কুবলয় বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রচণ্ড একটা বিস্ফোরণ হয়েছে। বেশি দিন নয়, মাত্র দু’কোটি বছর আগে। মহাকাশের ওই তীব্র বিস্ফোরণ পশ্চিম মেদিনীপুরের সীতাপুর গ্রামে বসে প্রত্যক্ষ করলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী আশিস রাজ। ২০ মে ওই বিজ্ঞানীর নজর আটকে ছিল বশিষ্ঠর ভিউ ফাইন্ডারে। ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের টেলিস্কোপ ‘বশিষ্ঠ’-ই আপাতত পূর্ব ভারতের সবচেয়ে বড় টেলিস্কোপ।

Celestial Monster Star : সূর্যের চেয়েও ১০ হাজার গুণ বড়! মহাকাশে দেখা মিলল ‘সেলেস্টিয়াল মনস্টার’ নক্ষত্রের
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ বা আমেরিকার মতো বিপুল অর্থবল নেই, কিন্তু কলকাতার বিজ্ঞানীদের তৈরি বশিষ্ঠ যে দক্ষতায় কোনও অংশে কম নয় সেটাই প্রমাণ হয়ে গেল হাতে-কলমে। বশিষ্ঠর ২৪ ইঞ্চি ব্যাসের প্রতিফলক আয়নাই টাইম মেশিনের মতো অতীত দর্শন করিয়ে দিল বিজ্ঞানীদের। ‘জন্মিলে মরিতে হবে’ – এ শুধু জীবজগতের জন্য সত্যি নয়, এই বিশ্ব চরাচরের কোনও অস্তিত্বই এই অমোঘ সত্যর বাইরে নয়।

Water Found In Moon : চাঁদে জলের সন্ধান? চিনা বিজ্ঞানীদের গবেষণায় চাঞ্চল্যকর তথ্য
এমনকি নক্ষত্ররাও জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গেই তাদের আয়ু এবং পরিণতি লেখা হয়ে যায়। বিশ্ব চরাচরে নিয়মিত কোথাও না কোথাও নক্ষত্র প্রবল বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। দূরত্বের জন্য সব সময় এমন অবাক করা মহাজাগতিক ঘটনা আমাদের নজরে আসে না। তবে অতি সম্প্রতি এমনই এক ঘটনার সাক্ষী রইল ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্স (আইসিএসপি)।

NASA: খালি চোখে দেখা যাবে সবুজ লেজ, ৫০ হাজার বছর পর পৃথিবীর কাছে এল ধূমকেতু
কলকাতার এই সংস্থার প্রধান এবং পেশায় জ্যোতির্বিজ্ঞানী সন্দীপ চক্রবর্তী বলছেন, ‘২০ মে তারিখে মেসিয়ার ১০১ বা পিনহুইল গ্যালাক্সি নামের ছায়াপথের একটি তারা আমাদের নজরে আসে। তারাটি প্রবল বিস্ফোরণে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। ওই গ্যালাক্সি রয়েছে পৃথিবী থেকে অন্তত দু’কোটি আলোকবর্ষ দূরে। অর্থাৎ ঘটনাটি দু’কোটি বছর আগে ঘটেছে। বিস্ফোরণের দৃশ্য ধরা পড়েছে আমাদের বশিষ্ঠ নামের টেলিস্কোপে। পশ্চিম মেদিনীপুরের সীতাপুর গ্রামে ওই টেলিস্কোপটি বসানো রয়েছে।’

New Zealand : অন্ধকারের খোঁজে কিউইদের দেশ, ‘ডার্ক স্কাই নেশন’ হতে চায় নিউজিল্যান্ড
বিজ্ঞানী বলেন, ‘এই ধরনের ঘটনা অতি দ্রুত ঘটে। মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যে একটা তারা ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সময় প্রচণ্ড শক্তি উৎপন্ন হয়। শক্তির পরিমাণ এত বেশি থাকে যে অনেক সময় ধ্বংস হওয়া তারাটি গোটা ছায়াপথের চেয়ে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।’ পিনহুইল গ্যালাক্সির ক্ষেত্রেও তেমনই হয়েছে। মাত্র তিন দিনের ব্যবধানে এই তারার ঔজ্জ্বল্য অন্তত ১০০ গুণ বেড়ে যায়।

তবে দূরত্ব খুব বেশি থাকার জন্য এই ঘটনা প্রত্যক্ষ করতে অত্যন্ত শক্তিশালী টেলিস্কোপ লাগে। সৌরজগতের বাইরে থাকা গ্রহের অস্তিত্ব খুঁজে বার করার জন্য বশিষ্ঠকে তৈরি করা হয়েছিল। তাই ২৪ ইঞ্চি প্রতিফলক আয়নায় তৈরি বশিষ্ঠর লেন্সে সহজেই ওই দৃশ্য ধরা পড়েছে।

আইসিএসপি-র সীতাপুর কেন্দ্রে গবেষণারত জ্যোতির্বিজ্ঞানী আশিস রাজ জানিয়েছেন, ‘সামনের কয়েকদিন আমাদের নজর থাকবে পিনহুইল গ্যালাক্সির দিকেই। নক্ষত্রটি ধ্বংস হলেও তার ছটা কিছুদিন স্থায়ী হবে। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করা হবে।’ বিজ্ঞানী জানিয়েছেন, নক্ষত্র বিস্ফোরণের ঘটনার নজরদারি ও তথ্য সংগ্রহে তাঁকে সাহায্য করেছেন দেবেন্দ্র বিশট এবং কুলদীপ বিলাওয়াল।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version