রূপক মজুমদার, বর্ধমান
কয়লা মাফিয়া রাজেশ ঝায়ের খুনের পরিকল্পনা ঝাড়খণ্ডের জেলে বসে করা হয়ে থাকতে পারে, এমন একটা সন্দেহ তদন্তকারী অফিসাররা করছিলেনই। এই ইঙ্গিত দিয়েছিল ‘এই সময়’। সেই তথ্য যাচাই করতে ঝাড়খণ্ডের হাজারিবাগ জেলে বন্দি কুখ্যাত দুষ্কৃতী আমন সিংকে জিজ্ঞাসাবাদ করল পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল বা সিট।

Raju Jha : হরিয়ানার নীল গাড়িই শক্তিগড়ের অপারেশনে
কয়লা ও বালি পাচারের বখরা নিয়ে গোলমাল এবং এলাকার দখলদারি নিয়ে পুরোনো শত্রুতার জেরে রাজেশকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে–খুনের সম্ভাব্য এই মোটিভ খতিয়ে দেখতে গত শনিবার আমনকে হাজারিবাগ জেল সুপারের অফিসে বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তার আগে ঝাড়খণ্ডের রাঁচি এবং বিহারের পাটনা সেন্ট্রাল জেলে বন্দি বেশ কয়েকজন অপরাধীর সঙ্গেও কথা বলেছেন সিটের সদস্যরা।

Raju Jha News : নীল গাড়ির পর রহস্য নীল মোটর বাইকেও!
তাদের কাছ থেকেই আমনের নাম উঠে আসে। ইতিমধ্যে রাজেশ খুনের দুই প্রত্যক্ষদর্শী, ঘটনার দিনের ফরচুনার গাড়ির চালক নুর হোসেন ও গাড়ির সহযাত্রী ব্রতীন মুখোপাধ্যায়ের বয়ান অনুযায়ী আততায়ীদের যে স্কেচ আঁকিয়েছে পুলিশ, তাও বিহার-ঝাড়খণ্ডের জেলবন্দি দুষ্কৃতীদের দিয়ে শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

রাজেশকে খুনের পিছনে আমনের সম্ভাব্য মোটিভ কী হতে পারে?
পুলিশ সূত্রের খবর, সম্প্রতি রাজেশ বিভিন্ন কয়লা খনি থেকে ডেলিভারি অর্ডার বা ডিও বেরনোর পরে সেই কয়লা নিয়ে যাওয়ার জন্য ‘ডান্ডা ট্যাক্স’ চালু করেছিলেন। আগে কুইন্টল প্রতি দু’শো টাকা করে নেওয়া হলেও এক ধাক্কায় বেড়ে হয় সাড়ে ছ’শো টাকা। এটা জানার পর প্রথমে আমন এজন্য রাজেশের কাছে ৫০ লক্ষ টাকা দাবি করে। প্রথমে সেই টাকা দিতে অস্বীকার করেন রাজেশ।

Cattle Smuggling Case : বেপাত্তা লতিফকে দিল্লিতে তলব ইডির
টাকা না-দিলে সমস্যা বাড়তে পারে, পরে এটা বুঝেই সম্ভবত রাজেশ এক কোটি টাকা দিয়ে পাকাপাকিভাবে আমনের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার কথা ভাবছিলেন। এক কোটি টাকা দেওয়ার পরে আমন সিং রাজেশকে ফোন করে জানায়, আরও আড়াইশো কোটি টাকা দিতে হবে। নাহলে রানিগঞ্জ কয়লা খাদানের বিভিন্ন এলাকায় আমনকে ব্যবসা করতে দিতে হবে। এটা নিয়েই রাজেশের সঙ্গে আমনের শত্রুতা তৈরি হয়েছিল বলে সন্দেহ তদন্তকারীদের।

এই আমনের উত্থান ও প্রতিপত্তি দেখে কার্যত চক্ষুচড়কগাছ সিটেরও। পুলিশ সূত্রের দাবি, ঝাড়খণ্ড, দুমকা, ধানবাদ হয়ে ঝড়িয়া পর্যন্ত নিজের তোলাবাজির এলাকা বলে চিহ্নিত করেছিল আমন। রাঁচি ও বিহারের কিছু এলাকাতেও তার প্রভাব ও প্রতিপত্তি ছিল ভালোই। তবে বিভিন্ন অপরাধে তার নাম জড়ালেও যেহেতু বেশিরভাগ সময়েই সে জেলে ছিল–এই যুক্তিই তুলে ধরা হতো আদালতে।

Raju Jha Shootout: পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে একের পর এক গুলি! রাজু ঝা শ্যুট আউটের সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে, দেখুন ভিডিয়ো
ধানবাদের সিনেমা রোড এলাকায় এক রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী, দু’জন চিকিৎসক খুনের ঘটনার পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তারপরেও একেবারে ফিল্মি কায়দায় জেল থেকেই অপারেশন চালাতে সিদ্ধহস্ত আমন। জেলের ভিতরে তার কারবার সামলায় পাঁচজন লোক। বাইরে রয়েছে আমনের আড়াইশো জনের বিরাট বাহিনী। এদের মধ্যে শার্প শ্যুটার, আইটি এক্সপার্ট, তোলাবাজি চালানোর লোকজনও রয়েছে।

Raju Jha : সঙ্গে কেন ছিল না তাঁর লাইসেন্সপ্রাপ্ত বন্দুক!
রিয়েল এস্টেট কারবারী, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, শিল্পপতি, খনি মালিক–যে কারও থেকে জেল থেকে তোলা বা ওয়াসুলি আদায়ের জন্য ফোন করত আমন নিজেই। সূত্রের খবর, ২০১৭ সালের ২১ মার্চ ধানবাদের ডেপুটি মেয়র নীরজ সিং খুনে গুলিও চালিয়েছিল আমন। নিজের শক্তি বোঝাতে সেদিন নীরজ সিংয়ের গাড়িতে ৬৭ রাউন্ড গুলি চালানো হয়েছিল। নীরজের দেহরক্ষী, গাড়ির চালক সহ তাঁর এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু অলোক যাদবও মারা যান সেদিন। পুলিশের দাবি, এই খুনের ঘটনার বিচারের দায়িত্বে থাকা ডিস্ট্রিক্ট সেশন জজ উত্তম আনন্দর মৃত্যুর পিছনেও হাত ছিল এই আমনের।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version