অরিজিৎ দে | এই সময় ডিজিটাল এক্সক্লিউসিভ

যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে উথাল-পাতাল রাজ্য। বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের পড়ুয়া স্বপ্নদীপ কুণ্ডুর রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় ক্রমেই জোরাল হচ্ছে ‘র‌্যাগিং তত্ত্ব’। পুলিশি তদন্ত চলছে জোরকদমে। জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়েছেন একাধিক পড়ুয়া, প্রাক্তনী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকরা। বিস্তর জলঘোলার মধ্যেই অবশেষে এই ঘটনা নিয়ে ‘মৌনতা’ ভাঙলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল কাফি ওরফে কাফি দা।

JU Student Death: প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুতে র‌্যাগিংই কারণ? যাদবপুরের অধ্যাপকের পোস্টে চাঞ্চল্য
স্বপ্নদীপের ‘মৃত্যু বিপর্যয়’ কাটিয়ে ওঠা এখনও সম্ভব হয়নি, সম্ভবও নয়। এই সময় ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময় কাফিদার গলায় আগাগোড়াই ছিল আক্ষেপ, যন্ত্রণা। র‌্যাগিং নিয়ে শোনা গেল ‘বিষোদগার’। আব্দুল কাফি বলেন, ‘কী বলব জানি না! ভয়াবহ পরিস্থিতি। দীর্ঘদিন ধরেই একটু একটু করে শোনা যেত, লোকে মানিয়ে নিত। কখনও অল্প হয়, কখনও বেশি। কেউ হয়তো মানিয়ে নিত, কেউ বা অল্প প্রতিবাদ করত। এভাবেই হয়তো ছেলেরা বেঁচে গিয়েছে।’

স্বপদীপের ‘পরিণতি’-র কথা উঠতেই এরপরই রীতিমতো কান্নায় ভেঙে পড়েন বাংলা বিভাগের এই অধ্যাপক। তিনি বলেন, ‘এই সামান্য সময়ে আমি স্বপ্নদীপকে ব্যক্তিগতভাবে চিনেছি এমনটা নয়। বহুদিন ধরে হস্টেলে ছোটোখাটো র‌্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটে। আমিসহ আমরা সকলেই জেনেও সেটাকে ‘নর্মালাইজ’ করে দিয়েছি। আমি নিজেও সেটা মেনে নিয়েছিলাম। কিন্ত অতীব সারল্যে এই ছেলেটি সেটা করতে পারল না। আমরা সারল্যটাকে মেরেই ফেললাম।’

Jadavpur University News: যাদবপুরে কীভাবে চলত ‘ব়্যাগিং’? মুখ খুললেন স্বপ্নদীপের সহপাঠী
তিনি আরও বলেন, ‘একদল লোক দাঁড়িয়ে দেখল একটি ছেলে অত্যাচারিত হচ্ছে, কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করল না। ওই অবস্থায় ও কাউকে পাশে পায়নি। আমরা কেউ পারিনি ওঁর পাশে দাঁড়াতে। স্বপ্নদীপ তো আমার সন্তানের মতো, আমার মেয়ের থেকে দু’বছরের বড়ো। এটা আমাকে মেরে ফেলছে ভিতরে ভিতরে, নিজেকে ক্ষমা করতে পারছি না। সুযোগ পেলে হয়তো ওঁর কাছে ক্ষমা চাইতাম।’

র‌্যাগিং কীভাবে বন্ধ করা সম্ভব? কাফিদার কথায়, ‘র‌্যাগিং শাস্তি দিয়ে বন্ধ হয় না। এমনটা হলে অনেকদিন আগেই ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যেত। কাউন্টার র‌্যাগিং করে কোনও সমস্যার সমাধান হয় না। র‌্যাগিং যে করে সে খুনি, এই আদর্শগত প্রচারের জায়গা যদি না থাকে, তাহলে কোনওভাবেই এটা বন্ধ করা যাবে না। যাঁর র‌্যাগিং হয়, সে পরের বছর র‌্যাগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। র‌্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে তৎক্ষণাত আওয়াজ তোলা উচিত, সেটা হজম করতে নেই।’

Jadavpur University News : যাদবপুরের পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুতে গ্রেফতার আরও ২
স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে ‘প্রতিযোগিতা’-য় নেমেছে সব রাজনৈতিক দল। এই ‘সংকীর্ণ’ রাজনীতি মোটেই পচ্ছন্দ নয় ‘বামপন্থী’ কাফিদার। তিনি বলেন, ‘স্বপ্নদীপের মৃত্যু নিয়ে তৃণমূল, বিজেপি, সিপিএম বা কংগ্রেস যাঁরা মাঠে নেমেছেন, তাঁরা ওঁর মৃত্যু নিয়ে নিজেদের রাজনৈতিক বিজ্ঞাপন করছেন। এটা খুবই ঘৃণ্য কাজ। আমি সবাইকে বলব দয়া করে এটা করবেন না। কোনও রাজনৈতিক দলই তাঁদের ক্যাডারদের র‌্যাগিং করতে শেখায় না। র‌্যাগারকে কেউ যদি আড়াল করার চেষ্টা করেন, তাঁদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠুন। কিন্তু এই নিয়ে দয়া করে রাজনীতি করবেন না।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version