জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: বিকেল চারটে থেকেই ইডেন গার্ডেন্সের (Eden Gardens) চার নম্বর গেটের সামনের ছবিটা অন্যরকম ছিল। ঠিক যেমনটা হয় ক্রিকেটের স্বর্গোদ্যানে কেকেআরের কোনও ম্যাচে থাকলে। লেসলি ক্লডিয়াস সরণির সামনে তুমুল ব্যস্ততা।
বটতলার ঠিক সামনে দলে দলে পুলিসকর্মী। তদারকিতে উচ্চপদস্থ কর্তারা। ব্যারিকেড দিয়ে রাস্তা ভাগ করা, শয়ে শয়ে মানুষ আসছেন, টিকিট দেখাচ্ছেন, এগিয়ে যাচ্ছেন। ডেস্টিনেশন একটাই। শনির বিকেলে কলকাতার গন্তব্য ছিল লাল-হলুদ তাঁবু। কারণ একটাই। সলমান খান ওরফে ‘কিসি কি ভাই কিসি কা জান’ মাতাবেন ইস্টবেঙ্গল তাঁবু। চোখের সামনে ‘টাইগার’! গর্জন শুনতে ও দেখতে মানুষ তিন লক্ষ টাকা খরচ করতেও দু’বার ভাবেননি। তবে শুধু তো সলমান নন। পুরো টিম নিয়ে ভাইজান এসেছেন শহরে। পোশাকি নাম, ‘দাবাং দ্য ট্যুর রিলোডেড।’ দুরন্ত লাইনআপ।
আরও পড়ুন-‘দিদি’ মমতার বাড়িতে ‘ভাইজান’ সলমান, দেখুন ভাইরাল ভিডিয়ো
সাড়ে ছ’টা থেকে ইস্টবেঙ্গল তাঁবুর চেহারাটাই বদলে গেল, যদিও তার আগে লাল-হলুদ সমর্থকদের মাতিয়ে দেওয়ার জন্য জায়ান্ট স্ক্রিনে ক্লাবের সোনালি ইতিহাসের ভিডিয়ো প্রেজেন্টেশন বারবার দেখানো হয়েছিল।
দাবাং টিমের অন্যতম সদস্য মণীশ পল ছিলেন সঞ্চালকের ভূমিকায়। তিনি গান ও নাচের তালে টিমের সকলের ছোট্ট করে ইন্ট্রো দিয়ে স্টেজ ছেড়ে দিলেন পূজা হেগড়েকে। পূজা ‘বুটা বম্মা’ ‘সিটি মার’- এ নেচে মাতিয়ে দিলেন, পূজা মঞ্চ ছাড়তেই আয়ুশ শর্মা এলেন। তিনিও চেষ্টা করলেন সাধ্য মতো আনন্দ দেওয়ার।
এরপর জ্যাকুলিন ফার্নান্দেজ এলেন মঞ্চে আগুন জ্বালাতে। নিজের অভিনীত ‘মার্ডার’ ও ‘রেস’ ছবির জনপ্রিয় গানেই মাতালেন না। পাশাপাশি ‘বড় লোকের বিটি লো’তে নেচে জমিয়ে দেন মৌতাত। জ্যাকুলিন ব্যাক স্টেজে যাওয়ার পর ‘ইন্ডিয়ান মাইকেল জ্যাকসন’ প্রভু দেবা দেখিয়ে দিলেন, তিনি আজও ম্যাজিক করতে চানেন। ‘নাইনটিজ নস্ট্যালজিয়া’য় ডুবিয়ে দিলেন ‘ঊর্বশী… ঊর্বশী…’তে নেচে। প্রভু বাংলার ফ্লেভার ধরার জন্য ‘রঙ্গবতী’তেও নাচলেন। হাততালিতে ফেটে পড়ল ইস্টবেঙ্গল। প্রভু দেবার পর বলিউডের স্টার সোনাক্ষী সিনহা ‘গনদি বাত’, ‘মাংনা’র মতো একের পর রক সুপারহিট ট্র্যাকে নেচে সন্ধে জমিয়ে দিলেন। শত্রুঘ্ন কন্যার লুকস আর মিষ্টি হাসিতে মন জয় করে নিলেন।
ঘড়ির কাঁটায় তখন ঠিক রাত আটটা। যাঁর অপেক্ষায় সকলে প্রহর গুনছিলেন, অবশেষে সেই সালমান এলেন। কুড়ি মিনিটের পারফরম্যান্সে নিজেকে উজার করে দিলেন সল্লু। ‘ভাই..ভাই…’ তীব্র শব্দ-ব্রহ্মে কেঁপে গেল লাল-হলুদ ক্লাব। পুরনো থেকে নতুন গানের ককটেলে নিজেকে মুরেছিলেন সলমান। নিজের স্টাইলে অনুষ্ঠানে রংমশাল জ্বাললেন। কে বলবে সাম্প্রতিক কালে এই মানুষটাকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বারবার। কখনও লরেন্স বিষ্ণোই, তো কখনও গোল্ডি ব্রারেই, তো আবার কখনও রাজস্থানের জোধপুরের এক ব্যক্তি।
