দিন দিন জটিলতা বাড়ছে কলকাতায় অবস্থিত বালুরঘাট ভবন সংস্কারের ক্ষেত্রে। আগেই বালুরঘাট ভবন সংস্কার নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সরব হয়েছিল বিরোধীরা৷ এবার টেন্ডার প্রক্রিয়ায় দুজনকে আগেই যে কারণ দেখিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে তা সঠিক নয় বলে পুরসভাকে জানিয়ে জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা। এমনকি টেন্ডার প্রক্রিয়ায় কিছু অনিয়ম আছে বলে জেলা শাসকের নজরে আসতেই, পুরসভাকে ভুল শুধরে নেওয়ার পরামর্শ দিলেন জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা।

দীর্ঘদিন ধরে সংস্কারের অভাবে ধুকছিল কলকাতায় অবস্থিত পুরসভার বালুরঘাট ভবন। রাজধানীতে থাকা ওই ভবনের খোল নলচে বদলে একেবারে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে বর্তমান পুর বোর্ড। ইতিমধ্যে এই সংস্কারের কাজে প্রায় ৯২ লাখ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। ঠিকাদার সংস্থাকে ওই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু যোগ্য ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে বাতিল করে, তুলনায় কম যোগ্য ঠিকাদার সংস্থাকে ওই কাজ পাইয়ে দেবার অন্যায় চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছিল ঠিকাদার সংস্থাগুলি। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে এই জেলাশাসক একটা তদন্ত কমিটি করে তদন্ত শুরু করেছিলেন। ওই তদন্তের রিপোর্ট এই কিছু অনিয়ম ধরা পড়েছে বলে জেলাশাসক ওই ভুলগুলি শুধরে নেবার পরামর্শ পুরসভাকে দিয়েছেন। এতে যেমন ওই ঠিকাদার সংস্থাগুলি খুশি, তেমনি পুরসভার এমন ভূমিকায় অবাক শহরবাসী।

Purba Medinipur : ২ মাস ধরে থমকে পড়ে ভাঙা সেতুর কাজ, পুনর্নির্মাণ দাবিতে সোচ্চার এলাকাবাসী

প্রসঙ্গত, প্রান্তিক দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার মানুষরা কোন প্রয়োজনে বিশেষত চিকিৎসার প্রয়োজনে কলকাতায় গেলে তাদের থাকার জন্যে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে রয়েছে জেলা পরিষদ ভবন। আবার বালুরঘাট পুরসভার পক্ষ থেকে সল্টলেকে ও রাজারহাটে দুটি ভবন তৈরি করা রয়েছে। রাজারহাটের দ্বিতীয় বালুরঘাট ভবনটি এখনো চালু না হলেও, সল্টলেকের বালুরঘাট ভবনটি দীর্ঘদিন ধরে বালুরঘাট শহরবাসীর চাহিদা পূরণ করে আসছে। বালুরঘাটবাসী কোলকাতায় গেলে এই ভবনেই আশ্রয় নিয়ে থাকে। কলকাতায় অবস্থিত বালুরঘাট ভবনে ঘরের সংখ্যা ২৩টি, যার মধ্যে ২টি ঘর সংরক্ষিত। কিন্তু বাম আমলে তৈরি হওয়া এই ভবনটির বর্তমান বেহাল অবস্থা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ ছিল সাধারণ মানুষের মধ্যে। পরিষেবা প্রায় তলানিতে থেকে ছিল এই আবাসনে।

Malda News : নব কলেবরে সাজবে স্টেশন, দায়িত্ব গ্রহণের পরই পরিদর্শনে কাটিহার ডিভিশনের DRM

দরজা, জানালা, বাথরুম জলের ব্যবস্থা ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরাসরি অভিযোগ ছিল বাসিন্দাদের। এর মধ্যে ২০২২ সালে দায়িত্ব নেওয়া তৃণমূল বোর্ড দীর্ঘ বছর পরে ঘর ভাড়া বাড়িয়ে দিয়ে দেয়। এতে আরও ক্ষোভ বাড়ে জন মানসে। এবার তাই ওই বালুরঘাট ভবন একেবারে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে বালুরঘাট পুরকর্তৃপক্ষ।

