষ। তাকে অসম সরকার নোটিশ পাঠিয়েছে। কী অধিকার আছে আপনাদের? এত বড় সাহস ! উড়িষ্যায় এক ছাত্রী যখন নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে চেয়েছিলেন তখন তাকে পুড়িয়ে দিয়েছেন। কি উত্তর দেবেন এর ? আপনারা বাংলা ভাষার উপর এত সন্ত্রাস কেন করছেন ? বাংলা ভাষায় কথা বলার জন্য বাঙালিদের উপর এই সন্ত্রাস যদি বন্ধ না হয় তাহলে এই লড়াই কিন্তু দিল্লি পর্যন্ত যাবে। ২০২৬ এ আরো বেশি সিট নিয়ে জিততে হবে। আর জেতার পর ২০২৯ এ দিল্লিতে বিজেপিকে হারাতে হবে। অসম মুখ্যমন্ত্রী(হিমন্ত বিশ্বশর্মা) আপনি অসম সামলাতে পারছেন না আর বাংলাকে লক্ষ্য করছেন ? আমি সুস্মিতা দেবকে বলছি অসমে আন্দোলন শুরু করো, আমরা সবাই যাবো। প্রয়োজনে আবার ভাষা আন্দোলন হবে। দেখতে চাই আপনাদের কত ডিটেনশন ক্যাম্প রয়েছে”।
এদিনের মঞ্চ থেকে আগামীর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। আগামী ২৬ জুলাই থেকে প্রতি শনি, রবিবার বাংলা ভাষাভাষী মানুষদের উপর আক্রমণ, অত্যাচার নিয়ে মিটিং মিছিল ও ধর্না করার ঘোষণা করলেন তৃণমূল সুপ্রিমো। এছাড়াও ২৭ জুলাই নানুর দিবস। ওই দিন থেকে টানা ইলেকশন পর্যন্ত এটা চলবে। ওইদিন থেকে ভাষা আন্দোলন শুরু হবে। ভাষার উপর সন্ত্রাস মানছি না মানব না, বাঙালিদের উপর অত্যাচার মানছি না, মানব না।
মমতার সুরেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাংলায় কথা বললে অসমের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন বাংলাদেশি। হিমন্ত বিশ্ব শর্মার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা এরা নিয়েছে? এবার থেকে আমরা পার্লামেন্টে সবাই বাংলায় কথা বলব। দেখি কে কী করতে পারে। আগে কখনও সখনও বলতাম। এখন বেশি করে বলব”।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)