শ্যামগোপাল রায়

যাদবপুরের বাসিন্দা ডোনা দাসের (১২) জ্বর এসেছিল বুধবার সকালে। বৃহস্পতিবার ডেঙ্গি টেস্ট করতেই জানা যায়, রিপোর্ট পজিটিভ। প্লেটলেট কাউন্ট ছিল ১ লক্ষ ৫৮ হাজার। বাড়িতে থেকেই চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু, শনিবার সকাল ১০ টার পর থেকে হঠাৎ করেই পেটে ব্যথা শুরু হয় ডোনার। বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ এমআর বাঙুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মৃত্যু হয় ওই বালিকার।

ডোনার মতোই দক্ষিণ দমদমের সংযুক্তা পালের(১২) গল্পটাও একই রকম। গত রবিবার জ্বর আসে সংযুক্তার। মঙ্গলবার টেস্ট করতেই দেখা যায়, ওই বালিকাও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। রবি, সোম ঠিক থাকলেও মঙ্গলবার দুপুর থেকে শুরু হয় বমি এবং সারা শরীরে ব্যথা। ওই দিন বিকেলের রিপোর্টে দেখা যায়, প্লেটলেট নেমে এসেছে ২০ হাজারের নীচে। রাতেই মৃত্যু হয় ওই বালিকার।

Dengue Fever : ডেঙ্গির ভয়ে মশারির ভিতরে সেধিছে গিয়েছে আস্ত গ্রাম
ডোনা এবং সংযুক্তার প্রথমদিনের পর আর প্লেটলেট কাউন্ট করা হয়নি। ফলে, একধাক্কায় যে প্লেটলেট অনেকটা নীচে নেমে গিয়েছে তা টেরই পায়নি পরিবার। এমন ঘটনায় বৃহত্তর কলকাতায় গত দেড় মাসে ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৪ জনেরই বয়স ১৫-র নীচে বলে স্বাস্থ্য ভবন সূত্রে খবর। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, ডেঙ্গি আক্রান্তদের অনেকেই বাড়িতে থেকে সুস্থ হচ্ছেন ঠিকই।

কিন্তু, প্রতিদিন প্লেটলেট কাউন্ট করাচ্ছেন না। হঠাৎ করে প্লেটলেট কাউন্ট কমলেও তা জানা যাচ্ছে না। যখন হাসপাতালে আনা হচ্ছে আক্রান্তকে, তত ক্ষণে ক্ষতি যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে। মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ‘ডেঙ্গির আক্রান্তদের জ্বরের সঙ্গে আর কোনও সমস্যা না থাকলে বাড়িতে থেকেই সুস্থ হওয়া সম্ভব। কিন্তু, নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে থাকতে হবে। যেমন প্রতিদিন প্লেটলেট কাউন্ট করাতে হবে। পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার খাওয়াটা জরুরি, যাতে শরীরে জলের অভাব না হয়।

Dengue Fever : দক্ষিণ ছাড়িয়ে উত্তরেও সংক্রমণ বাড়ছে ডেঙ্গির
কিন্তু, সেটা অনেকে না-করায় বিপদ ঘটে যাচ্ছে।’ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ তথা চিকিৎসক অনির্বাণ দলুইয়ের বক্তব্য, ‘বড়দের তুলনায় ছোটদের শরীরে জলধারণ ক্ষমতা অনেকটাই কম। তাছাড়া, ছোটদের অনেকেই তরল খাবার খেতে চায় না। ফলে, শরীরে তরলের অভাব ঘটে। সেকারণেই প্রতিদিন প্লেটলেট কাউন্ট করাটা ভীষণ জরুরি। কারণ, ১৮ বছরের নীচে যাদের বয়স, তাদের প্লেটলেট এক ধাক্কায় একদিনে অনেকটাই নীচে নেমে যায়। হার্ট এবং লিভারের ক্ষতি করে’।

Dengue Fever : সাত দিনের শিশুকে রেখে ডেঙ্গির বলি মা, মৃত ছাত্রীও
ডেঙ্গি নিয়ে যারা হাসপাতালে ভর্তি হন, তাদের দু’বেলা প্লেটলেট কাউন্ট করানো হয়। সেই সঙ্গে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল খাবার দেওয়া হয় বলেই জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ফলে, আক্রান্তরা বাড়িতে থাকলে প্রতিদিন ১ বার প্লেটলেট কাউন্ট করাটা ভীষণ জরুরি বলে জানাচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। মেডিসিন তথা ক্রিটিক্যাল কেয়ার বিশেষজ্ঞ দীপঙ্কর সরকারের পরামর্শ, ‘প্লেটলেট কাউন্ট করানোর পাশাপাশি অন্তত ৩ লিটারের বেশি জল খাওয়াতে হবে। শারীরিক সমস্যা দেখা দিলেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version