শ্রেয়সী গঙ্গোপাধ্যায়: সোমবার  হুমায়ুন কবীরের (Humayun Kabir) দল ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’ (Janata Unnayan Party)  আনুষ্ঠানিক পথ চলা শুরু হয়েছে। প্রথম দিনই দুই হিন্দু ব্রাহ্মণ মহিলার নাম প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করে চমকে দিয়েছিলেন হুমায়ুন। মঞ্চ থেকেই ঘোষণা করেন ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটে মুর্শিদাবাদ কেন্দ্রের প্রার্থী হবেন মনীষা পাণ্ডে। সেইসঙ্গে কলকাতার বালিগঞ্জ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জনতা উন্নয়ন পার্টির প্রতীকে লড়াই করবেন নিশা চট্টোপাধ্যায় (Nisha Chatterjee)।  কিন্তু দল ঘোষণার ২৪ ঘণ্টাও কাটতে পারল না, বালিগঞ্জ  আসনের প্রার্থী বদলের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন ভরতপুরের বিধায়ক।

Add Zee News as a Preferred Source

জনতা উন্নয়ন পার্টির তরফে হুমায়ুন কবীর জানিয়েছেন, বালিগঞ্জ থেকেও লড়বেন মুসলিম প্রার্থী। আগামী ৭ দিনের মধ্যেই নাম ঘোষণা করবেন তিনি। অর্থাৎ, বালিগঞ্জ থেকে লড়বেন না নিশা। কিন্তু মঞ্চে নাম ঘোষণার পর হঠাৎ কেন নিশার নাম বাদ দেওয়া হল?  জানা যাচ্ছে সোমবার নিশাকে প্রার্থী ঘোষণা করার পর রাত থেকে নিশার একাধিক পোস্ট করা রিল ভাইরাল হতে থাকে সোশ্যাল মিডিয়ায়। যে রিলগুলির শালিনতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দলের অন্দরে। বিতর্ক তৈরি হতে থাকে। আর এরপরই হুমায়ুন সিদ্ধান্ত নেন নিশাকে জনতা উন্নয়ন পার্টির প্রার্থী পদ থেকে বাতিল করা হবে। 

দলীয় সূত্রে খবর, নিশা চট্টোপাধ্যায়ের কিছু পুরনো ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়তেই বিপত্তি শুরু হয়। কানাঘুষো শোনা যায়, নিশাকে নাকি বারে দেখা গিয়েছে, যা দলের ভাবমূর্তির পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। সেই কারণেই প্রার্থী পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে হুমায়ুন কবীরের বক্তব্য, ‘ওঁর কিছু ভিডিও রয়েছে, যেগুলো দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে পারে। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বালিগঞ্জে মুসলিম প্রার্থীর নাম খুব শিগগিরই ঘোষণা করব।’ নিশার বদলে ৭ দিনের মধ্যে বালিগঞ্জ আসনে মুসলিম প্রার্থীর নাম ঘোষণা করবে ‘জনতা উন্নয়ন পার্টি’।

প্রসঙ্গত, বালিগঞ্জ সংখ্যালঘু অধ্যুষিত কেন্দ্র। তা সত্ত্বেও কেনো সেখানে কোনও মুসলিম প্রার্থী না দিয়ে নিশাকে প্রার্থী করা হল , এনিয়েও দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল। হুমায়ূন অনুগামী সূত্রে খবর কেন কোনও যাচাই না করে, কোন একজনের কথায় প্রার্থী হিসাবে নিশার নাম ঘোষণা করা হল। এছাড়া হুমায়ূনও লক্ষ করেন নিশার সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ধরনের রিল বা ভিডিও পোস্ট করা আছে, তাতে দলের ইমেজ নষ্ট হবে। এই সমস্ত কারণ খতিয়ে দেখে নিশাকে পার্টি থেকে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেন  হুমায়ুন। 

ব্যক্তিগত স্বাধীনতা বনাম রাজনীতি: একজন ইনফ্লুয়েন্সার হিসেবে নিশার লাইফস্টাইল এবং তাঁর রাজনৈতিক পরিচয়কে গুলিয়ে ফেলা হয়েছে।

ধর্মীয় সমীকরণ: সেকুলারিজমের আড়ালে হিন্দু-মুসলিম কার্ড খেলার যে অভিযোগ তুলেছেন নিশা, তা রাজনৈতিকভাবে অত্যন্ত স্পর্শকাতর।

স্বচ্ছতার অভাব: প্রার্থী নির্বাচনের আগে নিশার প্রোফাইল যাচাই না করা এবং পরে সেটি নিয়ে বিতর্ক তৈরি করা তাঁর সম্মানে আঘাত হেনেছে।

