এই সময়: ডেঙ্গিতে সময়মতো যথাযথ চিকিৎসা না-হওয়ার মাসুল দিলো দু’টি তরতাজা প্রাণ। তার মধ্যে একজন দক্ষিণ দমদম পুরসভার অধীন বাঙুর অ্যাভিনিউয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সংযুক্তা পাল (১২), যার মৃত্যু হয়েছে বুধবারই। অন্য জন কলকাতা পুরসভার ১০২ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বাঘাযতীন চিত্তরঞ্জন কলোনির স্কুল শিক্ষিকা, সাত দিনের সদ্যোজাতের মা পায়েল নন্দী (৩৩)। গত ২ সেপ্টেম্বর তাঁর মৃত্যু হলেও সে কথাও প্রকাশ্যে এসেছে এ দিন।

দু’টি ঘটনাতেই দেরিতে চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনায় দেরির অভিযোগ তাঁর বাড়ির লোকেরই বিরুদ্ধে। আর শিক্ষিকার মৃত্যুতে অমানবিক অভিযোগের তির শহরের দু’টি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে। গত ২৬ অগস্ট আসন্নপ্রসবা পায়েলকে ভর্তি করা হয় একটি হাসপাতালে। ওই দিনই তিনি সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু পুত্রসন্তান প্রসবের তিন দিনের মাথায় তাঁর জ্বর আসে। রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, ডেঙ্গি পজ়িটিভ তিনি।

Dengue in Kolkata : ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু তরুণ চিকিৎসকের, করে গেলেন চক্ষুদান
পায়েলের স্বামী রাকেশ বসুর অভিযোগ, ‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ স্ত্রীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেন। ডেঙ্গির চিকিৎসা করার বদলে হাসপাতাল যুক্তি দেয়, পায়েল সেখানে থাকলে অন্যদের নাকি ডেঙ্গির আশঙ্কা রয়েছে! আমি হতবাক হয়ে যাই।’ তিনি জানান, গত্যন্তর না দেখে স্ত্রীকে নিয়ে ৩০ অগস্ট তিনি অন্য একটি হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু অভিযোগ, সেখানে স্বাস্থ্যবিমা সংস্থার ‘ক্যাশলেস’ পরিষেবা না-থাকায় চিকিৎসা হয়নি।

অনন্যোপায় হয়ে রাকেশ পরের দিনই পায়েলকে ভর্তি করেন ইএম বাইপাসের ধারে একটি নামী বেসরকারি হাসপাতালে। কিন্তু রোগিণীর অবস্থার ক্রমেই অবনতি হতে থাকে। আইটিইউ, ভেন্টিলেশনে রেখেও শেষরক্ষা হয়নি। দুধের শিশুকে রেখে মারা যান মা। অন্য দিকে বাঙুরের সংযুক্তার রবিবার জ্বর আসে। তার দিন সাতেক আগে ওই বালিকার বাবা সৌরভ পালেরও জ্বর এসেছিল। দু’দিন পর রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে।

Dengue in Kolkata : ফের দমদম! ডেঙ্গির বলি এবার স্কুল ছাত্রী, আতঙ্কে স্থানীয়রা
তবে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়েনি। রবিবার জ্বর এলে মঙ্গলবার সংযুক্তারও ডেঙ্গি ধরা পড়ে। প্রথম দু’দিন ঠিক থাকলেও মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হয় বমি এবং সারা শরীরে অসহ্য যন্ত্রণা। বিকেলে তাকে সাতগাছির একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তবে অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় ভিআইপি রোড লাগোয়া অন্য একটি হাসপাতালে। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্কটজনক ছিল যে ইমার্জেন্সিতেই ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয় সংযুক্তাকে।

Nipah Virus: কলকাতাতেও নিপা আতঙ্ক! নয়া ভাইরাসে আক্রান্ত সন্দেহে বেলেঘাটা আইডি-তে ভর্তি ১
কিন্তু আইসিইউ-তেও বাঁচানো যায়নি মতিঝিল গার্লস হাইস্কুলের ক্লাস সেভেনের ওই ছাত্রীকে। বুধবার বেলা ১১.২৫ নাগাদ মৃত্যু হয় বালিকার। এ নিয়ে দক্ষিণ দমদমে ডেঙ্গিতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে হলো ৫। আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে চারশোরও বেশি। তবে সংযুক্তার মৃত্যুর পিছনে পরিবারের গাফিলতি রয়েছে বলেই অভিযোগ তুলেছেন পুরসভার চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) সঞ্জয় দাস। তিনি বলেন, ‘শুরুতেই ওই বালিকার রক্ত পরীক্ষা করলে এই পরিস্থিতি হতো না। দেরিতে চিকিৎসা শুরু হওয়ার কারণেই মৃত্যু।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version