Sagardighi By Election: ‘তৃণমূলের অনেকেই আমাদের ভোট দিয়েছেন’, মন্তব্য অধীরের
বাইরের ছবিটাও তখন ছিল দেখবার মতো। তৃণমূলের ক্যাম্পে তখন সকলেই বেশ আত্মবিশ্বাসী। কারও কারও পকেট থেকে উঁকি দিচ্ছে সবুজ আবীরের প্যাকেট। আর কংগ্রেসের ক্যাম্পে তখন টান টান উত্তেজনা। সময় এগোল ভিড় পাতলা হল তৃণমূল ক্যাম্পে। দুপুর আড়াইটে নাগাদ জানা গেল, প্রায় ২২ হাজারের বেশি ভোটে জয়ী কংগ্রেস।
তৃণমূল সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম সাগরদিঘি বিধানসভা আসন হাতছাড়া হল শাসকদল তৃণমূলের। কিন্তু কেন?
জেলাজুড়ে কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে, ‘সুব্রত ম্যাজিক’ গায়েব। আর তাতেই সাগরদিঘি উপনির্বাচনে ভরাডুবি হল শাসকদল তৃণমূলের। ২০১১ সালে সাগরদিঘি থেকে মুর্শিদাবাদ জেলার একমাত্র তৃণমূল বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন সুব্রত। টানা ৩ বার ওই কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন তিনি। এক সময় কংগ্রেসে থাকলেও পরে তিনি যোগ দিয়েছিলেন তৃণমূলে। এই প্রথমবার তিনি নেই। তাঁর মৃত্যুর কারণেই এই কেন্দ্রে উপনির্বাচন।দলের কেউ কেউ বলছেন, ‘সুব্রতবাবুর স্ত্রীকে টিকিট দিলে হয়ত এই পরিণতি হত না।’
অনেকেই বলেন, ‘রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত সাহা ম্যাজিক জানতেন। শেষ মুহূর্তে কী ভাবে জয় হাসিল করতে হয়, সেই ফর্মূলা তাঁর ভালোই জানা ছিল। সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রে বারবার তিনি জাদু দেখিয়েছেন। ২১ সালের ভোটেও ৫০ হাজারের বেশি ভোটে জয়লাভ করেছিলেন তিনি।’ জঙ্গিপুর সাংগাঠনিক জেলা তৃণমূলের এক নেতা মানছেন, ‘সুব্রতদা থাকলে হয়ত এই ফলাফল হত না। অবশ্যই তাঁর না থাকা একটা ফ্যাক্টর হয়েছে।’
দলের কেউ কেউ বলছেন, ‘দেবাশিসের হারার পিছনে দলীয় কোন্দল একটা ফ্যাক্টর হয়েছে। অন্তর্ঘাত হয়েছে। পাশাপাশি কংগ্রেস প্রার্থীর উপর বামেদের সমর্থনও একটা ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। বিজেপি গত বিধানসভায় এই কেন্দ্রে প্রায় ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। সেই ভোট এবার অনেকটাই গিয়েছে কংগ্রেস প্রার্থীর দিকে।’
এসবের পাশাপাশি আরও দুটি ফ্যাক্টর কাজ করেছে এই ভোটে। রাজনৈতিক মহলের ব্যাখা, এক, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি থেকে পাচার মামলার পর রাজ্যে প্রথম ভোট। এর একটা প্রভাব ভোটে পড়েছে। দুই, ২০২১ সালের ভোট NRC ফ্যাক্টর কাজ করেছিল। ‘NRC- ভীতি’ তৃণমূলের পালে হাওয়া দিয়েছিল। এবার কিন্তু সেই ফ্যাক্টর কাজ না করায় ভোট টানতে পারেনি তৃণমূল। সঙ্গে সাগরদিঘির এক শ্রেণির নেতা-কর্মীদের আঙুল ফুলে কলা গাছ হওয়া, ‘কাটমানির দাবি’ বড় ফ্যাক্টর হয়েছে।
এসব অভিযোগ মানতে নারাজ তৃণমূল। কংগ্রেসের প্রার্থী বাইরন বলছেন, ‘মানুষের ন্যূনতম চাহিদা পূরণ হয়নি। এখনও এখানে জলের সমস্যা আছে। কী করে তৃণমূল ভোট পাবে।’ আর তৃণমূল? অন্তর্ঘাত হয়েছে? প্রশ্নের উত্তরে জেলা সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘ সেটা আমরা পর্যলোচনা করে দেখব, এখনই কিছু বলার সময় আসেনি।’ তবে মুখ টিপে অনেকেই বলছেন, প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিল দল!
দেবাশিস সম্পর্কে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আত্মীয়। ফলে হারের কারণ নিয়ে যথেষ্টই পর্যালোচনার প্রয়োজন আছে বলেই মনে করছে তৃণমূল।