সূর্যকান্ত কুমার, এই সময়, কালনা:
স্বপ্ন ছিল, অনেক দূর পর্যন্ত পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। কিন্তু মাধ্যমিকে বসার আগের বছরই জোর করে বাড়ি থেকে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। স্বামী বা শ্বশুরবাড়ির কেউ চাননি বাড়ির বৌ পড়াশোনা করে নিজের স্বপ্ন ধাওয়া করুক। কালনার কৃষ্ণদেবপুরের বধূ পূর্ণিমা সিংহের জীবনের কাহিনিটা এ পর্যন্ত খুব চেনা।

যেটা ব্যতিক্রমী, সেটা হলো তাঁর জেদ ও অধ্যবসায়। যার জোরে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করে সামান্য বেতনের অর্থে পড়াশোনা চালিয়ে মুক্ত বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে এ বার মাধ্যমিক পাশ করলেন পূর্ণিমা। বিয়ের দশক পেরিয়ে এখন তাঁর বয়স ৩০।

Higher Secondary Exam : পরীক্ষা হল থেকে রক্তদান শিবিরে
দশম শ্রেণিতে পড়াশোনার সময়ে এলাকারই এক যুবকের সঙ্গে তাঁকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। মেয়ের ঘোরতর আপত্তি কানে তোলেননি কেউ। পূর্ণিমার কথায়, “ভেবেছিলাম শ্বশুরবাড়ির লোকজনকে বুঝিয়েসুজিয়ে পড়াশোনা চালাব। কিন্তু স্বামী ও অন্যরা পাল্টা প্রশ্ন তোলেন – বিয়ের পর আবার কীসের পড়া! পড়ে কী হবে? বরং ছেলেমেয়ে হলে তাদের পড়াশোনা করিয়ে নিজের স্বপ্ন পূরণ কোরো।”

এরই সঙ্গে বলা হয়েছিল, “একান্ত পড়াশোনা করতেই হলে নিজে খরচ জোগাড় করো।” এই শর্তটাকেই সিঁড়ি বানিয়ে নেন পূর্ণিমা। যদিও তার আগে অনেক কিছু ঘটে গিয়েছে। বিয়ের কিছু সময় বাদে কোলে আসে মেয়ে।

হোঁচট খায় তাঁর স্বপ্ন। ভাবেন, সেটা বোধহয় পূরণ হলো না! কিন্তু মেয়ে কিছুটা বড় হওয়ার পরে ফিরে পান প্রত্যয়। ঠিক করেন, নিজে খরচ জোগাড় করেই পড়াশোনা চালাবেন। ঢুকে পড়েন একটা বেসরকারি সংস্থার কাজে।

Sweta Chakraborty Model : ‘সাধারণ মেয়ে’ শ্বেতার উত্থানে অবাক পড়শিরা
এ বার প্রশ্ন, এগোবেন কী ভাবে! এলাকায় বিনা সাম্মানিকে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা করান অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমীরণ প্রসাদ চক্রবর্তী। একদিন তাঁর কাছে গেলেন পূর্ণিমা।

সমীরণের কথায়, “একদিন মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আমার কাছে এসে বলল, স্যর পড়াবেন? জিজ্ঞাসা করি, বাড়ি কোথায় আপনার? ওর কাছে সব শুনে অবাক হয়ে যাই। ওর ইচ্ছেশক্তি আমাকে অনুপ্রাণিত করে।”

সম্প্রতি প্রকাশিত, মুক্ত বিদ্যালয়ের মাধ্যমিকের ফলে ৪১২ পেয়ে প্রথম বিভাগে পাশ করেছেন সমীরণের ছাত্রী। শিক্ষকের প্রতিক্রিয়া, “খুব আনন্দিত ও গর্বিত হয়েছি। পড়াশোনার কোনও বিকল্প নেই।”

West Bengal Latest News: একলা পেলে জড়িয়ে ধরে দেওর, টাকা চায় স্বামী! থানার দ্বারস্থ পুরুলিয়ার বধূ
খুশি পূর্ণিমার মা রেবা মিত্রও। তাঁর কথায়, “তখন বুঝতে পারিনি। এখন মেয়ে পাশ করায় খুব আনন্দ হচ্ছে।” আপাতত মেয়েকে উচ্চশিক্ষিত করার পাশাপাশি নিজেও MA পাশ করতে চান বধূ। কিন্তু ভাবাচ্ছে আর্থিক সামর্থ্য।

পূর্ণিমার কথায়, “আমার স্বপ্নপূরণে এখন একটাই প্রতিবন্ধকতা — অর্থ। যে বেতন পাই, সেটা খুবই কম। কতদূর এগোতে পারব জানি না।”



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version