যিনি আইনি মহলে সমধিক পরিচিত বাচ্চু পাল নামেই। বয়স ৮৪ পেরিয়েছিল। এ দিন ভোরবেলায় আলিপুরে নিজের বাসভবনেই মারা যান সমরাদিত্য। তাঁর মৃত্যুর খবর পেয়ে হাইকোর্টের বিচারপতি থেকে শুরু করে আইনি পেশার সঙ্গে যুক্ত বহু মানুষ হাজির হন বাড়িতে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে দুই মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও মলয় ঘটক প্রয়াত আইনজীবীর বাড়ি গিয়ে পুষ্পস্তবক দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে আসেন।
১৯৩৮-এর ১৫ ডিসেম্বর জন্ম। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পড়াশোনা। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়েই আইনের পাঠ। ব্যারিস্টার হন ইনার টেম্পল লন্ডন থেকে। কলকাতা হাইকোর্টে তাঁর আইনি পেশায় প্রবেশ পাঁচ দশকেরও বেশি আগে, ১৯৬৭ সালে। সাংবিধানিক নানা বিষয়ে মামলায় তিনি ছিলেন দিক্পাল। জটিল মামলায় তিনি যে পক্ষের হয়েই সওয়াল করুন না কেন, তাঁর বক্তব্য শোনা ছিল সবার কাছেই শিক্ষণীয়। বহু জটিল আইনি বিষয়কে সহজ করে আদালতে পেশ করতেন।
তাঁর লেখা বিশেষত দু’টি বই আইনি পেশায় যুক্তদের কাছে আজও মহা মূল্যবান–কয়েক খণ্ডের ‘ইন্ডিয়া’স কনস্টিটিউশন: অরিজিনস অ্যান্ড ইভোলিউশন’ এবং ‘দ্য ল অব কনটেম্পট’। সাম্প্রতিক অতীতে সিঙ্গুরের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে টাটাদের হয়ে কলকাতা হাইকোর্টে সমরাদিত্য পালের সওয়াল এই আইনি লড়াইকে অন্য মাত্রায় পৌঁছে দিয়েছিল।
২০১৩-য় রাজ্য নির্বাচন কমিশনের তৎকালীন চেয়ারপার্সন মীরা পাণ্ডের হয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন-সহ একাধিক বিষয়ে রাজ্যের সঙ্গে আইনি লড়াইয়েও তিনি আদালতে মুখ্য চরিত্র হয়ে উঠেছিলেন। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের থেকে কোনও পারিশ্রমিকও নেননি। আবার বিস্ক ফার্ম কোম্পানির মালিক কেডি পালের হয়ে তাঁর আইনি লড়াইও মনে রাখার মতো।
নিঃসন্তান বাচ্চু পালের স্ত্রী রুমা পাল বিচারপতি হিসেবে সুপ্রিম কোর্ট থেকে অবসর নিয়েছেন কয়েক বছর আগে। এই বর্ষীযান আইনজীবীর মৃত্যুসংবাদ জেনে সকালেই হাইকোর্টে কাজকর্ম বন্ধ হয়ে যায়। তাঁর বাড়িতে হাজির হতে থাকেন আইনি পেশার দিক্পালরা। সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অশোক গঙ্গোপাধ্যায় তাঁদের দু’জনের দীর্ঘ পথ চলার স্মৃতিচারণ করছিলেন।
তাঁর কথায়, ‘এই মৃত্যু বিচারবিভাগের জন্যে বিপুল ক্ষতি।’ সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তথা দেশের বর্তমান লোকপাল পিনাকীচন্দ্র ঘোষের বক্তব্য, ‘পরিবারেরই এক জনকে হারালাম।’ সদ্য সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদ থেকে অবসর নিয়েছেন ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, ‘আজ আমি যেটুকু পথ এসেছি, সবটাই ওঁর পরামর্শ এবং গাইডেন্সে। ওঁর জুনিয়র হিসেবেই এক সময় এই পেশায় কাজ শুরু করেছিলাম।
তার পরে যেখানেই গেছি, ওঁর পরামর্শ আমাকে ঠিক পথে চালিত করেছে। আমার কাছে এ এক মস্ত ক্ষতি।’ সদ্যই প্রয়াত হয়েছেন আর এক দিক্পাল আইনজীবী সত্যব্রত মুখোপাধ্যায়। তাঁর ছেলে রাজ্যের বর্তমান অ্যাডভোকেট জেনারেল সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমি পর পর দু’জন অভিভাবককে হারালাম। এক সময়ে আমার মা উর্মিবালা মুখোপাধ্যায়ের জুনিয়র ছিলেন পরবর্তীতে বিচারপতি রুমা পাল। তাই দুই পরিবারের মধ্যে একটা গভীর যোগাযোগ ছিল। এখন আর এই সব নিয়ে কিছু বলার মতো মানসিক অবস্থাও নেই।’