বাড়ির বাইরে পা রাখেন বুলেটপ্রুফ গাড়িতে। বেড়েছে নিরাপত্তারও অনেক। তবে সলমান থাকলেন সলমানেই। কুড়ি মিনিটের কাছাকাছি ওয়ার্ম-আপ সেরে ফিরে গেলেন।
সলমান এরপর স্টেজ দিয়ে গেলেন এই সন্ধের একমাত্র গায়ক গুরু রণধাওয়াকে। গুরুর গান কলকাতার মানুষ ভালোবাসেন, গুরু সেকথা নিজেও জানেন। একের পর এক তাঁর সুপারহিট গান গেয়ে মাতিয়ে দিলেন। কখনও তেনু স্যুট সুট করতা’ তো কখনও ‘লগতি লাহোর দি’।
গুরুর গানের পর বাকি ছিল সালমানের আসল ম্যাচ। প্রত্যাবর্তনে আর ভাইজান একা ছিলেন না। তিন নায়িকা-পূজা, জ্যাকুলিন ও সোনাক্ষীকে নিয়ে করলেন সুপার-ডুপার রোম্যান্টিক পারফরম্যান্স। এখানেই শেষ নয়, দর্শক আসন থেকে তিনজন পুরুষ ও মহিলা ফ্যানকে ডেকে তাঁদের পারফরম্যান্সও উপভোগ করলেন তিনি।
অনুষ্ঠানের অন্তিম লগ্নে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও বিধাননগরের মেয়র কৃষ্ণা চক্রবর্তী উত্তরীয় ও ফুল ও স্মারক দিয়ে সংবর্ধনা দেন সলমানকে। এরপর দেবব্রত সরকার ও অন্যান্য ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তারা সলমানকে ক্লাবের ঘাস, ক্লাবের মাটি ও তাঁর নামাঙ্কিত ক্লাবের বিশেষ জার্সি তুলে দেন। ক্লাবের আজীবন সদস্যপদ (৮০০২৭) পেলেন তিনি। ছিল ইস্টবেঙ্গলের পক্ষ থেকে বিশেষ সোনার কয়েন (ক্লাবের শতবর্ষ উদযাপন উপলক্ষ্যে)।
এরপর সলমানের হাতে দু’টি ফুটবল তুলে দেওয়া হয়। সলমান একটি ফুটবল সই করে সঙ্গে সঙ্গে কিক করে দর্শকদের উদ্দেশে পাঠান। অন্য ফুটবলটি লাল-হলুদ রেখে দেয়। দর্শকরা এরপর যখন অনুষ্ঠান শেষ ভেবে মাঠ ছাড়ার পরিকল্পনা করছিলেন, তখনই মণীশ জানান যে, চমক এখনও বাকি আছে। সলমান তিন নায়িকা, আয়ুশ ও প্রভু দেবাকে নিয়ে পারফরম্যান্সের মোক্ষম ডোজ দিলেন। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার এই ‘সুপার স্যাটারডে’ মনে রাখবে কলকাতা।
প্রসঙ্গত, ২০০৯ সালে ‘ওয়ান্টেড’ ছবির প্রচারে কলকাতার মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে একটি ফুটবল ম্যাচ খেলার কথা ছিল ভাইজানের। কিন্তু তিনি মাঠে পা রাখার খবরেই পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাওয়ায় মাঠ ছেড়ে চলে যেতে হয় তাঁকে। এরপর আর কোনও শো বা ছবির প্রচারে দেখা যায়নি তাঁকে। মাঝে কেটে গেছে এক দশকেরও বেশি সময়। ব্যক্তিগত কোনও অনুষ্ঠানে কলকাতায় এলেও পাবলিকলি কলকাতায় শো করেননি সলমান। এবার একেবারে টিম নিয়ে মাতিয়ে দিলেন। বলে গেলেন যে, দ্রুত আসবেন কলকাতায়।