বিশ্বজিত্ মিত্র: নির্বাচনে পরাজিত হয়ে মানসিক অবসাদে কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হলেন সিপিআইএম প্রার্থী। এমনটাই দাবি পরিবারের। নদিয়ার শান্তিপুর ব্লকের বেলঘড়িয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১ নং নতুন ফুলিয়ার ঘটনা। মৃত সিপিআইএম প্রার্থীর নাম অরবিন্দ প্রামাণিক। বয়স ৬১। স্কুলে শিক্ষকতা পেশা ছেড়ে দিয়ে সিপিআইএম দলের ফুলিয়া শাখার একজন রাজনীতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন।
আরও পড়ুন–মুখ্যমন্ত্রীর চিন্তা তাঁর বেকার ভাইপো কীভাবে দাঁড়াবে, তাই বেঙ্গালুরু যাত্রা: সুকান্ত
বেলঘড়িয়া ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ২ বারের গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য এবং একবার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। প্রধান হিসেবেও একবার দল থেকে তাঁকে মনোনীত করেন। এবারের নির্বাচনে বেলগড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে গ্রাম সভায় তিনি সিপিআইএমের প্রার্থী হন। তার ছেলে দয়াল প্রামাণিক এবারে সিপিআইএম পঞ্চায়েত সমিতির প্রার্থী ছিলেন। এবার গ্রাম পঞ্চায়েতে ভোটে ভোট পান মাত্র ১০২টি। তৃণমূল কংগ্রেসের চন্দন সরকার নির্বাচনে জয়লাভ করেন।
পরিবারের দাবি, ভোটের ফল প্রকাশের পরদিন অর্থাত্ ১২ তারিখ সকালে বাড়ির কাছে রেল লাইনের ধারে কালভার্টের ওপর তিনি কীটনাশক খান। অসুস্থ অবস্থায় তাকে প্রথমে ফুলিয়া প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, সেখান থেকে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল। এবং অবস্থার অবনতি হলে ১৩ তারিখ রাতে কল্যাণী জহরলাল নেহেরু মেমোরিয়াল হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। সেখানে ১৪ তারিখ তিনি মারা যান। তার মৃত্যুতে জয়ী তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী চন্দন সরকার বলেন, যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। তবে আমি তাকে নির্বাচনী লড়াইয়ে হারাতে চেয়েছিলাম। এইভাবে তিনি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন ভাববে কষ্ট হচ্ছে।
অন্যদিকে, সিপিআইএম ফুলিয়া এরিয়া কমিটির সম্পাদক অনুপ ঘোষ বলেন, অরবিন্দ প্রামাণিকের বাড়িতে আর্থিক সমস্যা চলছিল। ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। পাশাপাশি নির্বাচনের পরাজয়টা তিনি মেনে নিতে পারেননি। তাই মানসিক অবসাদে আত্মঘাতী হয়েছেন। এতে আমরা মর্মাহত।
মৃতের ছেলে দয়াল প্রামাণিক বলেন, যেটা এখন বুঝতে পারছি ভোটে হেরে গিয়ে বাবা ডিপ্রেশনে চলে গিয়েছিলেন। গত ২ বারের পঞ্চায়েত সদস্য। তার পরে এই হেরে যাওয়াটা মেনে নিতে পারেননি। একবার পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য ছিলেন। একবার পঞ্চায়েত প্রধান। ২০১৮ সালেও জয়ী প্রার্থী ছিলেন। প্রতিবার ভোটের ফলের দিন বাবা মাঠে গিয়ে বসে থাকেন বা বাড়িতে বসে টিভি দেখেন। এবার বাবা মাত্র ১০২টি ভোট পেয়েছেন। এটা একেবারেই মেনে নিতে পারেননি বাবা। উনি বারবারই বলছিলেন এটা হতে পারে না। ফুলিয়াতে এবার গণনার সময় ৩ ঘণ্টা গণনা বন্ধ ছিল। একটা ঝামেলা হয়েছিল। ভেতরে কী হয়েছিল জানি না। শুনেছিলাম সেন্ট্রাল ফোর্স তুলে নিয়েছিল। কাউন্টিং অফিসাররা বেরিয়ে এসেছিলেন। তাদের দাবি ছিল সেন্চ্রাল ফোর্স ছাড়া কাউন্ট করব না। তখনই কোনও কিছু হতে পারে। কাকে দায়ী করব বুঝতে পারছি না। তবে ওই ঝামেলাটার জন্যই বাবার হার হয়েছে। আমি সকালে কাউন্টিং শেষের পর বাড়ি ফিরলাম। বাবা হেরে গিয়েছে জানতো। আমি বাড়ি এসে শুয়ে পড়েছিলাম। সকালে আমাকে সবাই ঘুম থেকে তুলে বলল বাবা মারা গিয়েছে। ঘাস মারা পয়জন খেয়েছিলেন উনি।