তাপস প্রামাণিক
রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ঢেলে সাজাতে নতুন ডাক্তার, নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে হবে। কিন্তু সেই নিয়োগ করতে গিয়ে সরকার যাতে অনিয়মের জালে জড়িয়ে না-পড়ে, তার জন্য কড়া পদক্ষেপ করল নবান্ন (Nabanna)। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে অস্থায়ী কর্মী নিয়োগের জন্য জেলাস্তরে যে ‘সিলেকশন কমিটি’ রয়েছে, সেখানে এতদিন মাতব্বরি করতেন শাসকদলের নেতা-মন্ত্রীরা। এ বার তাঁদের হটিয়ে জেলাশাসক-সহ প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকদের দায়িত্বভার দেওয়া হলো। নবান্ন সূত্রের খবর, পঞ্চায়েত ভোটের আগে রাজ্যজুড়ে চুক্তির ভিত্তিতে ডাক্তার, নার্স, ডেটা এন্ট্রি ম্যানেজার এবং ল্যাব টেকনিশিয়ান-সহ বিভিন্ন পদে মোট ৭,৯৫৩ জন স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ করতে চলেছে সরকার। এ ছাড়াও বেসরকারি এজেন্সি মারফত প্রায় তিন হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নেওয়া হবে। রাজ্যের বিভিন্ন ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, শহরের প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, আর্বান হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার এবং সরকারি পলিক্লিনিকে তাঁদের নিয়োগ করা হবে।

Covid Booster : বুস্টারে বাজি রাখছে রাজ্য, তৈরি চিকিৎসা পরিকাঠামো
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী বাছাইয়ের জন্য প্রতিটি জেলায় ‘ডিস্ট্রিক্ট লেভেল সিলেকশন কমিটি’ রয়েছে। এত দিন পর্যন্ত সেই কমিটির হর্তাকর্তা ছিলেন নেতা-মন্ত্রীরা। যেমন হাওড়া জেলায় ডিস্ট্রিক্ট লেভেল সিলেকশন কমিটির চেয়ারপার্সন ছিলেন রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য পুলক রায়। উত্তর ২৪ পরগনার দায়িত্বে ছিলেন রাজ্যের আর এক মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। একই ভাবে পশ্চিম বর্ধমানে মলয় ঘটক, পূর্ব বর্ধমানে স্বপন দেবনাথ, পূর্ব মেদিনীপুরে অখিল গিরি, মুর্শিদাবাদে জাকির হোসেন, বীরভূমে চন্দ্রনাথ সিনহা, হুগলিতে দিলীপ যাদব, বাঁকুড়ায় শুভাশিস বটব্যাল, বিষ্ণুপুরে শ্যামল সাঁতরা, ঝাড়গ্রামে চূড়ামণি মাহাত, মালদহে মোয়াজ্জেম হোসেন, দার্জিলিংয়ে শান্তা ছেত্রী, দক্ষিণ ২৪ পরগনায় শুভাশিস চক্রবর্তী, উত্তর দিনাজপুরে কানাইলাল আগরওয়ালের মতো তৃণমূলের প্রথম সারির নেতারা কমিটির মাথায় বসেছিলেন। তাঁরা মূলত জেলাশাসকের প্রতিনিধি হিসেবে কমিটিতে ঢোকার সুযোগ পেতেন। কমিটিতে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, প্রোগ্রাম অফিসার এবং এমএসভিপিরা থাকলেও রাজনৈতিক নেতারাই বকলমে ছড়ি ঘোরাতেন।

Didir Suraksha Kawach : পিকের টিমের ছাঁচে ‘দিদির দূত’, ফল দেবে তো? গুঞ্জন তৃণমূলে
কিন্তু অস্থায়ী ডাক্তার, নার্স নিয়োগে যোগ্যতার থেকেও রাজনৈতিক আনুগত্যকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে, এমন অভিযোগ ওঠে। তা ঠেকাতেই ডিস্ট্রিক্ট লেভেল সিলেকশন কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। সেইমতো গত ৩০ ডিসেম্বর নতুন করে বিজ্ঞপ্তি বের করেছে রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর। তাতে বলা হয়েছে, ডিস্ট্রিক্ট লেভেল সিলেকশন কমিটির অন্যতম সদস্য হবেন সংশ্লিষ্ট জেলাশাসক। আগের মতো তিনি নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী কোনও প্রতিনিধিকে সিলেকশন কমিটিতে মনোনীত করতে পারবেন না। তাঁর সঙ্গে সদস্য হিসেবে থাকবেন সিএমএইচও, অতিরিক্ত জেলাশাসক (স্বাস্থ্য), প্রোগ্রাম অফিসার, মেডিক্যাল কলেজের এমএসভিপি এবং কোনও একজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ।

Abhishek Banerjee : থাকবেন অভিষেক, আজ নয়া তৃণমূল ভবনের ভিতপুজো
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ ঘিরে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ সামনে আসায় এবং একাধিক নেতা-মন্ত্রী গ্রেপ্তার হওয়ায় রাজ্য সরকারকে এখন প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। তার আর পুনরাবৃত্তি চাইছে না রাজ্য সরকার। অস্থায়ী স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগে কোনও অনিয়ম হলে পঞ্চায়েত ভোটে তার বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। যেহেতু মুখ্যমন্ত্রীর হাতে স্বাস্থ্য দপ্তর রয়েছে, তাই কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ নবান্ন। মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনেই সিলেকশন কমিটি থেকে নেতা-মন্ত্রীদের বাদ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ কম হবে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version