এই মুহূর্তে মিড-ডে মিলে (Mid Day Meal) প্রাথমিকে পড়ুয়া-পিছু মোট বরাদ্দ ৫ টাকা ৪৫ পয়সা। কেন্দ্র দেয় মাত্র ৩ টাকা ২৭ পয়সা। রাজ্যের প্রদেয় ২ টাকা ১৮ পয়সা। উচ্চপ্রাথমিকে মোট বরাদ্দ ৮ টাকা ১৭ পয়সা। কেন্দ্র দেয় মোটে ৪ টাকা ৯০ পয়সা, রাজ্য ৩ টাকা ২৭ পয়সা। বর্তমান বাজারে এই সামান্য টাকায় কোনও শিশুকে পুষ্টির জোগান দেওয়া আদৌ সম্ভব কিনা, তা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। মিড-ডে মিলে (Mid Day Meal) বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি ইতিমধ্যেই জানিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। স্কুলের শিক্ষক, পড়ুয়াদের অভিভাবকরাও এই দাবিতে সোচ্চার।
তৃণমূলের বর্ষীয়ান বিধায়ক তাপস রায় শনিবার বলেন, “মিড-ডে মিলের (Mid Day Meal) বরাদ্দ না বাড়িয়ে কেন্দ্র যে ভাবে বিরোধী দলনেতার কথায় প্রতিনিধিদল পাঠাচ্ছে, তাতেই বোঝা যাচ্ছে, এর পিছনে সঙ্কীর্ণ রাজনীতি আছে। পশ্চিমবঙ্গে দল পাঠানোর আগে যেখানে বিজেপি (BJP) ক্ষমতায় আছে–সেখানে আগে ওঁদের পাঠানো হোক। তা হলেই বিজেপির মুখোশ খুলে যাবে।”
বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, যে ভাবে বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তাতে সামান্য সরকারি বরাদ্দে মিড-ডে মিল (Mid Day Meal) খাওয়ানো কঠিন হয়ে পড়েছে। খাবারের গুণমান ঠিক রাখাও অসম্ভব। মিড-ডে মিলের (Mid Day Meal) চাল সরকার দেয় ঠিকই, কিন্তু ৫ টাকা ৪৫ বরাদ্দে সব্জি, তেল-মশলাপাতি এবং জ্বালানি হয় না। মিড-ডে মিল (Mid Day Meal) প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষা দপ্তরের এক আধিকারিকের হিসেব, কোনও প্রাথমিক স্কুলে ১০০ জন পড়ুয়া থাকলে রোজ মিড-ডে মিল খাওয়াতে কম করে ৮০০ গ্রাম ডাল লাগে। যার দাম ১০৪ টাকা। সব্জি লাগে চার কিলো। খরচ ১২০-১৩০ টাকা। আলু লাগে ৫-৬ কেজি। দাম ১২০ টাকা। তেল-মশলা, আদা-রসুনে খরচ প্রায় ১০০ টাকা। গ্যাস খরচ হয় ১৫০-১৬০ টাকার। সরকার থেকে রন্ধনকর্মীর খরচ (মাসে মাত্র ১৫০০ টাকা) দেওয়ার পরেও প্রতিদিন খরচ হয় প্রায় ৬০০ টাকা। সেখানে মোট বরাদ্দ মোটে ৫৪৫ টাকা!
শিক্ষানুরাগী ঐক্য মঞ্চের সম্পাদক কিঙ্কর অধিকারী বলেন, “সরকারি বরাদ্দে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া যায় না। সর্বাগ্রে জরুরি বরাদ্দ বাড়ানো।” বিজেপি (BJP) মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “আমরাও চাই বরাদ্দ বাড়ুক। কিন্তু বরাদ্দ বাড়েনি বলে মিড-ডে মিলে (Mid Day Meal) টিকটিকি, আরশোলা খাইয়ে দেবে, এটা হতে পারে না। এ রাজ্যে মিড-ডে মিলে প্রচুর দুর্নীতি হয়েছে। সেটা বন্ধ করা উচিত।”
এই চাপানউতোরের বাইরে মিড-ডে মিল (Mid Day Meal) অষ্টম শ্রেণিতে আটকে না-রেখে দ্বাদশ অবধি সম্প্রসারণের দাবিও রয়েছে সামাজিক পরিসরে। দিল্লি, কর্নাটকে কিছু মাত্রায় সে উদ্যোগ হয়েছে। খাদ্যের অধিকারের সর্বজনীনতা মনে করিয়ে এ নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠিও দিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর। সে জন্যেও বরাদ্দবৃদ্ধি প্রয়োজন। আবার রন্ধনকর্মীদের পারিশ্রমিক বৃদ্ধি, সামাজিক সুরক্ষার দাবি তুলেছে রন্ধনকর্মীদের সংগঠন ‘আম্মা’ও।
মাথাপিছু বরাদ্দ : চাল: ৫০ গ্রাম, ডাল: ৮ গ্রাম, আলু-সব্জি: ১০০ গ্রাম, ১০০ জন পড়ুয়ার জন্যে খরচ, ডাল, আলু-সব্জি, মশলাপাতি: ১০৪+১৩০+১২০+১০০ টাকা, গ্যাস: ১৫০-১৬০ টাকা, দৈনিক খরচ: ৫৯৪ টাকা, দৈনিক বরাদ্দ: ৫৪৫ টাকা।