কিন্তু বঞ্চনার নিরসন চাই।’ আবার বিজেপির কার্শিয়াংয়ের বিধায়ক বিষ্ণুপ্রসাদ শর্মা বলেন, ‘সরকারের সৎ সাহস থাকলে পাহাড়ের মানুষের মন বুঝতে এই ইস্যুতে নির্বাচন কমিশন বা কেন্দ্রের তত্ত্বাবধানে গণভোট করাক।’ দীপক বর্মন, নীরজ তামাং জিম্বা, শঙ্কর ঘোষের মতো বিজেপি বিধায়করা রাজ্যভাগের কথা না বললেও উত্তরবঙ্গের বঞ্চনার প্রসঙ্গ তুলে ধরেন।
তবে বিষ্ণুপ্রসাদ এ দিন দাবি করেন, গণভোট হলে তার রায়ই পরিষ্কার করে দেবে পাহাড়ে মানুষ আদতে কী চান। ‘বঙ্গভঙ্গ বিরোধী প্রস্তাব’ সংক্রান্ত বিতর্কে বিষ্ণুপ্রসাদ বলেন, ‘অনীত থাপা গোর্খাল্যান্ডের নাম করেই ভোটে জিতেছেন। গোর্খাল্যান্ডের নাম করে যারা রাজনীতি করে, সেই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসের জোট ছিল।
গোর্খাল্যান্ডের দাবিদার কিছু নেতার সঙ্গেও আপনাদের সু-সম্পর্ক ছিল।’ তৃণমূলের সত্যজিৎ বর্মন উত্থাপিত বঙ্গভঙ্গ প্রস্তাবে বলা হয়, কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি বঙ্গভঙ্গের চেষ্টা করছে। এ ধরনের অপচেষ্টার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গকে অটুট রাখতে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন রাখা হচ্ছে।
পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘চিরকালই পশ্চিমবঙ্গকে দুর্বল করতে নানা প্রচেষ্টা চলেছে। স্বাধীনতার আগে থেকেই বাংলা-বিহার-ওডিশাকে নিয়ে তৈরি অখণ্ড বাংলা ভাগের চক্রান্ত হয়েছে। স্বাধীনতার সময়ে দেশ ভাগের ক্ষেত্রে বাংলা ভাগকে সামনে রাখা হয়েছিল।
এখন গ্রেটার কোচবিহারের মতো কোনও কোনও শক্তিকে উস্কানি দিয়ে বঙ্গভঙ্গের চক্রান্ত চলছে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে।’ উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‘রাজ্য ভাগের নামে বিজেপি দ্বিচারিতা করছে।’ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘কে রাজ্য ভাগ চেয়েছে? কোথাও কোনও আন্দোলন হচ্ছে? আসলে এই প্রস্তাব আনা হয়েছে মানুষের দৃষ্টি ঘোরাতে।
নিয়োগ দুর্নীতি-সহ একাধিক ঘটনায় রাজ্য সরকারের মুখ পুড়ছে। তাই এই প্রস্তাব এনে নজর ঘোরানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে।’ শুভেন্দুর মতে, কোনও দায়িত্বশীল দলই রাজ্য ভাগ চায় না। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘রাজ্যের তিন পশ্চাদপদ অঞ্চল উত্তরবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চল ও সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদ সরকারের বঞ্চনার শিকার।
রাজ্য বাজেটে বরাদ্দ হলেও শেষ পর্যন্ত কত টাকা তারা হাতে পায়?’ রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘ঐতিহাসিক ভাবে সত্য, সিপিএমএর রতনলাল ব্রাহ্মণ পাহাড়ে গোর্খাদের মধ্যে আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের বীজ প্রথম বপন করেছিলেন। যা আজ পৃথক রাজ্যের দাবিতে পরিণত হয়েছে।’
শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, ‘বঞ্চনার কথা সত্যি হলেও গত দশ বছরে উন্নয়ন হয়নি, এ কথা বলা যাবে না।’ তাঁর মতে, বিজেপির কৌশল হলো, রাজ্যভাগের নামে ছোট ছোট রাজ্য গড়ে নিজেদের সাংসদের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা। তৃণমূল বিধায়ক তাপস রায় বলেন, ‘বিজেপি মানুষকে বিভ্রান্ত করার কৌশল নিয়েছে।
একদিকে কিছু নেতাকে দিয়ে বাংলা ভাগের জিগির তোলাচ্ছে। তাই প্রস্তাব থেকে সরে গিয়ে বিজেপি বঞ্চনার প্রসঙ্গ এনে রাজনৈতিক দ্বিচারিতার আশ্রয় নিয়েছে।’