সোমনাথ মণ্ডল
সবে সন্ধ্যা হয়েছে। বই-খাতা খুলে জানলার দিকে তাকিয়ে ঠায়ে বসেছিল ক্লাস ফোরের ময়াঙ্ক দাস। হঠাৎ তুলসীমঞ্চের দিকে চোখ যেতেই ঠাকুমাকে ডাক। ‘কোথায় গেলে গো ঠাকুমা? তাড়াতাড়ি এসো। ওটা কী? দেখো একবার।’ হাতের কাজ ফেলে জানলার কাছে চলে আসেন বুলবুল দাস। তিনিও হতবাক হয়ে বিড়বিড় করতে থাকেন, ‘ঠিক দেখছি তো সোনা?’ এর পর নাতিকে বলেন, ‘আঁকার খাতায় শিয়ালের ছবি দেখেছিস তো। ওই দেখ, খেঁকশিয়াল!’

Elephant : রেল ট্রাকে হাতির মৃত্যু রুখতে ভরসা এআই-মেশিন লার্নিংয়ে
ঠাকুমাকে ময়াঙ্কের প্রশ্ন, ‘শিয়াল তো জঙ্গলে থাকে। এখানে কোথা থেকে এল?’ তখন কোনও উত্তর দিতে পারেননি ওই বৃদ্ধা। কয়েকদিনের মধ্যে প্রতিবেশীদেরও একই অভিজ্ঞতা। গৃহবধূ পাপিয়া রায়ের পোষ্য রাতের দিকে হঠাৎ চিৎকার করতে থাকে। বারান্দায় বেরিয়ে এসে পাপিয়া এদিক-ওদিক দেখতে থাকেন। প্রথমে ভাবেন, চোর আসেনি তো? তার পর তিনিও হঠাৎ ওদের দেখে ঘাবড়ে যান। তার পর ভাল করে দেখে নিশ্চিত হন, পাড়ায় ঘুরছে শিয়ালের দল।

Himachal Peak : ওয়েস্ট সিংকুন শৃঙ্গ জয় করে মানালিতে আটকে অভিযাত্রীরা
ঘটনাস্থল পূর্ব বেহালা বিধানসভা এলাকা। সখেরবাজার, সোদপুর বাজার সংলগ্ন মতিলাল গুপ্ত রোড। ওইসব এলাকার লোকজনের গত ৩০ বছরে এমন অভিজ্ঞতা হয়নি।কলকাতা পুরসভার ১২২ ওয়ার্ডে এখন শিয়ালকে নিয়েই শোরগোল স্থানীয় মানুষজনের মধ্যে। তবে সেখানকার পরিবেশকর্মীদের বক্তব্য, ‘শিয়াল তাদের আস্তানা হারিয়ে বিপন্ন। তাই আশ্রয় খুঁজে না পেয়ে কুকুর-বিড়ালের মতো রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে।’ স্থানীয়দের দাবি, চার থেকে পাঁচটি শিয়াল রয়েছে এই এলাকায়। একটি মজে যাওয়া পুকুরের ঝোপঝাড়ে এখন আশ্রয় নিয়েছে তারা। কিন্তু খাবারের খোঁজে বাড়ি বাড়ি ঢুঁ মারছে তারা। রাত ১১টা-১২টা হলে ‘হুক্কা হুয়া’ শব্দ ভেসে আসছে কংক্রিটের জঙ্গলে!

ঘটনার কথা শুনে অবাক কলকাতা আর্বান ফরেস্ট্রি ডিভিশনের (ফরেস্ট রেঞ্জার) অমরেন্দ্র চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘গত কয়েক বছরে বেহালায় শিয়াল দেখতে পাওয়া যাওয়ার ঘটনা আমরা শুনিনি। আমাদের জানানো হলে, রেসকিউ করে জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারি।’ এ বিষয়ে ফিজিওথেরাপিস্ট তাপস দাস বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে বন দপ্তরকে বিষয়টি চিঠি দিয়ে জানিয়েছি। এমনকী ছবিও দিয়েছে। কিন্তু কেউ সে ভাবে উদ্যোগ নেয়নি। আমরা যেমন আতঙ্কিত, তেমনই চাই শিয়লরাও তাদের জগতে ফিরে যাক।’

Bengal Safari Siliguri : বেঙ্গল সাফারিতে আসছে আফ্রিকান সিংহ, গিবন
তবে বেহালায় শিয়ালের ইতিহাসের কথাও শোনা যাচ্ছে। ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা, বন্যপ্রাণ অপরাধ দমনের কেন্দ্রীয় সরকারি আধিকারিক অগ্নি মিত্রের কথায়, ‘১৯৯৭-২০০০ পর্যন্ত ঠাকুরপুকুরে শিয়ালের ডাক শোনাই যেত। কিন্তু তার পর আর শুনিনি।’ সত্তর ছুঁইছুঁই দীপ্তি দাস বিয়ের পরে বেহালা সোদপুরে এসেছিলেন বেশ কয়েক দশক আগে। তাঁর কথায়, ‘আগে এখানে চাষবাস হতো। বাঁশবাগান ছিল। জলা ছিল। তখন আমরা শিয়াল দেখেছি। হুক্কা হুয়া শব্দ প্রায়ই শুনতাম। তবে গত কয়েক বছরে এমন ঘটনার সাক্ষী হইনি।’

ওই এলাকাতেই থাকেন ফারুক হোসেন। তাঁর বাড়ি সামনেই মজে যাওয়া শরিকি পুকুর। তিনি শিয়ালদের গতিবিধি লক্ষ্য করেছেন শুধু নয়। তারা কী ভাবে থাকে, প্রায়ই নজর রাখছেন। তিনি জানান, ‘রাতের বেলায় বাড়ি থেকে বেরোতে কিছুটা হলেও ভয় পাচ্ছি।’ এলাকাবাসীদের বক্তব্য, ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি কোম্পানি বন্ধ কয়েক দশক ধরে। বিরাট এলাকা জঙ্গলের চেহারা নিয়েছিল। সেখানে মানুষ যেতেও ভয় পেত। কিন্তু গত কয়েক বছরে ওই কারখানাগুলি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে। জঙ্গল সাফ হচ্ছে। হতে পারে সেখানেই শি



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version