জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বাংলার বাইরে নানা রাজ্যে সরকারি নিয়ম আছে, সিনেমাহলে প্রাইম টাইমে সেই রাজ্যের ভাষার ছবিই চালাতে হবে। বাংলায় সেই নিয়ম নেই, তাই সঠিক সময়ে শো পাওয়া নিয়ে বাংলা সিনেমাকে প্রায়ই অবহেলার মুখো পড়তে হয়। এই সমস্যায় জেরবার গোটা ইন্ডাস্ট্রি। বড় বাজেটের হিন্দি ছবি মুক্তি পেলেই কোনঠাসা হয়ে যায় বাংলা ছবি। এহেন অবস্থায় কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে ইন্ডাস্ট্রি। এবার সিনেমা হল দখলের এই লড়াইয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata banerjee) দ্বারস্থ প্রসেনজিত্ চট্টোপাধ্যায় (Prosenjit Chatterjee) থেকে শুরু করে দেব (Dev)।
দেব জি ২৪ ঘণ্টাকে জানান যে ‘বড় বড় হিন্দি ছবি রিলিজ করলেই আমরা হল পাই না। ওয়ার ২ রিলিজ করছে, তারা বলছে আমরা হিন্দি ছবি চালাব। শুধু বাংলা ভাষা নিয়ে নয়, আমার লড়াই বাংলা সিনেমাকে নিয়েও। ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই আমার দিকে তাকিয়ে বসে আছে। দেব লড়াই করলে আমরা সাহস পাব। ধূমকেতু রিলিজ করবে, অনেকেই বলছে শো শেয়ার করবে না। কেন করবে না? বাংলায় বাংলা ছবি চলবে না, এটা কী করে হতে পারে? সরকারের কাছে আবেদন থাকল, এই উত্সবের মরসুমে যে দাপট শুরু হয়েছে ওরা বলছে নো শো শেয়ারিং হবে, হিন্দি সিনেমা শো ছাড়বে না বলছে এটা যেন না হয়। শুধু ভাষা বাঁচালেই হবে না, আমাদের আর্ট-কালচার সিনেমাকেও বাঁচাতে হবে’।
প্রসঙ্গত, একদিকে বড় বাজেটের হিন্দি ছবি ‘ওয়ার টু’ আসছে অগাস্টে, অন্যদিকে মুক্তি পাচ্ছে বহু প্রতীক্ষিত বাংলা ছবি ‘ধূমকেতু’। বাংলায় সিঙ্গল স্ক্রিনের সংখ্যা হাতে গোনা। ফলে মাল্টিপ্লেক্সে শো পাওয়া নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানোতর। দর্শক চাইছেন, ছবি তৈরিও হচ্ছে, কিন্তু সেই ছবি ঠিকমতো পৌঁছচ্ছে না সিনেমাহলে। অগাস্টের রিলিজ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে, হিন্দি ছবির ডিস্ট্রিবিউটররা হলমালিকদের কাছে আসছে কঠিন শর্ত—চারটে শো, সবই হিন্দি ছবির। বাংলা ছবির সঙ্গে শো ভাগ করা চলবে না। এর জেরে বাংলা ছবি শোই পাচ্ছে না প্রায়। হলে শো পাওয়ার এই সমস্যা নিয়েই এক হলেন পরিচালক প্রযোজক থেকে শুরু করে অভিনেতারাও। এই সমস্যা সমাধানের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি লিখলেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, দেব থেকে শুরু করে পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়, প্রযোজক শ্রীকান্ত মোহতা, নিসপাল সিং রানে। বাংলা সিনেমাকে বাঁচাতেই সম্মিলিত চিঠি।
চিঠিতে লেখা, “আজ বাংলা চলচ্চিত্রের এক গভীর অসম্মানজনক পরিস্থিতিতে আপনার শরণাপন্ন হতে বাধ্য হচ্ছি আমরা। বাংলা সিনেমার তরফ থেকে একপ্রকার ভাষা আন্দোলনের এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ এটা।বেশ কিছু বছর ধরে বড়-বড় হিন্দি ছবির রিলিজের সময় মুম্বইয়ের প্রযোজক-পরিচালকরা কঠোর শর্ত দিচ্ছেন বাংলার সিনেমাহলগুলোকে যে, সঙ্গে কোনও বাংলা ছবি চালালে, তারা হিন্দি ছবি চালাতে দেবেন না। মহারাষ্ট্রে, পাঞ্জাবে বা দক্ষিণ ভারতে তাঁরা এমন কোনও শর্ত দেওয়ার ধৃষ্টতা দেখান না। বাংলার ক্ষেত্রে আমাদের হল মালিকরা এই কারণেই বাংলা ছবি বাতিল করে ওই হিন্দি ছবি চালাতেই বাধ্য হচ্ছেন বারবার। আপনি এই অসম্মানের লাগাম না ধরলে আমরা কোনওদিন মাথা তুলতে পারব না। নতুন বাংলা ছবি বারবার রিলিজের সময়ে হল না পেয়ে মুখ থুবড়ে পড়বে। এই বাংলা আমাদের, ভাষা আমাদের, বাংলা চলচ্চিত্র আমাদের অহংকার ও ঐতিহ্য। আপনার শরণাপন্ন আমরা। বাংলা সিনেমা দিনের যথাযথ প্রাইম টাইমে চালানোটা সারা বছর বাধ্যতামূলক হোক, আমাদের সব সিনেমা হলে। বাংলা সিনেমার সঙ্কটমোচন হোক বাংলার সর্বোচ্চ অভিভাবকের হাতে।” এই চিঠি পৌঁছনোর পরই জানা যায়, রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের তত্ত্বাবধানে ৭ অগাস্ট দুপুরে নন্দনে ডাকা হয়েছে এক জরুরি বৈঠক। সেই বৈঠকে বড় সিদ্ধান্তের আশায় টলিপাড়া।
(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের App, Facebook, Whatsapp Channel, X (Twitter), Youtube, Instagram পেজ-চ্যানেল)