সম্প্রতি বিস্ফোরণে কেঁপে উঠেছিল উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুর। মোচপোল পশ্চিমপাড়ায় বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের মৃত্যু হয় নয়জনের। বিস্ফোরণের পর গ্রামে খোঁজ নিতেই উঠে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোটা বেআইনির বাজির রমরমা ব্যবসা কন্ট্রোল করত একটা টিম। অর্থাৎ মালিকানায় ছিল একাধিক মাথা। স্থানীয়দের মতে, শামসুল-কেরামতরা ছিল চুনোপুঁটি। বেআইনি বাজি ব্যবসার মাথারা আজও ফেরার।

দত্তপুকুর বিস্ফোরণকাণ্ডে এবার বিহার যোগ। বেআইনি বাজি কারখানা দুই মালিক বিহারের বাসিন্দা বলেই দাবি করছেন কারখানার এক কর্মী। বেরুনানপুকুরিয়ায় অবস্থিত KBM ভাটায় পপ বাজি তৈরি কাজ করতেন গুল্লু (নাম পরিবর্তিত)। পেশায় গাড়িচালক হলেও মাঝেমধ্যেই তিনি ওই বাজি কারখানায় কাজ করতেন। তাঁর বছর নয়েকের মেয়ে ও স্ত্রী ওই কারখানায় নিয়মিত কাজ করত বলেই জানিয়েছেন গুল্লু।

Duttapukur Blast : পলাতক মোহিতই সাম্রাজ্যের বাজিকর, দত্তপুকুরের বাজির ব্যবসার মাস্টারমাইন্ড!
এই সময় ডিজিটালের সঙ্গে কথা বলার সময় একের পর এক চাঞ্চল্যকর দাবি করেন ওই বাজি শ্রমিক। তাঁর দাবি, ওই কারখানায় রমরমিয়ে তৈরি হত পপবাজি। গ্রামের ৫০ জন এই পপবাজি তৈরির কাজে নিযুক্ত ছিলেন, তার মধ্যেই ৩০ জনই শিশু। পড়াশোনার পাশাপাশি ওই শিশুরা বাজি প্যাকেটিংয়ের কাজ করত বলেই জানিয়েছেন গুল্লু। কাঁচা পয়সার লোভ সামলাতে পারতেন না শিশুদের মা-বাবারা। সারা সপ্তাহ কাজ করলেই শনি-রবিবার হাতে চলে আসত টাকা।

Duttapukur Blast : ছ’মাস আগেই নালিশ থানায়, এলাকাবাসীর প্রশ্নে ‘মাসোহারা’
দেশালাই বাক্সের মতো দেখতে হয় পপ বাজির প্যাকেট। ২৪ টি প্যাকেট নিয়ে তৈরি হয় একটি পেটি। এক পেটি বাজি প্যাকেট করলেই মজুরি ১০০ টাকা। এক একজনের ৩-৪ পেটি বাজি প্যাকেট করা কোনও ব্যাপারই নয়। পপ বাজি কোনও বিস্ফোরক নয়। ছোট ছোট বালির নুড়ি পাথর জলে ধুয়ে রোদে শুকনো হত। সেই পাথর মেশিনে দিয়ে আরও আয়তনে ছোট করে তাতে কেমিক্যাল মাখিয়ে ফের রোদে দেওয়া হত। তারপর ছোট ছোট পুরিয়া করে প্যাকেটে ভরা হত। এটাই ছিল শ্রমিকদের কাজ। পপ বাজি শক্ত জায়গায় ছুড়লেই তা থেকে একটা শব্দ বের হয়। এই বাজির ব্যাপক বাজার ছিল বলে জানিয়েছেন গুল্লু।

যারা পপ বাজির মেশিন চালাতো তার সকলেই বিহার থেকে আসতেন বলে জানা গিয়েছে। তাঁরা এখানে ঘরভাড়া নিয়ে থাকতেন। মেশিনে অন্য কারও হাত দেওয়া নিষেধ ছিল। বিহারের শ্রমিক কেন? তখনই এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত বিহারের দুই মালিকের কথা জানতে পারা যায়। জানা গিয়েছে মালিকদের একজনের নাম বান্টি। আরেকজনের নাম এখনও জানা যায়নি। এই মালিকদের একজনের গাড়িতেই ঘটনার দিন ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা।

দত্তপুকুরে ফের উদ্ধার দেহ, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর বিস্ফোরক দাবি বাজি শিল্প সমিতির
KBM ভাটায় থাকা বিশাল ল্যাব এখন পুলিশ সিল করে দিয়েছে। সর্বক্ষণের জন্য সেখানে বসেছে পুলিশি পাহারা। ল্যাবের রেজিস্টারে রোজকার শ্রমিকদের নাম, ঠিকানা ও ফোন নম্বর নথিভুক্ত রয়েছে। KBM ভাটার পাশে জমিতে কিছুটা দূরেই তৈরি হত সেল। তবে সেল বানানোর লোক ছিল আলাদা।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version