এই প্রথম নয়, প্রায় ছয় বছর আগে তারাপীঠে মায়ের পায়ে জমা পড়া বিপুল পরিমাণ ফুলকে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। তৎকালীন রামপুরহাটের মহকুমা শাসক বিধান রায় যিনি বর্তমানে বীরভূমের জেলাশাসক এই উদ্যোগ ছিল তাঁরই মস্তিষ্কপ্রসূত। তাঁর উদ্যোগেই তারাপীঠের মা তারা চরণে জমা পড়া ফুল দিয়ে জৈব সার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল । মল্লারপুরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা মা তারার চরণে অর্পণ করা প্রায় ৪০ থেকে ৫০ কিলো ফুল সংগ্রহ করে নিয়ে এসে সেই ফুল বাছাই করে। তার মধ্য থেকে সুতো, আলতা, সিঁদুর এগুলিকে আলাদা করে ফেলা হয় প্রথমে। ফুলগুলিকে শুকিয়ে, তাতে গোবর ও অন্যান্য সামগ্রী দিয়ে প্রায় ৬৫ দিন ধরে বিশেষ প্রক্রিয়া মাধ্যমে তাকে রূপান্তরিত করে জৈব সারে। পরে সেই সার কুড়ি টাকা প্রতি কেজির দরে চাষীদের কাছে বিক্রি করা হয় ।
এই বছর কৌশিকী অমাবস্যায় তারাপীঠে মা তারার চরণে পড়েছে প্রায় দশ কুইন্টাল ফুল । যা একাধিক বড় গাড়িতে করে ডাম্পিং ইয়ার্ডে নিয়ে যেতে সময় লেগেছে তিনদিন । এই ১০ কুইন্টাল ফুল থেকেই বর্জ্য আলাদা করে প্রায় এক কুইন্টাল ২৫ কিলো জৈব সার প্রস্তুত করাই এখন কার্যত চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রস্তুত কারক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কাছে ।
মল্লারপুরের স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার সাধন সিংহ জানান,’এই ফুল থেকে জৈব সার প্রস্তুত করার জন্য প্রায় নয় জন কাজ করে । এমনিতে সারা বছর আমরা সপ্তাহে পাঁচ দিন একটি গাড়িতে করে তারাপীঠ মন্দির থেকে ফুল সংগ্রহ করি। কিন্তু এবছর কৌশিকী অমাবস্যায় মা তারা চরণে পড়েছে প্রায় দশ কুইন্টাল ফুল। একাধিক বড় গাড়ি লাগিয়ে প্রায় তিন দিন সময় লেগেছে পুরো ফুল আনতে । এরপরে পাঁচ জন মহিলা আছেন যারা হাতে করে এই ফুল থেকে সুতো, আলতা, সিঁদুরের মতো বর্জ্য গুলি আলাদা করবেন । তারপর সেই ফুল শুকিয়ে একটি ৬৫ দিনের দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সম্পূর্ণভাবে তৈরি হবে জৈব সার। আর যা এক কথায় চ্যালেঞ্জই বলা যেতে পারে। তবে এই জৈব সার আমরা চাষীদের বিক্রি করি, কিন্তু কোন লাভ করি না। যেখানে আমাদের এই সার প্রতি কেজি তৈরি করতে খরচ হয় ৫০ টাকা আমরা সেখানে কুড়ি টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি করি। কারণ একটাই জৈব সার এর ব্যবহারে চাষীদের উদ্বুদ্ধ করা পরিবেশ দূষণ রোধ করা।’