পার্থসারথি সেনগুপ্ত
জ্বর বা ডায়েরিয়ার মতো মামুলি কিছু সমস্যায় প্যারাসিটামল বা ওআরএস দিতে পারেন গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবক বা চলতি কথায় কোয়াকরা দিতে পারেন। তার বেশি কিছু নয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের নজরে এসেছে, এই কোয়াকদের অনেকেই কোনও প্রথাগত শিক্ষা ছাড়া নানা রোগের চিকিৎসা করছেন। এমনকী নামের পাশে ভুয়ো ডিগ্রি-ডিপ্লোমা পর্যন্ত বসাচ্ছেন। গ্রামীণ স্বাস্থ্যে এমন সিঁদুরে মেঘ দেখেই কোয়াকদের জন্য ‘জনস্বাস্থ্য সহায়ক পুস্তিকা’ প্রকাশ করেছে সরকার।

Rishi Sunak : ব্রিটেনে ডাক্তারি: ‘অচ্ছে’ সুযোগ ভারতীয়দের
দুশো সাঁইত্রিশ পাতার এই পুস্তিকায় কোয়াকদের উদ্দেশ করে স্পষ্ট বলা হয়েছে, ‘নিজেকে ডাক্তার ভেবে রোগীর বিপদ ডেকে না আনাই ভালো।’ নির্দিষ্ট পথে ডাক্তারি শিখতে হয় মনে করিয়ে বলা হয়েছে, ডাক্তার আর কোয়াকদের মধ্যে যে লক্ষ্মণরেখা রয়েছে, তা অতিক্রম করা অতীব বিপজ্জনক। গ্রামীণ স্বাস্থ্য পরিষেবকরা সহায়ক হিসেবে কোন কোন ক্ষেত্রে কাজ করবেন, তারও দিশা দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য, পুষ্টি, নারীর জননতন্ত্র, টিকাকরণ, উচ্চ রক্তচাপ, কোভিড, সর্পদংশন, টিকাকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে তাঁরা সহায়কের কাজ করবেন।

West Bengal Health News : রাজ্যের স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে চালু অভিনব ব্যবস্থা, বড় সমস্যা মিটছে রোগীদের!
বইটির ভূমিকার সূচনায় বলা হয়েছে, ‘এটা কিন্তু ডাক্তারি শেখার বই বা তথা সহযোগী পাঠক্রম নয়। বড় সমস্যা হবে যাঁরা এটা পড়বেন, তাঁরা নিজেদের ডাক্তার ভেবে যদি অসীম উল্লাসে এর অনিয়ন্ত্রিত প্রয়োগ করতে শুরু করেন।’ ভূমিকায় এ-ও লেখা হয়েছে, ‘আমি বেসুরো গান গাওয়ার মতো স্টেথোস্কোপ গলায় ঝুলিয়ে গান গাইতে গাইতে মানুষের দরজায় গিয়ে নিজেকে শিল্পী বলে জাহির করলাম- এই রকম পদ্ধতিতে ডাক্তারি হয় না। অসুখ গন্ধ শিখে বোঝা যায় না। যা শিখতে হয় কয়েক বছর ধরে।’

Bank Account Rules: আপনারও একের বেশি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট রয়েছে! জানুন RBI-এর নিয়ম কী বলছে?
কোয়াকদের একাংশের অনিয়ন্ত্রিত, অবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে কেমন গুরুতর বিপদ লুকিয়ে রয়েছে, তা-ও বুঝিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। যেমন, ওধুধের অপপ্রয়োগ। বইতে বলা হয়েছে যে, ওষুধ হচ্ছে ‘রাসায়নিক তরকারি’। তার ক্ষমতা-অক্ষমতা-অপপ্রয়োগে কী ঘটতে পারে, তার ডাক্তারি শাস্ত্রে নির্দিষ্ট রয়েছে। অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে প্রেসক্রিপশন করতে হয়। বলা হয়েছে, ‘ঢিল মেরে আম পাড়া বা ফুটবলে কিক মেরে তিনকাঠির মধ্যে রাখা গোছের শিল্পকর্ম এটি নয়!’

Bengal Panchayat Polls : প্রয়োজনে ছুটি বাতিল স্বাস্থ্যে, সতর্ক সরকার
এই বিষয়ে তৃণমূল সমর্থিত ‘প্রোগ্রেসিভ রুরাল মেডিক্যাল প্রাকটিশনার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসেসিয়েশনের’ রাজ্য সভাপতি মনোজ চক্রবর্তীর কথায়, ‘রাজ্যে নথিভুক্ত পাশ করা চিকিৎসকের সংখ্যা ৭০ হাজার আর কোয়াকদের সংখ্যা প্রায় তিন লাখ। গ্রামে ডাক্তারবাবুরা যান না বলেই গ্রামীণ পরিষেবকরাই ভরসা।’ রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা সিদ্ধার্থ নিয়োগীর মতে, ‘ভুয়ো ডাক্তারের সমস্যা একবারে মিটবে না। আমরা সচেতনতা প্রসারের চেষ্টা চালাচ্ছি।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version