পিনাকী চক্রবর্তী, আলিপুরদুয়ার:
চাঁদাও এবার স্মার্ট। কৌটো ঝাঁকিয়ে বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে রসিদ কেটে নয়, এক্কেবারে ক্যাশলেস চাঁদা! আর বলা যাবে না, ঘরে ক্যাশ নেই কিংবা মানিব্যাগ বাড়িতে ফেলে এসেছি। বললে, সঙ্গে সঙ্গে ইউপিআই বার কোড দেখিয়ে দেবে ওরা। একদল স্মার্ট খুদে মগজ খাটিয়ে সরস্বতী পুজোর চাঁদা আদায়ের এমনই উপায় বের করেছে। এ বার হাজারটা অজুহাত দিলেও আর নিস্তার নেই চাঁদা দিতে নারাজ খিটকেল কাকুদের। এই খুদেদের সাকিন রাজ্যের প্রান্তিক জেলা আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম ব্লকের বারোবিশা এলাকার কৃষ্ণনগর। নোটবন্দির পর বেড়েছে ডিজিটাল লেনদেন। আর করোনা কালে কমবেশি প্রত্যেকেই ইউপিআই ব্যবহারে সড়গড় হয়ে উঠেছেন। শহর কলকাতার গন্ডি ছাড়িয়ে আশেপাশের জেলাগুলিতেও চা, সিগারেট কিংবা ফুচকার দোকানেও এখন কিউ আর কোডের মাধ্যমে টাকা মেটানো যায়। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চাঁদা আদায়েও এসেছে অদ্ভুত বিবর্তন। ইউপিআই বার কোড ব্যবহার করে চলছে ক্যাশলেস চাঁদা আদায়। সামনেই সরস্বতী পুজো। মূল উদ্যোক্তা কচিকাঁচারাই। পুজো সারতে হলে চাই চাঁদা। রাস্তাঘাটে, গলির মুখে পথ আটকে চাঁদার আবদার করতে দেখা যাচ্ছে খুদে পড়ুয়ার দলকে। কিন্তু বড় বাজেটের দুর্গাপুজো-কালীপুজো-জগদ্ধাত্রী পুজোর জৌলুস আর কই শ্বেতবসনা দেবীর পুজোয়? তার মধ্যে উদ্যোক্তারা যুগপৎ বয়স এবং উচ্চতায় বড়দের কাছে পাত্তাই বা পায় কই? বড়দের অনেকেই নানা অছিলায় এড়িয়ে যেতে চায় তাদের চাঁদার দাবিকে।

Saraswati Puja 2023: কবে সরস্বতী পুজো? কোন মন্ত্রে খুশি হবেন বাগদেবী? সব তথ্য জানুন এখানে
এ সবে অবশ্য অভ্যস্ত ওরা। আর তাই এ বার ওরা বের করেছে টোটকা। এক্কেবারে ইউপিআই বার কোড নিয়ে হাজির হয়েছে আসরে। এলাকার ব্যস্ত গলির মুখে আড়াআড়ি বাঁশ লাগিয়ে সাময়িক ভাবে দেওয়াল তুলেছে কচিকাঁচারা। পাশেই একটি আস্ত আর্ট পেপারে ইউপিআই বার কোড ছাপিয়ে ঝোলানো হয়েছে। ওই রাস্তা ধরে চলা পথচারী অথবা বাইক আরোহী কেউই আর এড়িয়ে যেতে পারছেন না ওই খুদে পড়ুয়াদের। তবে চাঁদার জুলুম একদম নেই। মাত্র দশ টাকাতেই সন্তুষ্ট হচ্ছে ওরা। কেউ যদি খুশি মনে বেশি দিতে চান, তাতেও অবশ্য আপত্তি নেই। তবে পুরো চাঁদাটাই নেওয়া হচ্ছে ক্যাশলেস পথে। ছোটোদের ওই কেরামতি চালে তাজ্জব সকলেই। উদ্যোক্তাদের মধ্যে একজনের মায়ের অ্যাকাউন্টে ইউপিআই বার কোড মারফত জমা হচ্ছে ওই টাকা। যা বাগদেবীর আরাধনার আগে তুলে নিয়ে সারা হবে পুজোর উপাচার। যাঁর নামে অ্যাকাউন্ট, সেই গীতা সূত্রধর বলেন, ‘ওদের বুদ্ধির বহর আমাদেরকে তাজ্জব করে দিয়েছে। কচিকাঁচাদের চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের বড়দের একটা অনীহা বরাবর কাজ করে। চিরাচরিত এই রেওয়াজকে ভাঙতে ওরা যে ক্যাশলেস প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করবে, তা স্বপ্নেও ভাবিনি।’

Bargabhima Mandir : সপ্তসতী যজ্ঞ ও বাৎসরিক পুজো উপলক্ষে সেজে উঠল তমলুকের বর্গভীমা মন্দির
পথচলতি কাকু-কাকিমা, দাদা-দিদিদের দেখলেই পাকড়াও করছে ওরা। টুক করে পকেটে রাখা স্মার্ট ফোন বের করে ইউপিআই বার কোডে স্ক্যান করাতে বাধ্য করছে সবাইকে। খুদে পড়ুয়াদের এই অভিনব পন্থা ব্যবহারের উপায়কে বাহবা না দিয়ে পারছেন না কেউই। স্থানীয় বাসিন্দা দীপক দাস বলেন, ‘চাঁদা আদায়ের এই উপায়কে তারিফ করতেই হবে। পন্থাটির বিশ্বাসযোগ্যতাও আছে।’ চাঁদা আদায়কারী এক পড়ুয়া জয়দীপ সূত্রধর বলেন, ‘চাঁদা দেওয়ার সময় অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না। এখন যখন ক্যাশলেস কায়দায় সারা দেশ চলছে, তখন আমরাও ওই প্রযুক্তির ব্যবহারের মতলব আঁটি। অ্যাকাউন্টটি তো আমাদের নয়, বড়দের। ফলে কেউ আর অবিশ্বাস করে এড়িয়ে যাচ্ছেন না। যে যা দিচ্ছেন, আমরা তা খুশি মনে গ্রহণ করছি।’ তবে ডিজিটালি চাঁদা দেওয়ার আগে যদি কোনও ‘দুষ্টু’ বড়, ছেলেছোকরাদের নাস্তানাবুদ করতে চেয়ে সরস্বতী বানান জিজ্ঞেস করেন, সেক্ষেত্রে ওরা গুগল করবে কিনা, সে প্রশ্নের উত্তর আর জানা হলো না।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version