সেখানে সওয়াল-জবাবের সময়ে অভিযুক্তদের আইনজীবীরা বিচারককে জানান, সিবিআই যদি মনে করে, তাপস ও নীলাদ্রিকে ‘রাজসাক্ষী’ করবে, তা হলে কোনও অসুবিধা নেই। তাঁরা আইনি সাহায্যে প্রস্তুত। যদিও ব্যতিক্রম কুন্তল। তিনি এ দিন আদালতের বাইরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘কেন আমি রাজসাক্ষী হতে যাব? কোনও দোষই তো করিনি।’
তিন জনকেই আলিপুরের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের এজলাসে তোলা হয় বৃহস্পতিবার। ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করা হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারে সিবিআইয়ের আইনজীবীদের কাছে জানতে চান বিচারক। প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগের তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গেও কথা বলেন বিচারক।
পাশাপাশি যাঁদের বয়ান নেওয়া হচ্ছে, তাঁদের ‘স্টেটাস’ কী, তাঁরা অভিযুক্ত না সাক্ষী, বিচারক তা-ও স্পষ্ট করতে বলেন। তাঁর বক্তব্য, ‘যাঁদের ধরা হয়েছে, তাঁদের গোপন জবানবন্দি (ভারতীয় ফৌজদারি আইনের ১৬৪ ধারা অনুযায়ী) কি নেওয়া হয়েছে? যাঁদের জেরা করা হয়েছে, তাঁদের বয়ান কি রেকর্ড করা হয়েছে?’ সিবিআইয়ের কৌঁসুলি বলেন, ‘বড় ষড়যন্ত্র হয়েছে। সাক্ষীদের গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে।
কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে তাঁরা ভুল পথে চালিত করছেন। আমরা সে জন্য সতর্ক ভাবে এগোচ্ছি। কোথা থেকে, কার মাধ্যমে টাকা এসেছে, কোথায় গিয়েছে, সে বিষয়ে তদন্ত চলছে।’ রাজসাক্ষী বা অ্যাপ্রুভার চিহ্নিত করা গিয়েছে কি না, তা-ও সিবিআইয়ের কাছে জানতে চান বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়। নীলাদ্রি এবং তাপসের আইনজীবীরা বলেন, ‘আমাদের (মক্কেলদের) অসুবিধা নেই। রাজসাক্ষী হতে কোনও সমস্যা নেই।’
কুন্তলের আইনজীবী শেখ মেহেদি নওয়াজের বক্তব্য, ‘হাইকোর্টের নির্দেশে শিক্ষা দপ্তরের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে। বোর্ডের কতজন অফিসারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই? কুন্তল ঘোষ তো প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের কেউ নন। তাঁর চাকরি দেওয়ারও ক্ষমতা নেই। তা হলে তাঁকে কেন আটকে রাখা হয়েছে? সিবিআই নিজের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য এমন করছে।
‘ নীলাদ্রির হয়েও সওয়াল করে মেহেদি বলেন, ‘একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আমার মক্কেলকে দেখানো হচ্ছে। কিন্তু তাঁর কাছ থেকে কি কিছু পাওয়া গিয়েছে? যে কোনও শর্তে দু’জনকে জামিন দেওয়া হোক।’ তাপসের আইনজীবী দীপ্তাংশু বসু এ দিন বলেন, ‘মক্কেলকে যতবার ডাকা হয়েছে, তিনি গিয়েছেন। নতুন করে কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি প্রাথমিক বোর্ডের সদস্যও নন। তা হলে কী ভাবে প্রমাণিত হলো তিনি চাকরি দিয়েছেন? আমার মক্কেলেরও কোনও অসুবিধা নেই রাজসাক্ষী হতে।’
এই যুক্তি খারিজ করে সিবিআইয়ের কৌঁসুলি বলেন, ‘অযোগ্য প্রার্থীদের থেকে টাকা তোলার পর কুন্তল এবং অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন তাপস। তাঁদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।’ তাপসের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে ফের বিচারকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেন তাঁর আইনজীবীরা। তাঁরা জানান, তাপস গুরুতর অসুখে ভুগছেন। তাঁর নিয়মিত ওষুধ প্রয়োজন। জেলে তাপসের যথাযথ চিকিৎসা হচ্ছে না বলেও জানানো হয়। যদিও এ দিন তিন জনেরই জামিনের আর্জি খারিজ করে ২৩ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন বিচারক।