এই সময়: কোভিড চিকিৎসা পরিকাঠামো মোটের উপরে তৈরিই আছে বাংলায়। কিন্তু করোনায় যাতে মানুষ আক্রান্তই না হন, বা হলেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তির মতো অবস্থা না হয়, সেই লক্ষ্যে বুস্টারকেই হাতিয়ার করতে চাইছে রাজ্য। অথচ ভ্যাকসিনের ভাঁড়ার বাড়ন্ত। তাই টিকা চেয়ে কেন্দ্রকে চিঠি পাঠাচ্ছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। বুধবার কোভিড মোকাবিলার প্রস্তুতি বৈঠক ছিল নবান্নে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্যকর্তাদের পাশাপাশি সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও জেলাশাসকরা। বৈঠকে স্থির হয়, রাজ্যজুড়ে আপাতত ৩৮১৭টি কোভিড বেড প্রস্তুত রাখা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে টিকার বুস্টার ডোজ়ই সবচেয়ে বড় ভরসা বলে মনে করছেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্তারা। যাতে বিদেশ থেকে দেশে ঢুকে পড়া করোনার অতিসংক্রামক প্রজাতির হামলায় করোনা এখানে মাথাচাড়া দেওয়ার আগেই সংক্রমণ ঠেকানোর পর্যপ্ত রক্ষণ মজবুত করে ফেলা যায়। বৈঠকের পর রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগী বলেন, ‘মাত্র ২৬% রাজ্যবাসী বুস্টার নিয়েছেন। এখন তাই বুস্টার ডোজ় দরকার। অথচ টিকা প্রায় ফুরিয়ে এসেছে। তাই নতুন করে পর্যাপ্ত টিকা চেয়ে চিঠি লেখা হচ্ছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকে।’

Corona Booster Dose : প্রয়োজন বুস্টার ডোজ়, অথচ বঙ্গে বাড়ন্ত করোনা ভ্যাকসিন
স্বাস্থ্যভবন সূত্রে খবর, বর্তমানে কোভিশিল্ড নেই বললেই চলে রাজ্যে। প্রায় ৪৬ হাজার ডোজ় কোভ্যাক্সিন আছে বটে। কিন্তু তার মধ্যে ২১,৬৩০টি ডোজ়ের মেয়াদ শেষ হবে ডিসেম্বরেই। ২৩,৬৮০টি ডোজ়ের মেয়াদ শেষ হবে জানুয়ারিতে। বাদবাকি ৬৬০টি ডোজ়ের মেয়াদ ফুরোচ্ছে মার্চে। তাই সদ্য তৈরি হওয়া চাহিদার নিরিখে আপাতত কমপক্ষে এক লক্ষ ডোজ় কোভ্যাক্সিন ও ১০ লক্ষ ডোজ় কোভিশিল্ড চাওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার আগেই জানিয়েছে, নেজ়াল ভ্যাকসিন ইনকোভ্যাক বণ্টনের কাজ জানুয়ারির শেষের দিকে শুরু হলে তা প্রথমে হবে মূলত বেসরকারি পরিষেবার মাধ্যমে। রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর তাই কেন্দ্রকে লেখা চিঠিতে উল্লেখ করছে, সরকারি পরিষেবার মাধ্যমে পরে যখন ইনকোভ্যাক দেওয়া হবে হবে, তার আগে যেন রাজ্যকে অন্তত ৫ লক্ষ ডোজ় নেজ়াল ভ্যাকসিনও দেওয়া হয়।

Covid Booster : বুস্টারে ফিরছে আগ্রহ, ফের টিকা কেন্দ্র বাড়ছে রাজ্যে
সূত্রের খবর, নবান্নের বৈঠকে মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী স্বাস্থ্য ও সাধারণ প্রশাসনের আমলা-আধিকারিকদের বলেছেন, এখন পরিস্থিতি ভালো আছে বলে কেউ যেন আত্মতুষ্টিতে না ভোগেন। তা হলে আসল সমস্যার সময়ে মুখ থুবড়ে পড়তে হবে। জেলা প্রশাসনকে বিশেষ নির্দেশে বলা হয়েছে, স্থানীয় স্তরে করোনায় আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থদের যেন স্থানীয় কোভিড হাসপাতালেই ভর্তি করা হয়। জেলার হাসপাতালগুলির পরিকাঠামো ফের এক বার দেখে নিতে বলেছেন মুখ্যসচিব। বৈঠকে ঠিক হয়েছে, সব হাসপাতালে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর রাখতে হবে। যাতে রোগীদের সামান্য অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়লে অযথা তার চাপ পিএসএ প্লান্ট কিংবা লিকুইড মেডিক্যাল অক্সিজেনের উপরে না পড়ে। দেখা হবে, ওমিক্রনের বর্তমান প্রকৃতি অনুযায়ী করোনা চিকিৎসার প্রোটোকলে কোনও বদল আনার দরকার পড়ছে কিনা, তাও।

Covid Hospital : আপাতত প্রতিটি জেলার ২টি হাসপাতালে করোনা ইউনিট
কোভিড টেস্ট বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বৈঠকে। করোনার উপসর্গ নিয়ে আসা সব রোগীর প্রেসক্রিপশনে যাতে সরকারি চিকিৎসকরা করোনা পরীক্ষার পরামর্শ দেন, সেই বিষয়টি নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং মেডিক্যাল কলেজগুলির অধ্যক্ষদের। তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেন আরটি-পিসিআর এবং র‍্যাপিড অ্যান্টিজেন-সব ধরনের টেস্ট কিট প্রস্তুত রাখা হয়। টিকা নিতে অনীহা থাকায় এক সময়ে বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে টিকা দেওয়া বন্ধ হয়েছিল। তা ফের চালু করতে বলা হয়েছে। আশা, অচিরেই কেন্দ্র টিকা পাঠাবে। টিকা চলে এলে যাতে তা সবক’টি টিকাকেন্দ্র থেকেই দেওয়া যায় আগের মতো, সেই ব্যবস্থাও তৈরি রাখতে বলা হয়েছে মুখ্যসচিবের তরফে। সূত্রের দাবি, তিন দিনের মক-ড্রিল শেষে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্টও চেয়েছেন মুখ্যসচিব। নির্দেশ দিয়েছেন বিমানবন্দরে নজরদারি বাড়ানোরও।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version