সব্যসাচী বাগচী
ফাইনালের টিকিট ম্যাচের তৃতীয় দিনেই নিশ্চিত করে নিয়েছিল। শেষ দিন দাপুটে বোলিং করে মধ্যপ্রদেশকে (Madhya Pradesh) দ্বিতীয় ইনিংসে অল আউট করে দিল বাংলা (Bengal)। আর রানে জয়ের সুবাদেই সরকারিভাবে চলতি রঞ্জি ট্রফির মেগা ফাইনালে (Ranji Trophy Final 2023) চলে গেল মনোজ তিওয়ারির (Manoj Tiwary) বঙ্গব্রিগেড। আগে ব্যাট হাতে ডাকাবুকো মেজাজে ৬০ রান করেছিলেন প্রদীপ্ত প্রামাণিক (Pradipta Pramanik)। এবার শেষ দিন বল হাতেই বিপক্ষের ব্যাটারদের বুঝে নিলেন এই বাঁহাতি স্পিনার। তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিলেন মুকেশ কুমার (Mukesh Kumar), শাহবাজ আহমেদ (Shahbaz Ahmed) ও আকাশ দীপ (Akash Deep)। ফলে ৩০৬ রানে সরাসরি জয় পেল বাংলা।
দিনের শুরুতে মাত্র ৪ বল খেলেই ঈশান পোড়েল (Ishan Porel) আউট হয়ে যান। মধ্যপ্রদেশের সামনে ৫৪৮ রানের লক্ষ্য রাখে বাংলা। যা এক দিনে চেজ করা ছিল প্রায় অসম্ভব। দ্বিতীয় ইনিংসে রজত পতিদার (Rajat Patidar), ভেঙ্কটেশ আইয়ার (Venkatesh Iyer) দ্রুত গতিতে রান তুললেও, লাভ হয়নি। কারণ নিয়মিত ব্যবধানে উইকেট হারাতে থাকে চন্দ্রকান্ত পণ্ডিতের (Chandrakant Pandit) দল। এবার প্রদীপ্ত নিলেন ৫১ রানে ৫ উইকেট। মধ্যপ্রদেশের দ্বিতীয় ইনিংস ২৪১ রানেই শেষ হয়ে যায়। চা পানের বিরতির আগেই গতবারের চ্যাম্পিয়নদের বিরুদ্ধে বদলার ম্যাচ জিতে নিল লক্ষ্মীরতন শুক্লার (Laxmi Ratan Shukla) বঙ্গব্রিগেড।
অনুষ্টুপ মজুমদার (Anustup Majumdar) প্রথম ইনিংসে ২০৬ বলে ১২০ রান করেছিলেন। মেরেছিলেন ১৩টি চার ও ১টি ছক্কা। স্ট্রাইক রেট ছিল ৫৮.২৫। সেখানে দ্বিতীয় ইনিংসে তাঁর স্ট্রাইক রেট কমে দাঁড়িয়েছিল ৩৬.৫৩। ২১৯ বলে ৮০ রানে থামলেন হতভাগ্য অনুষ্টুপ। এবার মারলেন মাত্র সাতটি চার। যদিও ম্যাচের সেরা হলেন আকশ দীপ। প্রথম ইনিংসে ৪২ রানে ৫ উইকেট নেওয়ার পর এবার নিলেন ১৮ রানে ১। শুধু সেমি ফাইনাল নয়। হরিয়ানার বিরুদ্ধে শেষ অ্যাওয়ে ম্যাচে ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ হওয়ার পর ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে কোয়ার্টার ফাইনাল ও এবার মধ্যপ্রদেশের প্রথম ইনিংস মাত্র ১৭০ রানে শেষ করে দেওয়ার সুবাদে চলতি মরসুমে মোট তিনবার ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’ হলেন এই ডানহাতি পেসার।
এর আগে প্রথম ইনিংসে অনুষ্টুপ ও সুদীপের জোড়া শতরানের সৌজন্যে বাংলা ৪৩৮ রান তোলে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৭০ রানে গুটিয়ে যায় মধ্যপ্রদেশের প্রথম ইনিংস। সৌজন্যে সেই আকাশ দীপ। এবারও বঙ্গ পেস বোলিংয়ের ব্যাটন সামলালেন এই ডানহাতি পেসার। নিয়েছিলেন ৪২ রানে ৫ উইকেট। সেই সুবাদে ২৬৮ রানের মহামূল্যবান লিড পেয়েছিল। সেই লিড এবার বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ৫৪৭ রানের। কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে অনুষ্টুপ ও প্রদীপ্তর লড়াইয়ের সুবাদে দ্বিতীয় ইনিংসে ২৭৯ রান তুলেছিল বাংলা। ফলে বিপক্ষকে চাপে রেখে আগেই মেগা ফাইনাল খেলার দিকে অনেকটা এগিয়ে গিয়েছিল মনোজ তিওয়ারির দল। আর সেটাই হল। বঙ্গ বোলারদের দাপট ও মনোজের বিচক্ষণ অধিনায়কত্বে সুবাদে ফের একবার রঞ্জির ফাইনালের টিকিট পেল বাংলা।
বঙ্গ বোলারদের দাপটের পর ফের ব্যাট হাতে অনুষ্টুপ ও প্রদীপ্তর লড়াকু ইনিংস। সেটা দেখে মনে হচ্ছিল, ‘এটা একেবারে অন্য বাংলা। যারা ঘরে ঢুকে মারতে জানে।’ নিজের দলের পতন ড্রেসিংরুমে বসে দেখতে বাধ্য হন গতবারের রঞ্জি ট্রফি জয়ী কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত। ক্ষোভে তাঁর চোখ-মুখ লাল হয়ে যাচ্ছিল। এই ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে থেকেই ফাইনালের বিপক্ষের বিরুদ্ধে বদলা নেওয়ার ছক কষতে শুরু করে দিয়েছেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা-মনোজ তিওয়ারি।