ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। সারা বছর দেশ বিদেশের পর্যটক আসেন। নানা ভাষায় কথা বলেন। ম্যানগ্রোভ এলাকার সারা বছরের জীবনযুদ্ধের কথা জানতে চান। অথচ তাঁদের ঠিকঠাক উত্তর দেওয়ার লোকের বড় অভাব।
কারণ? বাদাবনে ইংরেজি বলার লোক নেই!
সুন্দরবনের ব্যাঘ্র প্রকল্পকে ঘিরে ইকো ট্যুরিজমের প্রসারে নেমে বারবারই এই ভাষাগত প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়েছিল রাজ্য সরকার। শেষ পর্যন্ত এক বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংস্থার পাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরবনের গাইডদের প্রশিক্ষণে এগিয়ে এল রাজ্য। কলকাতায় মার্কিন দূতাবাসও গ্রামের গাইডদের ইংরেজি বলার প্রথম পাঠ দিল একেবারে বাদাবনে গিয়ে। এই আধুনিক প্রশিক্ষণের মূল লক্ষ্য, গাইডরা পেশাদার মনোভাব এবং আদবকায়দায় ভাষার প্রাচীর ভেঙে সুন্দরবনের বাঘ-সহ জীব ও উদ্ভিদের নানা বৈচিত্র্যের কথা দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সামনে তুলে ধরবেন।
পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সুন্দরবনের আকর্ষণ বিশ্বজনীন। গত আর্থিক বছরে এখানে আড়াই লক্ষ পর্যটক এসেছিলেন। সেখানে বিদেশি পর্যটক ছিলেন প্রায় ১৫ হাজার। বাকিদের বড় অংশও ভিন্রাজ্যের, মূলত দক্ষিণ ভারতের বাসিন্দা। ফলে বাংলা বোঝেন না প্রায় কেউ। ভাঙা হিন্দিতেও সবাই স্বচ্ছন্দ্য নন। এদিকে লকটাউনের পরে যখন বিদেশি পর্যটক আসতেই পারছেন না, তখনও সুন্দরবনে পর্যটক বছরে ২ লক্ষ ছাড়িয়েছে ভিন্রাজ্যের উৎসাহীদের জন্য। তাই সবার কথা ভেবেই গাইডদের ইংরেজিতে সড়গড় হওয়ার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হচ্ছিল সুন্দরবনে।
২০১৩ সাল থেকে সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্প স্থানীয় ছেলেমেয়েদের কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ দিয়ে গাইডের স্বীকৃতি দিয়েছে। কিন্তু ভাষার প্রশিক্ষণ কে দেবে? সমস্যার জায়গাটি অনুভব করে সোসাইটি ফর হেরিটেজ অ্যান্ড ইকোলজিক্যাল রিসার্চ (শের) সম্প্রতি এ ব্যাপারে বিশেষ প্রশিক্ষণ চালু করতে উদ্যোগী হয়। তাদের পাশে দাঁড়ায় রাজ্য সরকার এবং কলকাতার মার্কিন দূতাবাস। ব্যাঘ্র প্রকল্পের স্বীকৃত ৬৫ গাইডের মধ্যে ৩৬ জনকে নিয়ে প্রথম দফার প্রশিক্ষণের আয়োজন হয় গত মে মাসে।
সুন্দরবন ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা অজয় কুমার দাসের কথায়, ‘ম্যানগ্রোভের জঙ্গলে বাঘ সংরক্ষণ এখানে ছাড়া কোথাও নেই। এখানেই মেলে ৬৫ প্রজাতির ম্যানগ্রোভ, যা কলকাতাকেও রক্ষা করছে। সবাই বাঘ দেখতে জঙ্গলে আসে। কিন্তু বাঘ ছাড়াও এখানকার জীব ও উদ্ভিদের বৈচিত্র্য প্রচুর। সেটাই আমরা গাইডদের মাধ্যমে তুলে ধরতে চাই।’
শের-এর সাধারণ সম্পাদক জয়দেব কুন্ডু বলেন, ‘মার্কিন দূতাবাসের ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ উইং রয়েছে। বনের গাইডদের স্পোকেন ইংলিশ সেখানোর কথা বলতে ওঁরা রাজি হয়ে যান। বিশেষ করে চালু শব্দ কী ভাবে বেছে বলতে হবে, সেটায় গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। পেশাদারি আদবকায়দাও হাতেকলমে শেখানো হয়েছে। গাইডরা সকলেই সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। তাই তাঁদের কাছে যে তথ্যভাণ্ডার রয়েছে, সেটা পর্যটকদের দারুণ ভাবে আকৃষ্ট করবে।’