অর্ণব চক্রবর্তী

বিষ থেকেই হতে পারে অমৃত। পরিবেশের পক্ষে যেটা বিষ, পরিবেশকে সুন্দর করতে তাকেই কাজে লাগাচ্ছেন পার্থসারথি গঙ্গোপাধ্যায়। দমদম সেভেন ট্যাঙ্কস লেনের বাসিন্দা এই প্রৌঢ় একটা সময়ে কাজ করতেন হাওড়া কোর্টে, অবসরের পর তাঁর নেশা ও পেশা বাগান বানানো ও সাজানো। তাঁর গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। চিকিৎসাও চলছে।

তারমধ্যেও তিনি একটা বড় সময় প্রতিদিন কাটান গাছেদের সঙ্গে, প্রকৃতিকেও কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন প্লাস্টিককে ব্যবহার করে। পরিত্যক্ত প্লাস্টিককে পরিবেশবান্ধব উপায়ে ব্যবহারকে আরও বেশি করে উৎসাহ দিতে কলকাতা পুরসভা চালু করেছে ‘কেএমসি প্লাস্টিক বোতল ক্রাফটস চ্যালেঞ্জ’।

Tiger Hill : প্লাস্টিকমুক্ত এলাকা ঘোষিত টাইগার হিল
তবে তার অনেক আগে থেকেই প্রায় একটা গোটা পাড়ার চেহারা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল ব্যবহার করে বদলে ফেলেছেন পার্থসারথি। এটার শুরু হয় অবসরের পর এক আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুরতে গিয়ে ভেঙে যাওয়া মাটির টব, কাচের বোতলে গাছ লাগানো দেখে। তখনই তিনি ভাবতে থাকেন, প্লাস্টিকের বোতল এভাবে ব্যবহার করলে কেমন হয়।

তারপর থেকেই ছোট জলের বোতল থেকে শুরু করে জলের জার, রান্নার তেলের বোতল, গাড়ি বা বাইকের ইঞ্জিন অয়েলের বোতল, যাবতীয় খাবারের প্লাস্টিক প্যাকেট, এমনকী রঙের কৌটো থেকে বাসন মাজার বক্স–সে সব সংগ্রহ করে পার্থসারথি রং-তুলি দিয়ে কখনও দুর্গা, গণেশ, জগন্নাথ থেকে সাপ, বাঘ বা কার্টুনের কোনও চরিত্র ফুটিয়ে তুলছেন। আর এগুলো সব ব্যবহার করা হচ্ছে গাছ লাগানোর জন্য।

Awareness Mosquito Diseases : ‘কামড়াবো এখানে লাশ পড়বে শ্মশানে’, মশাবাহিত রোগের সচেতনতায় অভিনব দেওয়াল লিখন
দমদম সেভেন ট্যাঙ্কস লেনে তাঁর বাড়ির সামনের গোটা চত্বরের ছবিটাই তিনি এভাবে বদলে ফেলেছেন। এই প্রচণ্ড গরমে ফেরিওয়ালা, পোস্টম্যান থেকে শুরু করে ডেলিভারি বয়দেরও এই সাজানো বাগানে অনেক সময়ে জিরিয়ে নিতে দেখা যায়।

প্রৌঢ়ের কথায়, “আমি এই কাজটা করছি জেনে অনেকে পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে যেতেন। একটা সময়ে এত বোতল জমা হয়েছিল, বাড়িতে রাখার জায়গা হতো না। উম্পুনের সময়ে সাজানো বাগানটা পুরো নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। তারপর আবার সেটাকে সাজিয়ে তুলেছি।” এখন অনেকে পার্থসারথির কাছ থেকে গাছ সমেত পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের টব নিয়ে যাওয়ার জন্যও আসেন

Plastic Ban : প্লাস্টিক ব্যবহার রুখতে প্রতিযোগিতা আয়োজন কলকাতা পুরসভার
সামাজিক মাধ্যমে দেশ-বিদেশের অনেক শিল্পীর তারিফও পেয়েছেন তিনি। বছর আটষট্টির পার্থসারথি এখন পরবর্তী প্রজন্মকেও একইভাবে পরিবেশ রক্ষার কাজে সামিল করতে চান। তাই সকাল ৫টা থেকে বাগান সাজানোর ফাঁকে ফাঁকে উৎসাহীদের তিনি কাজ শেখান হাতে ধরে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version