অনির্বাণ ঘোষ
চিকিৎসা শুরুতে দেরি হলে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া প্রাণঘাতী তো বটেই। কিন্তু চিকিৎসকদের অভিজ্ঞতা বলছে, সময়োচিত চিকিৎসাতেও অনেক সময়ে সাড়া দেন না ম্যালিগন্যান্ট ওই ম্যালেরিয়ার শিকার রোগীরা। তার কারণ, ড্রাগ রেজ়িস্ট্যান্স বা ওষুধের কাজ না-করা।

Drone Services: দুয়ারে ড্রোন! অর্ডার দিলেই পৌঁছবে ওষুধ, পরিষেবা শুরু হাওড়া-হুগলিতে
এহেন ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা যে নেই, তা নয়। তবে তার সুযোগ সীমিত। এমনই সন্ধিক্ষণে মঙ্গলবার, বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবসে আশার আলো দেখাচ্ছে একটি নতুন ওষুধ। ট্রাই-অ্যামাইনোপাইরিমিডিন। ওষুধটি ড্রাগ রেজ়িস্ট্যান্ট বা ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ভালোই কার্যকর বলে দেখা যাচ্ছে প্রাথমিক ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে। নয়া ওই ওষুধের দেশজোড়া ট্রায়ালে সামিল কলকাতার দু’টি হাসপাতালও।

Corona Booster Dose : নয়া ভ্যারিয়েন্ট রুখতে কতটা লাভ পুরোনো টিকার বুস্টারে?
ম্যালেরিয়ায় সাধারণত ক্লোরোকুইন দেওয়া হয় রোগীকে। তার সঙ্গে অনেক সময়ে প্রাইমাকুইনও দেওয়া হয়। তুলনায় নিরীহ ভাইভ্যাক্স ম্যালেরিয়াই বরাবর বেশি হতো বলে এতদিন মাথাব্যথার তেমন কারণ হয়নি ড্রাগ রেজ়িস্ট্যান্ট ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া। কিন্তু কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত আড়াই দশকে দেখা গিয়েছে, দু’ রকম ম্যালেরিয়ার মধ্যে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়া সারা দেশে ৩৯ শতাংশ (১৯৯৫ সাল) থেকে বাড়তে বাড়তে এখন (২০২১ সাল) হয়ে গিয়েছে ৬৩ শতাংশ। ফলে, প্রাণঘাতী ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে এখন আরও ভয়াবহ।

Heart Attack : নিরক্ষর এবং গরিবদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা বাড়ছে! মিথ ভাঙল ল্যানসেটের রিপোর্ট
সে বাধা টপকাতে গত দু’ দশকে চিকিৎসার বড় অস্ত্র হলো আর্টেমেসিনিন গোত্রের ওষুধ। কিন্তু এই ওষুধের ক্ষেত্রে তুলনায় কম হলেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে দেখা যাচ্ছে ম্যালেরিয়ার পরজীবীকে। প্যাথলজি বিশেষজ্ঞ প্রণবকুমার ভট্টাচার্যের কথায়, ‘এখন সব রকম ওষুধ মিলিয়ে প্রায় ১৫ শতাংশ ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার ক্ষেত্রে রেজ়িস্ট্যান্স দেখা যাচ্ছে।’ একই সুরে মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অরিন্দম বিশ্বাস, মাইক্রোবায়োলজি বিশেষজ্ঞ সৌগত ঘোষ ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ যোগীরাজ রায় জানাচ্ছেন, মূল সমস্যাটা আর্টেমেসিনিন নিয়ে নয়, ক্লোরোকুইন নিয়ে।

Corona Update In West Bengal : বঙ্গে ফের চিন্তা উপসর্গহীনরাই
কিন্তু একযোগে সব চিকিৎসকই জানাচ্ছেন, নতুন ওষুধ আরও দরকার এই কারণে যে কোনও রোগীর আর্টেমেসিনিনে অ্যালার্জি থাকলে সে ক্ষেত্রে এখন আর বিশেষ কোনও বিকল্প নেই। এই পরিস্থিতিতে তাই চিকিৎসকরা আর্টেমেসিনিনের মতোই নতুন ওষুধ আসার সম্ভাবনার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন। তেমনই একটি সাড়া জাগানো ওষুধ বলে মনে করা হচ্ছে এই ট্রাই-অ্যামাইনোপাইরিমিডিনকে, যেটি এ দেশে তৈরি করেছে ওষুধ নির্মাতা সংস্থা জাইডাস লাইফসায়েন্সেস।

Covid Update In India : ফের বাড়ল দৈনিক সংক্রমণ, ১ দিনে করোনায় বলি ৪০
জাইডাসের তৈরি এই ওষুধটিরই ট্রায়াল চলছে এখন দেশের ১০টি হাসপাতালের ১৪৫ জন ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগীর উপর। কলকাতার এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিনও সামিল এই ট্রায়ালে। পরজীবী বিশেষজ্ঞ অমিয়কুমার হাটির বক্তব্য, ‘আজকের দিনে ম্যালেরিয়ার রেজ়িস্ট্যান্স একটা বড় সমস্যা। আশা করব, অদূর ভবিষ্যতে সেই রেজ়িস্ট্যান্স কাটানোর আরও ওষুধ আসবে। বেশি বিকল্প থাকলে চিকিৎসাতেও সুবিধা হয়, রোগীর সেরে ওঠার হারও অনেক বেশি হয়।’

Corona Update In West Bengal : দুশো ছুঁইছুঁই বাংলায় চিন্তা পজ়িটিভিটি রেট
দেশজোড়া এই ট্রায়ালটির বেসরকারি ফেসিলিটেটর সংস্থার পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান স্নেহেন্দু কোনার জানাচ্ছেন, ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত ১৪৫ জন স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ৫৮ জনকে ৯০০ মিলিগ্রাম ট্রাই-অ্যামাইনোপাইরিমিডিন দেওয়া হবে। আরও ৫৮ জনকে দিনে দু’ বার করে দু’ দিন দেওয়া হবে এই ওষুধেরই ৬০০ মিলিগ্রাম।

আর বাকি ২৯ জনকে দেওয়া হবে আর্টেমেসিনিন গোত্রের কম্বিনেশন ওষুধ। ট্রায়াল শেষে হবে তিন ধরনের ওষুধের কার্যকারিতার তুলনামূলক বিশ্লেষণ। স্নেহেন্দু বলেন, ‘এনআরএস এবং ট্রপিক্যাল-সহ বাকি হাসপাতালগুলির আউটডোরে এবং সেন্ট্রাল ল্যাবে যাঁরা ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ার চিহ্নিত রোগী, তাঁদেরই স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে এই ট্রায়ালে অংশ নিতে বলা হচ্ছে।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version