ধর্মঘটী সরকারি কর্মচারীরা ছাড়াও শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারীদের ৫৫টি সংগঠনের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ নবান্নের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে পাল্টা আইনি চিঠি দিয়েছে। বৃহস্পতিবার রাজ্যের অর্থসচিব মনোজ পন্থকে চিঠি দিয়ে মঞ্চের আইনজীবী প্রবীর চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, এই নির্দেশিকা বেআইনি। মঞ্চের পক্ষে অর্জুন সেনগুপ্তর বক্তব্য, কর্মচারীরা ধর্মঘট নয়, কর্মবিরতি পালন করছেন।
এ নিয়ে আদালতে মামলাও হয়েছে। তাই বিচারাধীন বিষয়ে রাজ্য সরকারের এমন নির্দেশিকা বেআইনি এবং আদালত অবমাননার সামিল। এহেন টানাপড়েনের মধ্যেই ধর্মঘট রুখতে কোথাও কোথাও শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয়তার খবরও এসেছে। একাধিক জেলায় স্থানীয়স্তরে তৃণমূল নেতাকর্মীরা সরকারি দপ্তর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ধর্মঘট না-করার কথা বলে এসেছেন বলে খবর।
অর্থ দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আজ স্কুল, কলেজ-সহ যাবতীয় সরকারি এবং সরকার পোষিত প্রতিষ্ঠান পূর্ণ সময় খোলা থাকবে। আজ কোন কোন ক্ষেত্রে একজন সরকারি কর্মী ছুটি নিতে পারেন, তা-ও নির্দিষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে – ১) কোনও কর্মচারী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি থাকলে, ২) পরিবারের কেউ মারা গেলে, ৩) গুরুতর অসুস্থতার কারণে ৯ মার্চের আগে থেকেই অনুপস্থিত থাকলে এবং ৪) সন্তানপালন, মাতৃত্বকালীন ছুটি বা ৯ মার্চের আগে মঞ্জুর হওয়া মেডিক্যাল বা আর্নড লিভ নিয়ে রাখলে এ দিন অনুপস্থিত থাকলেও শাস্তির হাত থেকে ছাড় মিলবে।
ডাক্তার, নার্সরা এই আন্দোলনকে সমর্থন জানালেও পরিষেবা বন্ধ করছেন না। তবে ‘সার্ভিস ডক্টর্স অ্যান্ড নার্সেস ইউনিটি’ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ইমার্জেন্সি গেটের সামনে দুপুর দুটোয় ধর্মঘটের সমর্থনে বিক্ষোভ দেখাবে। সরকারি জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত কর্মীরাও ধর্মঘটে অংশ নেবেন না। তবে কালো ব্যাজ পরে কাজ করবেন।
বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ধর্মঘটীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এ দিন শুভেন্দু বলেন, ‘ধর্মঘটীরা মানসিক, শারীরিক বা আইনি সমস্যায় পড়লে সবরকম ভাবে পাশে থাকব।’ রাজ্যের মন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেসের সরকারি কর্মচারী সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত নেতা মানস ভুঁইয়া বলেন, ‘রাজনৈতিক স্বার্থে এই ধর্মঘট। তৃণমূলপন্থী সরকারি কর্মচারীরা প্রত্যেকে কাজ করবেন। পাশে মুখ্যমন্ত্রী রয়েছেন। যাঁরা জেদাজেদি করে সরকার বিরোধিতায় নেমে সরকারকে জব্দ করতে চান, তাঁদের মানুষই দেখে নেবেন।’
ধর্মঘট মোকাবিলায় নেমেছে তৃণমূল কংগ্রেস ও তাদের সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষক-অশিক্ষক কর্মচারী সংগঠনগুলিও। কোচবিহারের দিনহাটা ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অফিসে ঢুকে ধর্মঘটে সামিল না হওয়ার কথা বলে এসেছেন দলের শহর কমিটির সভাপতি বিশু ধর। তাঁদের গলায় হুমকির সুর ছিল বলে অভিযোগ। হুলির ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি বিজয় রায় আগেই অঞ্চল সভাপতি, পঞ্চায়েত প্রধান, উপপ্রধান-সহ জনপ্রতিনিধিদের জানিয়ে দিয়েছেন, এলাকার স্কুল, কলেজ, সরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের হাজিরা নিশ্চিত করতে হবে।
আইসিএসই, সিবিএসই-র মতো বিভিন্ন পরীক্ষার মধ্যে এই ধর্মঘট না করার জন্য আর্জি জানিয়েছিল পুলিশও। এর মধ্যেই বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই আজ নবান্ন অভিযান করবে। তাদের মিছিলে শহরে যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। অসুবিধায় পড়তে পারে পরীক্ষার্থীরাও। লালবাজারের এক শীর্ষ আধিকারিক বলেন, ‘পরীক্ষার্থীদের অসুবিধা হলে পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। রাস্তায় পর্যাপ্ত পুলিশ থাকবে সকাল থেকেই।’