মঙ্গলবার, সাংবাদিক সম্মেলন করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হুমায়ুনের দল থেকে বাদ হয়ে যাওয়া নিশা চ্যাটার্জি জানালেন- ‘কেন আমার প্রোফাইল আগে যাচাই করা হলো না? আমাকে চিনতে পারলেন না, অথচ নাম ঘোষণা করে দিলেন? আমি সত্যিই হতাশ। আমাকে প্রার্থী কেন করা হলো? ওঁর উদ্দেশ্য আমি বুঝতে পারছি না।’ তিনি আরও বলেন, ‘নতুন দল হলে আমি তাতে যোগ দিতে রাজি আছি। উনি আমার সামাজিক কাজ দেখে আমায়, দলে নিতে চেয়েছিলেন। ও বলেছিল আমাকে, আমার নিজের দল তৈরি হলে, আমি তোমাকে সেখানে জায়গা দেব।’

স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘কিন্তু আমার নাম ঘোষণা হওয়ার পরেই শুরু হল বিতর্ক। আমি ভাইরাল হয়ে গেলাম। আমার সোশ্য়াল মিডিয়া থেকে আমার ব্রা-প্যান্টি পরা ছবি নিয়ে কথা হচ্ছে। আমিও জানতে চাই কোথায় সে সব ছবি? আমি একজন সোশ্যাল ইনফ্লুয়েন্সার, সোশ্যাল মিডিয়ায় আমার ব্যক্তিগত ছবি থাকতেই পারে।’ যোগ করেন, ‘আমি আগে জানলে সোশ্যাল মিডিয়া লক করে প্রাইভেট করে রাখতাম। উনি তো আগে কিছু বলেননি। আমার কাজ দেখে প্রভাবিত হন, এবং তারপর প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। উনি নিজেই সব ঘোষণা করেন। আমাকে এভাবে ভাইরাল করে দিয়ে ওঁর কী লাভ হল? আমজনতারই বা কী লাভ হল? আমি তো ওঁর মাথায় বন্দুক রেখে বলিনি যে, আমার নাম ঘোষণা করুন। আমার মতো হিন্দু মেয়েকে স্বেচ্ছায় উনি বেছেছিলেন।’

নিশা বলেন, ‘এটা কেমন সেকুলার (ধর্মনিরপেক্ষ) দল? একজন হিন্দু মেয়েকে কেন নেওয়া হল? আমি ইনফ্লুয়েন্সার, আমার নিজস্ব জীবনধারা আছে। আমার প্রোফাইল পাবলিক, আমি সেটা ব্লক করিনি। আমি জানলে প্রোফাইল লক করে রাখতাম। আমি সমাজসেবা করি, কোনও দল করি না। আমাকে নেওয়া হয়েছিল নতুন কোন দলে রাখার জন্য।’

তৃণমূল (TMC) কি ভাইরাল করেছে আপনার ছবি? এই প্রশ্নের উত্তরে প্রার্থীপদ বাতিল হওয়া নিশা জানান, ‘তৃণমূলের সায়নীদির সিগারেট হাতে ছবি আছে, নুসরাত বা মিমির ভাইরাল ভিডিয়ো আছে—তাই বলে কি তারা রাজনীতি করেনি?’ 

একটা হিন্দু মেয়েকে সরিয়ে এখন মুসলিম মেয়েকে আনা হবে হুমায়ুন চাচা এরকম বলছেল—তাহলে এটা কীসের সেকুলার পার্টি? আমি হিন্দু মেয়ে হয়েও বাবরি মসজিদের জন্য লড়তে চেয়েছিলাম। আমি আগে কোনও রাজনীতি করিনি। আইপ্যাক (IPac) কি আপনার বদনাম করেছে?এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি কিছুই জানতাম না। ৪ জনের নাম ঘোষণা করবেন বলেছিলেন, তাহলে ৫ নম্বর নাম হিসেবে আমার নাম কেন ঘোষণা করা হলো?- জানান নিশা। 

শেষে তিনি বলেন, ‘আমি সমাজসেবা করি এবং কাজ করতে চাই। কেউ সাহায্যের হাত বাড়ালে আমি তা ধরবই। হুমায়ুন কবীর চাচা কেবল বাবরি মসজিদ নিয়েই কথা বলেন। মুসলিম ইমোশন নিয়ে খেলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, বিধানসভা একটি পবিত্র জায়গা এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে মনে হয়েছে নিশাকে সেখানে রাখা যাবে না। এই কথাগুলো স্টেজে কেন বলা হল না? তখন কেন চুপ ছিলেন?’

আরও পড়ুন: Bangladesh Dipu Das Family: জ্য়ান্ত জ্বালানো দীপুর প্রাণের মূল্য মাত্র ২৫ হাজার টাকা? জল্লাদ ইউনূস খুঁদকুড়োয় কিনতে চাইছে হিন্দু সর্বহারা পরিবারকে…

আরও পড়ুন: Bangladesh Violence: ১২৫ কোটি টাকার সুপারি, হাদির মাথার বাঁপাশে শ্যুটারের লক্ষ্যভেদ! গাঢ় চক্রান্তের বড় নেটওয়র্ক, সরব তসলিমাও…
 

 

(দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির টাটকা খবর, আপডেট এবং ভিডিয়ো পেতে ডাউনলোড-লাইক-ফলো-সাবস্ক্রাইব করুন আমাদের AppFacebookWhatsapp ChannelX (Twitter)YoutubeInstagram পেজ-চ্যানেল)

 

 

 

 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version