ঠিক কী বলেছিলেন সেলিম? মেদিনীপুরে দলীয় কর্মসূচির শেষে ইডি’কে নিয়ে অভিষেকের টুইট প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সেলিম দাবি করেন, টাকা পাচারের জন্যে বারবণিতাদের অ্যাকাউন্ট ভাড়া করা হয়েছে। বিদেশে ‘পতিতাদের’ অ্যাকাউন্টে টাকা পাচার করা হয়েছে। সেলিমের মুখে এই পতিতা-বারবণিতা শব্দ বিতর্ক তৈরি করে। সিপিএমের বিভিন্ন মতাদর্শগত দলিলে যৌনকর্মী শব্দই ব্যবহৃত হয়। ২০০৫ সালে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি ‘পার্টি’স পারসপেক্টিভ অন উমেন ইস্যু অ্যান্ড টাস্ক’ শীর্ষক দলিলে দেশে-বিদেশে পুঁজিবাদী সমাজে উদার অর্থনীতির যুগে নারীরা কী ভাবে শোষিত হচ্ছেন, তার বিশদ ব্যাখ্যা করে দলের আশু কর্মসূচি ঠিক করা হয়েছিল।
যৌন পেশাকে আইনি বৈধতা দেওয়া নিয়ে বিতর্কে ২০১৪-র ১৪ ডিসেম্বর সিপিএমের মুখপত্র ‘পিপলস ডেমোক্র্যাসি’-তে দলের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়। ওই নিবন্ধে যৌনকর্মীকে ক্যাপিটালিস্ট সমাজের সার্বিক শ্রমশক্তির অংশ হিসেবেই চিহ্নিত করা হয়। ওই নিবদ্ধে প্রস্টিটিউট শব্দ কোটেশনে রেখে যৌনকর্মীদের চিহ্নিত করতে বার বার ওয়ার্কার বা লেবার শব্দই ব্যবহার করা হয়েছিল। সেখানে কী ভাবে সেলিম ‘প্রস্টিটিউট’ শব্দ ব্যবহার করলেন–তা নিয়ে বিস্মিত সিপিএমের অনেক নেতা-কর্মী। সামাজিক মাধ্যমেও সেলিমের সমালোচনা হয়েছে।
পতিতা বা বারবণিতা শব্দ যে অবজ্ঞাসূচক ও অপমানজনক, তা খোলাখুলিই বলছেন ভাষাবিদ পবিত্র সরকার। প্রবীণ এই শিক্ষাবিদের কথায়, ‘বারবণিতা, পতিতা, বেশ্যা-সহ অজস্র সমার্থক শব্দ রয়েছে। কিন্তু এই শব্দগুলি ডেরোগেটরি। এই পেশায় কেউ স্বেচ্ছায় যান না। সমাজ এই পেশা তৈরি করেছে। নারীবাদী দর্শন তৈরি হওয়ার আগেই এই শব্দগুলি নিয়ে আপত্তি উঠেছে।
তাই যৌনকর্মী অথবা সেক্স ওয়ার্কার বলা হয়। পতিতা, বারবণিতা বলা অনুচিত।’ সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য তথা সিটু’র সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তপন সেনের কথায়, ‘প্রস্টিটিউট অথবা পতিতা–এগুলি ডেরোগেটরি শব্দ। যৌনকর্মীরা শ্রমজীবী সমাজের অংশ, তাঁরা এই পেশায় যেতে বাধ্য হন। পুঁজিবাদী সমাজ এঁদের উপরে শোষণ চালায়। তাই আমাদের ভোকাবুলারিতে এ সব শব্দ নেই। সেলিম হয়তো বলে ফেলেছেন। তবে যৌনকর্মীদের হেয় করতে বলেছেন বলে মনে হয় না।’
মহিলা সমিতির সভানেত্রী কনীনিকা ঘোষের সংক্ষিপ্ত মন্তব্য, ‘আমরা প্রস্টিটিউট বলি না, যৌনকর্মীই বলি।’ খানিক অন্য সুরে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যের অবশ্য বক্তব্য, ‘যে মাত্রার দুর্নীতিতে, অপরাধে তৃণমূল জড়িত, সেখান থেকে নজর ঘোরাতে এই বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। এতে তৃণমূলের অপরাধ ঢাকা যায় না।’ এই বিতর্কে সেলিমকে বিঁধেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তাঁর কটাক্ষ, ‘উনি মাফিয়া, ডন, পতিতা এই সব কথা বলেছেন। বুঝতে হবে এই সংস্কৃতির সঙ্গে উনি পরিচিত। তাই ওঁর টুইটেও এই শব্দ চলে এসেছে।’