প্রবীর চক্রবর্তী: রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যেখানেই যাচ্ছেন সেখানেই তিনি বারবার বলছেন, সবার উপরে লক্ষ্য রাখা হচ্ছে। সতর্ক থাকুন। দুর্নীতি করে দলের টিকিট পাওয়া যাবে না। শনিবার কেশপুরেও সেই কথা তুলে দলের কর্মী সমর্থকদের সতর্ক করে দিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তবে সভায় তার থেকেও বড় চমক দেন অভিষেক। তিনি বুঝিয়ে দেন কারা হবেন পঞ্চায়েতের মুখ।

আরও পড়ুন-বিরাট আউট হলেই ভারত শেষ! রোহিতদের কটাক্ষ করে ‘গুরু গ্রেগ’-এর মাইন্ড গেম শুরু  

সভা থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, শুনলাম কেন্দ্রীয় দল কেশপুরে এসেছে। তখন আমি খোঁজ নিয়ে দেখলাম, কেশপুরে কী হয়েছে। এখানে একজন আছেন যাঁর নাম সেখ হসিরুদ্দিন। তাঁকে ডেকে নিয়ে অভিষেক বলেন, এই লোকটিকে দেখে কী মনে হয়? ইনি দুর্নীতিগ্রস্থ! যারা বলছে বাড়ি পেতে গেলে তৃণমূলের প্রধানকে টাকা দিতে হয় তাদের জন্য বলছি। এই ভদ্রলোক, তাঁর নামে বাড়ি এসেছিল। তিনি সক্রিয়ভাবে কোনও রাজনীতি করেন না। তিনি প্রধানকে গিয়ে বলেছেন আমার টাকার দরকার নেই। তার কারণ আমার ছেলে রয়েছে, মেয়ে রয়েছে। অনেক কষ্টে মেয়েকে পড়াশোনা করিয়েছি। সরকার ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা দেবে বাড়ি বানাতে। সেখানে যদি ২ কামরার একটি ছোট্ট বাড়ি বানাই তাহলেও বাড়তি ৩ লাখ টাকা খরচ হবে। তাই বাড়ি বানাতে টাকা খরচ করলে মেয়ের বিয়ে দিতে পারব না। এই হচ্ছে বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি। ভারতীয় জনতা পার্টি এমনভাবে বাংলার মানুষকে দেখায় যেন বাংলার মানুষের থেকে দুর্নীতিগ্রস্থ আর কেউ নেই। হসিরুদ্দিনের বাড়ির ছবি তুলে ধরে অভিষেক বলেন, হসিরুদ্দিনবাবুকে কেন স্টেজে ডাকলাম জানেন? কারণ এই হসিরুদ্দিন বাবুর মতো মানুষই আগামী দিনে তৃণমূল পঞ্চায়েতের মুখ হতে চলেছে। এই লোকদেরই আমরা স্বীকৃতি দেব। করে কম্মে খাওয়ার মতো লোকদের দিন শেষ। এ জিনিস গোটা বাংলার জন্য প্রযোজ্য। তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের মুখ হতে চলেছেন এই হসিরুদ্দিনের মতো মানুষজন। এরা আমাদের গর্ব। হসিরুদ্দিনবাবু আপনি নিশ্চিন্তে থাকবেন। আপনার মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব আমার। 

কেশপুরের সভায় আরও একজনকে ডেকে আনেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। নাম মঞ্জু দলবেরা। কেশপুর গোলান গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা। তাঁর স্বামী তৃণমূল বুথ সভাপতি অভিজিত্ দলবেরা। অভিষেক বলেন, এদের একজন গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্যা। তাঁর স্বামী বুথ সভাপতি। যারা দেখায় তৃণমূলের বুথ সভাপতি, পঞ্চায়েত সদস্য ফুলে ফেঁপে উঠছে তাদের বলব, এদের দেখে কী মনে হয় আপনাদের? অভিজিত্ দলবেরার মায়ের নামে আবাস যোজনায় ঘর বরাদ্দ হয়েছিল। মঞ্জুদেবী পঞ্চায়েত অফিসে গিয়ে বলেছিলেন, আমার স্বামী বুথ সভাপতি। আমি পঞ্চায়েত সদস্যা। আমি ঘর নেব না। মঞ্জুদেবীর ভাঙাচোরা ঘরের ছবি দেখিয়ে অভিষেক বলেন, একটু বৃষ্টি হলে চাল থেকে জল পড়ে এদের বাড়িতে। এই পরিবারের এতটাই শোচনীয় অবস্থায়।  মঞ্জু দেবী জানিয়েছেন, আবাস য়োজনার টাকার সঙ্গে নিজের টাকা খরচ করে বাড়ি বানাতে হবে। তা করলে আর ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারব না। এরাই হলেন তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়তের মুখ। এদের জন্য গর্ব বোধ করি। যারা আজ মিটিংয়ে এসেছেন তারা শপথ নিন আগামিদিনে তৃণমূল এভাবেই চলবে। অভিজিতবাবু ও মঞ্জু দেবীকে বলছি, দল আপনার বাড়ি তৈরি করে দেবে। কারও কাছে হাত পাততে হবে না। আর আপনাদের মেয়ের বিয়ের দায়িত্ব আমার।

এদিন সভা থেকে বিরোধীদের হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আগে যারা বামেদের ঝান্ডা ধরেছিল তারাই এখন বিজেপি-র ঝান্ডা ধরেছে। নির্বাচনের আগে বিজেপি করে নির্বাচনের পরে তৃণমূলে এলে কেউ জানতে পারবে না এই ধারণা রাখা থেকে বিরত থাকার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। সভা থেকে হুঁশিয়ারি দিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন তৃণমূলকে ভুল বুঝিয়ে নির্বাচনের সময় একরকম আবার নির্বাচনের পরে তৃণমূলের জামা পরে দলের চোখে ধুলো দেওয়া যাবে না। সভা থেকেই তিনি জানিয়েছেন, ‘সতর্ক থাকুন, নজর রাখছে অদৃশ্য চোখ’। দলের স্থানীয় নেতৃত্বকে তিনি জানিয়েছেন তৃণমূল নেতারা মাথা নত করলে সেটা সাধারণ মানুষের সামনে করবে। দলের নেতাদের মধ্যে রেষারেষি সহ্য করবেন না বলেও কড়া বার্তা দিয়েছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক।

(Zee 24 Ghanta App দেশ, দুনিয়া, রাজ্য, কলকাতা, বিনোদন, খেলা, লাইফস্টাইল স্বাস্থ্য, প্রযুক্তির লেটেস্ট খবর পড়তে ডাউনলোড করুন Zee 24 Ghanta App) 





Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version