একটি সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাৎকারে প্রেরণা বলেছিল, ‘শিক্ষাক্ষেত্রে যে দুর্বিষহ দুর্নীতি, সেটা আমাকে বিশেষ ভাবে ভাবাচ্ছে। একটা সময়ে মনে হচ্ছিল, এটা কী হচ্ছে! এই যে এতদিন ধরে দাদা-দিদিরা চাকরির জন্য রাস্তায় বসে, তা নিয়ে উচ্চবাচ্য নেই!’ বক্তব্য ভাইরাল হয়ে যায়। আর শুরু হয় ট্রোলিং।
প্রেরণার মা-বাবার রাজনৈতিক পরিচয় থেকে তাঁরা চিরকুটের মাধ্যমে চাকরি পেয়েছেন কি না – এ নিয়ে আলোচনার পাশাপাশিই কেউ কেউ লিখেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর থেকে কন্যাশ্রী, সবুজসাথীর সুবিধে নিয়ে, ট্যাবের টাকা নিয়ে রাজ্য সরকারের বদনাম করছে প্রেরণা। এক কদম এগিয়ে তাকে রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার নিদানও দিয়েছেন অনেকে। প্রেরণা অবশ্য জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের কৃতী সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেবে সে। মুখ্যমন্ত্রীর থেকে স্মারকও নেবে।
ট্রোলিংকে বিশেষ গুরুত্বও দিতে নারাজ প্রেরণা ও তার পরিবার। ওই ছাত্রীর কথায়, ‘আমি এখন প্রাপ্তবয়স্ক। দেশে বাক্ স্বাধীনতা রয়েছে। আমি কোনও রাজনৈতিক দলের হয়ে বক্তব্য রাখিনি। সেই যোগ্যতা আমার নেই। নিরপেক্ষ শিক্ষার্থী হিসেবে যা দেখেছি, তাই নিয়ে দু’চার কথা বলেছি।’ তার প্রশ্ন, ‘আমরা তো কেউকেটা নই, তা হলে এমন কদর্য আক্রমণ করা হচ্ছে কেন?’
যে স্কুল থেকে সে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেছে, বাবা অশোক পাল সেখানকারই প্রধান শিক্ষক। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ আমি এবিটিএ (বামপন্থী শিক্ষক সমিতি) রাজ্য কমিটির সদস্য। সক্রিয় ভাবে রাজনীতি করি। আমার নামে তাই নানা মামলাও আছে। আমার স্ত্রীও এবিটিএ-র আঞ্চলিক কমিটির সদস্যা।’ পাল দম্পতি জানান, মেয়ের দু’জন প্রাইভেট টিউটর চাকরির দাবিতে আন্দোলনরত। তাঁদের অবস্থা দেখেই প্রেরণা মুখ খুলেছে।
রাজনৈতিক চাপান-উতোর অবশ্য থেমে থাকেনি। তৃণমূলের আইটি সেলের ইন চার্জ দেবাংশু ভট্টাচার্যের বক্তব্য, ‘সূর্যকান্ত মিশ্র, সুজন চক্রবর্তীর মতো সিপিএমের নেতারা প্রেরণার বক্তব্য শেয়ার করে রাজনীতি না করলে ওই ছাত্রীকেও অস্বস্তির শিকার হতে হতো না।’ এই প্রেক্ষিতে দেবাংশুর ব্যাখ্যা – তৃণমূলের কোনও নেতানেত্রী এ নিয়ে মুখ খোলেননি। সমর্থকরা কিছু বললে তার দায় দলের নয়। পাল্টা সুজন বলেন, ‘আমি ফল প্রকাশের দু’দিন বাদে প্রেরণার বক্তব্য পোস্ট করেছি। তার আগে বহু মানুষ ওকে কুর্নিশ জানিয়েছেন। যাঁরা ওকে ট্রোল করছেন, তাঁদের নিয়ে পাল্টা ছি ছি হচ্ছে।’