এই সময়: তিনি যেন খোলা বাজারে চাকরির সেলসম্যান, টার্গেট পূরণ করতে টাকার বিনিময়ে দু’হাতে ‘বিক্রি’ করেছেন শিক্ষকতার চাকরি!
পুকুরে ফেলে দেওয়ার মোবাইলের সূত্র ধরে মুর্শিদাবাদের বড়ঞার বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহার বিরুদ্ধে এমনই গুরুতর অভিযোগের প্রমাণ উঠে এল নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইয়ের হাতে। আদালতে কেন্দ্রীয় সংস্থার জমা দেওয়া নথির মধ্যে রয়েছে জীবনের ফেলে দেওয়া মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটও। সেই কথোপকথন ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ১০, ১২ থেকে শুরু করে ১৮ লাখেও শিক্ষা দপ্তরে চাকরি ‘বেচেছেন’ জেলবন্দি বিধায়ক।

Murshidabad News : সাহায্যের লোভ দেখিয়ে ভিক্ষুককে লুঠ! ভিক্ষা করতে এসে দুল চুরি গেল মহিলার
টাকা নিয়ে যখন আবার কাউকে চাকরি দিতে পারেননি তিনি, তখন সেই চাকরীপ্রার্থীকেই পুলিশ কেসে ফাঁসিয়ে দেওয়ার পাল্টা হুমকিও দিয়েছেন। এখানেই শেষ নয়, বিধায়কের পাশে দাঁড়িয়ে এই ব্যবসায় মদত জুগিয়েছেন স্থানীয় পুলিশকর্মীদের একাংশ। জল থেকে উদ্ধার করা ২টি মোবাইলের হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট হিস্ট্রির সূত্রে তাঁর এই কীর্তিকলাপের যাবতীয় তথ্য ভবিষ্যতে যে জীবনকৃষ্ণের সমস্যা আরও বাড়ালো তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই আইনজীবী মহলের।

মাস চারেক আগে তাঁর বাড়িতে সিবিআই পৌঁছনোর পরে জীবনকৃষ্ণ সাহা পাঁচিল টপকে নিজের ২টি মোবাইল পুকুরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। সে সময়ে প্রশ্ন উঠেছিল, ফোনে এমন কী রয়েছে যে, মোবাইল জলে ফেলে দিতে হলো? সেই রহস্যের কিনারা করতে তিনদিন ধরে ‘পুকুরমন্থন’ করে উদ্ধার হওয়া মোবাইলগুলি পাঠানো হয়েছিল কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে। তদন্তকারীদের সেই প্রচেষ্টা যে একেবারে বিফলে যায়নি, তা এ বার স্পষ্ট হলো সেই মোবাইলের চ্যাট হিস্ট্রির সৌজন্যে।

নবম-দশমের নিয়োগ মামলায় জীবনকৃষ্ণের নাম চার্জশিটে থাকলেও সেই তদন্ত এখনও শেষ হয়নি। যাঁরা টাকা দিয়ে চাকরি পেয়েছেন, এবার তাঁদেরও গ্রেপ্তার করা শুরু করেছে সিবিআই। ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা জীবনকৃষ্ণের মোবাইলের তথ্য ঘেঁটে জানতে পেরেছেন বিধায়ককে অনেকেই টাকা ফেরতের জন্য ফোন এবং হোয়াটসঅ্যাপ করেছিলেন। কাউকে তিনি চমকে, আবার কাউকে ধমকে চুপ করিয়ে রাখার টেকনিকও বিধায়ক নিয়েছিলেন বলে কেন্দ্রীয় সংস্থার অভিযোগ।

Teacher Arrested: টাকা দিয়ে কেনা চাকরি! নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ৪ শিক্ষককে গ্রেফতার
আবার যাঁরা বেশি প্রশ্ন করেছিলেন, তাঁদের পুলিশের ভয়ও দেখানো হয়েছিল। যেমন, এক চাকরী প্রার্থী জীবনকে হোয়াটসঅ্যাপে লেখেন, ‘কেমন আছেন, শুভ বিজয়া। পুজোর মধ্যে টাকা ফেরত দেবেন বলেছিলেন, তা এ বার কি পাওয়া যাবে?’ এর উত্তরে জীবনের প্রতিক্রিয়া, ‘দ্বাদশীর পরে বলেছিলাম। তোমার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দাও, আমি ট্রান্সফার করে দেব।’ এরপর ওই ব্যক্তি জানতে চান, ‘আপনি আমাকে ব্যাঙ্কে দেবেন?’ জবাবে জীবন লেখেন, ‘তোমার জন্য আমাকে লোন করতে হয়েছে। আপাতত ছয় দেব (৬ লক্ষ)। পরে বাকিটা দেব। জায়গা বিক্রি হচ্ছে, একবারে আমি পারব না। আমি এক কথার মানুষ।’

Madan Mitra : ‘CPIM করে আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে…’, ৪ শিক্ষকের গ্রেফতারি নিয়ে মুখ খুললেন মদন
গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছেন, তৃণমূল বিধায়ক মোট কতজনের থেকে এমনভাবে চাকরির জন্য টাকা নিয়েছিলেন যে, তাঁকে জমি বিক্রির কথা বলতে হচ্ছে। না কি টাকা ফেরত চাওয়ায় তাঁদের ঠকানোর চেষ্টা করছিলেন তিনি। কারণ, চাকরিপ্রার্থী ওই ব্যক্তি ফের প্রশ্ন করতেই রেগে গিয়েছিলেন জীবনকৃষ্ণ। বিরক্ত হয়ে তাঁকে লিখেছিলেন, ‘তোমার অ্যামাউন্টটা বড় নয়। একজন ১৭ পাবে, তাঁকে ৭ দিচ্ছি। বেশি খিটিমিটি করলে দেব না। যা পারবে তাই করো।’ তবে এখানেই তিনি থেমে যাননি।

Suvendu Adhikari : ‘উনি চান না বাংলায় চাকরি হোক…’, রাজ্যে কর্মসংস্থান নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে খোঁচা শুভেন্দুর
তাঁর হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট হিস্ট্রি বলছে, জীবন ওই ব্যক্তিকে শাসানোর সুরে লেখেন, ‘আমি পুলিশকে বিষয়টি জানিয়ে রেখেছিলাম। পুলিশ আমাকে বলেছে, আপনি তো নিজে নিতে জাননি। আপনাকে বাড়িতে এসে টাকা দিয়ে গিয়েছে ওঁরা। তা হলে আপনি চুপ করে বসে থাকুন। বেশি কিছু করলে, আমি এফআইআর করে দেব।’ এই বিষয়টিও নজরে এসেছে সিবিআইয়ের। এ ক্ষেত্রেও জীবন পুলিশকে ঢাল করেছিলেন কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা। সিবিআই সূত্রে খবর, ধৃত বিধায়ক শুধু মুর্শিদাবাদ থেকেই নয়, পশ্চিম বর্ধমান, বীরভূমের অযোগ্য প্রার্থীদের থেকে টাকা নিয়েছেন বলে চ্যাটে উল্লেখ পাওয়া গিয়েছে। ফলে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version