জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ব্য়ুরো: ‘আমাদের ভাষাকে নিয়ে খেলবার চেষ্টা করবেন না, অসম্মান করারও চেষ্টা করবেন না’। বাংলার ভাষায় ‘অপমানে’র প্রতিবাদে ফের সোচ্চার মুখ্য়মন্ত্রী। বললেন, ‘বাংলা ছাড়া না হয় ভারত, না হয় পৃথিবী’।
এদিন হুগলির কামারপুকুরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিজেপি বলে কি না বাংলা বলে কোনও ভাষাই নেই! শুনে রাখুন, বাংলা ছাড়া ভারতীয় সংস্কৃতি তৈরি হত না। বাংলাই ভারতের সংস্কৃতির পথিকৃৎ। সঙ্গে হুঁশিয়ারি, ‘আমাদের ভাষাকে নিয়ে খেলবার চেষ্টা করবেন না, অসম্মান করারও চেষ্টা করবেন না’।
মুখ্যমন্ত্রীর আরও বক্তব্য. ‘এক ধর্ম আর এক ধর্মকে সহনশীলতায়, আদরে, যত্নে রাখে। বেলুড় মাঠে গিয়ে মুসলিম দরগা দেখে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, বেলুড় মঠে কেন মুসলিম দরগা। তখন মহারাজেরা বলেছিলেন স্বামীজির সময় থেকেই এটা রয়েছে। তাহলে কারা এই সর্বধর্ম সমন্বয় গুঁড়িয়ে দিচ্ছে? আর বলে দিচ্ছে বাংলা বলে কোনও ভাষাই নেই! বাংলা ছাড়া কি সংস্কৃতি হয়। বাংলা ছাড়া ভারত হয় না, বাংলা ছাড়া সংস্কৃতি হয় না। রামকৃষ্ণদেব যে সর্বধর্ম সমন্বয়ের শিক্ষা দিয়ে গিয়েছিলেন, তা পাথেয় করেই আমরা চলি। নতুন করে আমাদের ধর্ম শিখতে হয় না। বিজেপির কাছ থেকে আমরা ধর্ম শিখব না। আমরা যা শিখেছি রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব স্বামী বিবেকানন্দের কাছ থেকে। সেটা একবার ব্রেনে নিয়ে নিয়েছি, তা আর ভাঙা যাবে না।
মুখ্যমন্ত্রী মনে করিয়ে দেন, ‘ভারতের জাতীয় সংগীত জনগণমন অধিনায়ক বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের লেখা, বন্দেমাতরম ঋষি বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও রামমোহন রায় সমাজ সংস্কারে নবজাগরণের পথিকৃৎ ছিলেন, নেতাজি দিয়েছিলেন জয় হিন্দ মন্ত্র। এঁরা সবাই বাঙালি, বাংলা এদের মাতৃভাষা। আর আপনারা সেই বাংলাভাষাকেই কুৎসা করছেন’। বলেন, ‘প্রথমে কথামৃত, তরুণের স্বপ্ন লেখা হয়েছে বাংলাতেই। পরে অনেক বই ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন করা হয়েছে। স্বামী বিবেকানন্দের বাড়ি বিক্রি হয়ে যাচ্ছিল, আমি একদিনের মধ্যে খবর পেয়ে তাদের ট্রাস্টিকে হস্তান্তর করেছিলাম। সিস্টার নিবেদিতার বাড়িও অধিগ্রহণ করে ট্রাস্টিকে দিয়ে দিয়েছি। এঁরা আমাদের প্রাণপুরুষ, এঁরা না থাকলে জগৎ সংসার চলে না’।
বিজেপি রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের পাল্টা কটাক্ষ, ‘বাংলার ইতিহাসকে কেউ ভুলিয়ে দিতে চায়নি। কেউ ভুলিয়ে দিতে পারবে না। বাংলা ছাড়া ভারত হয় না. সেরকম ভারত ছাড়া বাংলাও হয় না’। তিনি বলেন, ‘মুখ্য়মন্ত্রী যখন কেন্দ্রে মন্ত্রী ছিলেন, সেই সময় বঙ্কিমচন্দ্রের লেখা বন্দে মাতরমকে প্রত্যেকটি স্কুলের বাধ্যতামূলক করেছিলেন দিল্লির মুখ্য়মন্ত্রী মদনলাল খুরানা, তার প্রতিবাদে কংগ্রেস রাস্তায় নেমে বসেছিল, এর মধ্যে সাম্প্রদায়িকতার গন্ধ আছে। এই গান প্রত্যেক স্কুলে গাওয়া যাবে না। মুখ্য়মন্ত্রী সেদিন প্রতিবাদ করেননি। যেদিন মুখ্যমন্ত্রী দলের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও বর্ষীয়ান সৌগত রায় বসেছিলেন, বন্দেমাতরমের মধ্যে সাম্প্রদায়িকতা গন্ধ আছে, সেদিন মুখ্যমন্ত্রী প্রতিবাদ করেননি’।
শমীকের অভিযোগ, ‘মুখ্যমন্ত্রী বাংলা ভাষাকে পরির্তন করার চেষ্টা করেছেন। রামধনুকে রঙধনু বানিয়েছেন। পার্টির নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেছিলেন, সেদিন আসন্ন, যেদিন এই পশ্চিমবঙ্গের ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ উর্দুতে কথা বলবে, উর্দু ভাষা কার্যকরী হয়ে যাবে। বিপরীত অবস্থানে কোনও বিবৃতি দেননি। পশ্চিমবঙ্গের সৃষ্টির ইতিহাসকে ভোলানোর জন্য পয়লা বৈশাখকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে পালন করছেন, তার কোনও নৈতিক অধিকার নেই এই ধরণের কথা বলার’।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)