এই সময়: কাড়ি কাড়ি মাছ পাচ্ছে সব বোট। কিন্তু কী এক অলৌকিক কারণে চান মাঝির বোটের জালে মাছই উঠছে না। গভীর সমুদ্রে পাক খাচ্ছে ট্রলার, যাচ্ছে এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত— মাছের দেখা নেই। ‘হাওয়া’ ছবির কাহিনি এমনটাই। বাংলাদেশে, সেখানকার অভিনেতাদের নিয়ে তৈরি ছবি। তবে গল্প নয়, বাস্তবে বাংলাদেশের সৌজন্যেই হয়তো কিছুটা মিটতে চলেছে পশ্চিমবঙ্গের ইলিশ মাছের আকাল। ও পার থেকে ইলিশ সরকারি ভাবে ঢুকতে শুরু করল এ বার বাংলায়।

বুধবার সন্ধ্যায় বনগাঁর পেট্রাপোল আন্তর্জাতিক সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশ থেকে ৩০ টন ইলিশ পশ্চিমবঙ্গে ঢুকেছে। এটাই এ বারের মরশুমে বাংলাদেশের প্রথম ‘ইলিশ-উপহার’। সব ঠিক থাকলে কাল, শুক্রবার থেকে কলকাতা এবং শহরতলির বিভিন্ন বাজারে মিলবে বাংলাদেশের ইলিশ। যেগুলোর গড় ওজন ১ কেজি ৩০০ গ্রাম থেকে দেড় কেজি। ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের মাঝারি সাইজে়র ইলিশও রয়েছে। সূত্রের খবর, খুচরো বাজারে বাংলাদেশি ইলিশ কিনতে পাওয়া যাবে কেজি প্রতি ১৩০০-১৮০০ টাকায়।

Hilsa Fish Price : পেল্লাই সাইজের ইলিশ বাজারে, দাম শুনে চোখ কপালে ক্রেতাদের!
বুধবারই বাংলাদেশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এ বার পুজোর মরশুমে ভারতে মোট ৩ হাজার ৯৫৯ টন ইলিশ রপ্তানি করবে। আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে শেখ হাসিনা সরকার। ভবিষ্যতে সেই সময়সীমা আরও বাড়তে পারে বলে কেউ কেউ আশা করছেন। তার ফলে রাজ্যে ইলিশের খরা কিছুটা কাটবে বলে মনে করছেন মৎস্য ব্যবসায়ীরা।

বাংলাদেশ সরকারের মৎস্য দপ্তরের এক শীর্ষকর্তা বুধবার ফোনে ‘এই সময়’-কে জানিয়েছেন, প্রথম পর্যায়ে ভারতে যে ইলিশ পাঠানো হচ্ছে, তার অধিকাংশই বরিশালের। কীর্তনখোলা, আড়িয়াল খাঁ, বিষখালি, সন্ধ্যা এবং অবশ্যই পদ্মা নদীর কিছুটা ইলিশ রয়েছে এর মধ্যে। সবই মিষ্টি জলের মাছ। ফলে সেগুলো স্বাদে-গন্ধে উচ্চাঙ্গের হবে বলে জানাচ্ছেন বাংলাদেশের মৎস্য দপ্তরের আধিকারিকদের একাংশ। রপ্তানির আগে তাঁরা ইলিশের তার গুণমত মানও যাচাই করেছেন।

Hilsa Fish : পুজোয় বাংলাকে ৫ হাজার টন ইলিশ উপহার হাসিনার, কমবে দাম?
দুর্গাপুজোয় বা শারদোৎসবে বাংলার বহু বাড়িতেই ইলিশ খাওয়ার চল রয়েছে। সে কথা মাথায় রেখে প্রায় প্রত্যেক বছর পুজোর আগে ভারতে ইলিশ রপ্তানি করে বাংলাদেশ সরকার। তবে গত কয়েক বছরের তুলনায় এ বার রপ্তানির পরিমাণ অনেকটা বাড়ানো হয়েছে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ২০২২ সালে বাংলাদেশ সরকার মোট ২ হাজার ৯০০ টন ইলিশ ভারতে রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল। যদিও বাস্তবে এসেছিল মাত্র ১ হাজার ৩০০ টন। এ বার সেটা বাড়িয়ে প্রায় ৪ হাজার টন করা হয়েছে। আগে বেশ কয়েকটি বছরে মাত্র ১৫ দিনের জন্য ভারতে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিত বাংলাদেশ প্রশাসন। এ বার সেটা বাড়িয়ে এক মাস করা হয়েছে।

মাছ আমদানি করা সংস্থা, সিদ্ধেশরী এন্টারপ্রাইজ়-এর কর্ণধার রামকৃষ্ণ বিশ্বাস জানাচ্ছেন, বাংলাদেশে থেকে যে সব ইলিশ আসছে তার সর্বনিম্ন ওজন ৮০০-৯০০ গ্রাম। কোনওটার ওজন ১ কেজি ৩০০ গ্রাম, দেড় কিলো সাইজের ইলিশও রয়েছে। ছোট সাইজে়র ইলিশের দাম পাইকারি বাজারে পড়বে কেজিতে প্রায় ১২০০ টাকা। সেটা খুচরো বাজারে বিক্রি হবে ১৩০০-১৫০০ টাকায়। ১ কেজি ৩০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের দাম পাইকারি বাজারে পড়বে কেজিতে ১৫০০ টাকা। খুচরো বাজারে তার দাম হবে ১৬০০-১৭০০ টাকা। দেড় কেজি ইলিশের পাইকারি দামই ১৬০০ টাকা এবং খুচরো বাজারের তার দাম হবে কেজি প্রতি অন্তত ১৮০০ টাকা।

Padma Ilish In Kolkata : ভারতকে হাসিনার পুজোর উপহার, আসছে ৫ হাজার টন পদ্মার ইলিশ
এ বার জুলাইয়ের মাঝামাঝি প্রথম বার এই রাজ্যে ইলিশের ঢল নেমেছিল। কিন্তু সেটাই প্রথম, সেটাই শেষ। তার পর পূর্ণিমা, অমাবস্যা— বেশ কয়েকটি কোটাল গিয়েছে। ইলিশের ঝাঁক আর ওঠেনি। তার কারণও কেউ বুঝে উঠতে পারছেন না। ঠিক ‘হাওয়া’ ছবির চান মাঝির মতোই।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version