জানা গিয়েছে, ওই ভবনের সমস্ত প্লাস্টার চটিয়ে নতুন ভাবে প্লাস্টার করান, রং করানো, দরজা, জানলা বদলে ফেলা, পর্দা ইত্যাদি বদলে ফেলা সহ সেখানে একটি ক্যান্টিন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে পুরসভার। এছাড়াও যে ২৩ টি ঘর রয়েছে সবগুলিতেই এসি যুক্ত করা হচ্ছে। এই ভবনের হাল বদলে গেলে বালুরঘাটের মানুষের কলকাতায় থাকা কিছুটা সহজ হয়ে যাবে বলে মনে করেন পুর প্রধান অশোক মিত্র। পুরসভা এই কাজের জন্য প্রায় ৯২ লাথ টাকা বরাদ্দ করে বা করে টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু করেছিল।

Hooghly News: ছাদ থেকে ঝুলছে চাঙড়-ভাঙা জানলা দরজা! বটের ঝুড়িতে ঢাকা ‘ভূতের বাড়ি’ ছেড়ে ঠিকানা বদল কোন্নগরের দমকলের

পুরসভার সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কাজ পেতে প্রায় সাতটি ঠিকাদার সংস্থা টেন্ডারে অংশ নিয়েছিল। কিন্তু চারজনকে টেকনিক্যাল কারণ দেখিয়ে তাদের বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। পরে তিনটি ঠিকাদার সংস্থার মধ্যে একজনের ওই বরাত মেলে। আর এই বাতিল হওয়ার ঠিকাদার সংস্থাগুলি আইনজীবীর মাধ্যমে জেলা শাসক, চেয়ারম্যান সহ নানা জায়গায় অভিযোগ জানান।

এবিষয়ে অভিযোগকারীর আইনজীবী প্রসুন চৌধুরী বলেন, এক সংস্থাকে কাজ পাইয়ে দেবার চেষ্টা করতে, অন্যায় ভাবে যোগ্য ঠিকাদার সংস্থাগুলিকে বাদ দেওয়া হয়েছে। আমরা তথ্য সহযোগে ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করাতে, জেলাশাসক সহ বিভিন্ন জায়গায় অভিযোগ জানিয়েছি। এখনো প্রশাসনের কাছ থেকে কোন উত্তর পাইনি। আগামীতে আমরা আদালতের দ্বারস্থ হব।

Kanyashree Scheme: কন্যাশ্রী-রূপশ্রীর টাকা নিয়ে জালিয়াতি, অভিযোগ জানিয়ে চাকরিহারা প্রধান শিক্ষকই

এনিয়ে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক বাপি সরকার বলেন, বর্তমান পুরসভা বিভিন্ন দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত। কোন ক্ষেত্রেই কোন কিছু মানা হয় না। কে বেশি টাকা দেবে তাকেই টেন্ডার দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে দীর্ঘদিন ধরেই সরব বিজেপি। এবিষয়ে তৃণমূল জেলা সহ-সভাপতি সুভাষ চাকি বলেন, ‘টাকার পরিমাণটা বেশি। তাই হয়তো এই সব কথা উঠছে৷ যে অভিযোগ তোলা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।’

এবিষয়ে জেলা শাসক বিজিন কৃষ্ণা বলেন, আমাদের কাছে ওই টেন্ডার প্রক্রিয়া সংক্রান্ত একটি অভিযোগ এসেছিল। আমরা তা খতিয়ে দেখেছি। তাতে কিছু ভুল ত্রুটি রয়েছে, সেগুলো শুধরে নেওয়ার পরামর্শ পুরসভাকে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুরপ্রধান অশোক মিত্র বলেন, সমস্ত নিয়ম মেনে বালুরঘাট ভবন সংস্কারের কাজ করা হবে। টেন্ডার প্রক্রিয়া এখনও চলছে। জেলা শাসকের তরফে একটি চিঠি পেয়েছি, তবে এখনও তা দেখা হয়নি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version