শয্যাশায়ী মাকে বাড়িতে রেখেই নজির ছেলের। ব্রহ্মা ১ জয় হুগলির চুঁচুড়া বাসিন্দা দেবাশিস মজুমদারের। তাঁর সাফল্যে হুগলির পাশাপাশি গর্বিত গোটা বাংলা। দেবাশিসের এই সাফল্যে এখন খুশির হাওয়া চুঁচুড়ার পিপুলপাতি এলাকায়। দেবাশিসের জীবন সংগ্রামের কাহিনী যেন অনেকের কাছে অনুপ্রেরণা। জীবনে একের পর প্রতিকুলতার মুখোমুখি হয়েও দাঁতে দাঁত চেপে যে লড়াই চালিয়ে যাওয়া সম্ভব, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ এই ব্যক্তি।

২০০০ সালে বাবা মারা যাবার পর মামা রতন কুমার সাহার কাছে মানুষ হয়েছে বাঙালি এই পর্বত আরোহী। বৃদ্ধা মা রীনা মজুমদার দীর্ঘদিন ধরেই অসুস্থ, একবার হৃদরোগে আক্রান্তও হয়েছেন। বিছানায় শয্যাশায়ী মাকে রেখে ব্রহ্ম ১ জয়ের স্বপ্ন নিয়ে গত ৩০ জুন বাড়ি থেকে বের হন দেবাশিস ও তাঁর দল। অবশেষে স্বপ্নপূরণ হয়েছে তাঁরা।

Brammah 1 Peak Mountaineering: অসাধ্য সাধন বাঙালির! প্রথম ভারতীয় হিসাবে ব্রহ্মা ১ শৃঙ্গ জয় সোনারপুরের ৯ যুবকের
বাবার মৃত্যুর পর ছোট থেকে মামার কাছে মানুষ দেবাশিস। বৈদ্যবাটি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু সাংসারিক চাপে স্নাতক হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয়নি তাঁর। সংসার সামলানোর জন্য অল্প বয়েসে পড়াশোনায় ইতি টানতে হয়েছিল। তবু শৃঙ্গ জয়ের স্বপ্ন দেখা তিনি ছাড়েননি। ব্রহ্ম জয়ের স্বপ্ন তাঁকে তাড়া করে বেড়াত। সামান্য একটি বিস্কুটের কারখানা চালিয়ে স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে এক ধাপ করে এগিয়েছেন দেবাশিস। অ্যাথলেটিক হিসেবেও এলাকায় সুখ্যাতি রয়েছে তাঁর। চুঁচুড়া লালদিঘিতে বেশ কয়েকজনকে সাঁতারও শেখান তিনি।

English Channel Swim : ঢেউয়ের বুকে নয়া ইতিহাস, ইংলিশ চ্যানেল টু ওয়ে পারাপার হাওড়ার রিমোর
দীর্ঘ ৪৪ বছরের খরা কাটিয়ে অবশেষে সাফল্য। গত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ দেবাশিস ও তাঁর দল জয় করে ৬৪১৬ মিটার উচ্চতার ব্রহ্ম ১ পর্বতশৃঙ্গ। খারাপ আবহাওয়ার কারণে প্রথমে শৃঙ্গ জয়ের চেষ্টা করেও সাফল্য মেলেনি। শৃঙ্গ খুঁজে না পেয়ে ১০৬ মিটার দূর থেকে ফিরতে হয়েছিল তাঁদের। আবহাওয়া অনুকূল না থাকায় গত রবিবার দুর্ঘটনারও কবলে পড়তে হয়। সোমবার ফের শুরু হয় যাত্রা। তিনজন বেস ক্যাম্পে থাকলেও পাঁচ জন শেরপাকে নিয়ে বাকি ৯ জন ব্রহ্ম ১ শৃঙ্গের শীর্ষে পৌঁছন।

এর আগে ২০২২ সালে দেওটিব্বা ও ইন্দ্রাসন দুটি পর্বত শৃঙ্গ জয় করেছেন দেবাশিস। সোনারপুর আরোহীর দলের ১২ জন সদস্য মিলে ব্রহ্মা ১ শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে বের হয়েছিলেন। দলে দুই এভারেস্ট জয়ীও ছিলেন। দেবাশিসের এই শৃঙ্গজয়ের সাফল্যে সকলেই উচ্ছ্বসিত। শয্যায় শুয়েই ছেলের সাফল্যে খুশি দেবাশিসের মাও।

Mountain Expedition In India : ৪৩ বছর পর পাহাড় চূড়ায় লেখা হল ইতিহাস, ব্রহ্মা পর্বত জয় সত্যরূপ সিদ্ধান্তের
দেবাশীষের মামা রতন সাহা বলেন, ‘পর্বত তাঁর কাছে খুব প্রিয়। যখনই সময় পায় শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে বেরিয়ে পড়ে। যখন শুনতে পাই ১৩০ মিটার দূর থেকে তাদের ফিরতে হয়েছে, তখন প্রচণ্ড দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তবে পাহাড় দেবাশিসদের জেদের কাছে হার মেনেছে। শেষমেষ শৃঙ্গ জয় করতে পেরেছে। দেবাশিসের এভারেস্ট জয় করার ইচ্ছে রয়েছে। কিন্তু তাঁর জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। জানি না, সেই টাকা কোথা থেকে আসবে। সরকারি সাহায্য পেলে সুবিধা হয়।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version