এতকাল ধরে হুডখোলা জিপসিতে পর্যটকদের জঙ্গলের গভীরে নিয়ে যাওয়ার রেওয়াজ থাকলেও, শনিবারের মতো দুর্ঘটনার কোনও নজির নেই উত্তরবঙ্গের জঙ্গলগুলিতে। শনিবারের দুর্ঘটনার পর রবিবার জলদাপাড়া বনবিভাগের শীর্ষ বনাধিকারিকরা গাইড ও জিপসি চালকদের নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসেন।
তাতে ঠিক হয় যে, এখন থেকে জঙ্গলের ভেতরে ঢুকে কোনও পর্যটক জিপসি থেকে বিনা অনুমতিতে নীচে নামতে পারবেন না। খোলা যাবে না গাড়ির দরজা। হাতি, বাইসন অথবা গন্ডার দেখার সময় নিরাপদ দূরত্ব অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। অকারণে বন্যপ্রাণীদের উত্ত্যক্ত করা যাবে না।
এই বিশেষ নির্দেশিকাগুলি অগ্রাহ্য করলে শাস্তির মুখে পড়তে হবে পর্যটকদের। এছাড়াও বনপথের বাঁকে থাকা ঝোপঝাড় কেটে সাফ করা হবে। প্রতিটি জিপসি গাড়িতে ফার্স্ট এড বক্স রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। জিপসি চালক ও গাইডদের নিয়ে দ্রুত বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে।
বন দপ্তরের পর্যবেক্ষণ, অনেক সময়েই এক শ্রেণির পর্যটক বেপরোয়া হয়ে বন্যপ্রাণীদের সঙ্গে সেলফি তোলার চেষ্টা করেন, অকারণে বন্যপ্রাণীদের উত্ত্যক্ত করার চেষ্টা করেন। তাতেই নিরাপত্তার অভাব বোধ করে আক্রমণমুখী হয়ে পড়ে বন্যপ্রাণীরা।
শনিবারের ভিডিয়ো ফুটেজে লক্ষ করা গিয়েছে যে, গন্ডারটি যখন জিপসির দিকে তেড়ে আসছিল, তখনও ওই গাড়ির বাঁ দিকের দরজা খুলে ছবি তুলছিলেন এক বেপরোয়া পর্যটক। তবে বনকর্তারা যাই দাবি করুন বা পর্যটকরা যতই অদৃষ্টের দোহাই দিন না কেন, হুডখোলা জিপসিতে জঙ্গল ভ্রমণে যে ঝুঁকির শেষ নেই, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
শিলিগুড়ির বেঙ্গল সাফারিতে মোটা লোহার জালে মোড়ানো গাড়িতে অনেক বেশি নিরাপদ ভাবে পর্যটকদের ঘোরানোর ব্যবস্থা রয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, উত্তরবঙ্গের অন্যান্য জঙ্গল সাফারিতেও ওই একই ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে না কেন?
জলদাপাড়া বনবিভাগের ডিএফও দীপক এম বলেন, ‘এই দুর্ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমরা পর্যটকদের জন্য বেশ কিছু কড়া বিধি নিষেধের নির্দেশিকা জারি করেছি। তবে জিপসি সাফারির চিরাচরিত ব্যবস্থা তো একদিনেই বদলে ফেলা যাবে না। সব দিক খতিয়ে দেখে পরিবর্তনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।’
মুর্শিদাবাদ থেকে আসা পর্যটক শিপ্রা সাহা বলেন, ‘কপালে লেখা থাকলে যখন-তখন বিপদ ঘটতে পারে। ফলে আমি শনিবারের দুর্ঘটনা নিয়ে এতটুকু চিন্তিত নই। জঙ্গল ভ্রমণে ঝুঁকি তো থাকবেই। ওটাই প্রকৃত অ্যাডভেঞ্চার। তবে বনের আইন ভাঙা বড় অন্যায়।’
জলদাপাড়া জিপসি মালিক সংগঠনের সম্পাদক গোপাল সন্ন্যাসী বলেন, ‘বৈঠকে আমরা অতিরিক্ত নিরাপত্তা দাবি করেছি। তাতে আমরা এবং সেই সঙ্গে বেড়াতে আসা পর্যটকরা অনেক বেশি নিরাপদ থাকবেন। এখন তা কী ভাবে সুনিশ্চিত হবে, তার দায় বন দপ্তরের।’