উনিশ শতকে বাঁকুড়া জেলায় যে সমস্ত জমিদারবাড়িতে দুর্গাপুজো হত, তার মধ্যে অন্যতম দারকেশ্বর নদের তীরে অযোধ্যা গ্রামের বন্দ্যোপাধ্যায় জমিদারবাড়ির দুর্গাপুজো। প্রায় ২০০ বছরের এই দুর্গা পুজোর জৌলুস বর্তমানে আগের চেয়ে কমলেও, বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য আজও অমলিন।

নীলকর সাহেব দিয়েছিলেন সম্পত্তির ভাগ
শোনা যায়, এই বংশের প্রতিষ্ঠাতা রামমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সুসম্পর্ক তৈরি হয় শ্রীরামপুরের এক নীলকর সাহেবের। সেই নীলকর সাহেব যখন মৃত্যু শয্যায়, সেইসময় তিনি তাঁর সম্পত্তির ৫০ শতাংশ রামমোহনবাবুকে দিয়ে যান। নীলকর সাহেবের থেকে প্রাপ্ত সম্পত্তিতে ভর করেই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার একের পর এক মৌজা কিনে বাঁকুড়ার অযোধ্যা গ্রামেই জমিদারির সূচনা করে। এমনকী সেই সময়ে বাঁকুড়া ছাড়াও হুগলি, অবিভক্ত বর্ধমান ও অবিভক্ত মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ৮৫টি মৌজার জমিদার হয়ে উঠেছিল এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার। এছাড়াও জমিদারি ছিল কাশী, বেনারস ও তৎকালীন বিহারের বিভিন্ন জায়গাতেও। তবে এই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের সদস্যরা অবশ্য কখনও জোর করে চাষিদের নীলচাষে বাধ্য করেননি বলেই শোনা যায়।

Belur Math Kumari Puja : বেলুড় মঠের কুমারী পুজোর সূচনা স্বয়ং স্বামীজির হাতেই, প্রথমবারে কী হয়েছিল জানেন?
দেবী এখানে ব্যাঘ্রবাহিনী
জমিদারির বিপুল আয়ে সেই সময় অযোধ্যা গ্রামে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশাল জমিদারবাড়ি ও দেবোত্তর এস্টেট। সেখানে ছিল দ্বাদশ শিব মন্দির, গিরি গোবর্ধন মন্দির, রাসমন্দির, ঝুলন মন্দির ও দুর্গা মন্দির। শুরু হয় দুর্গাপুজো। এখানে দেবী সিংহবাহিনী নন, ব্যাঘ্রবাহিনী। প্রতিমাতেও বিশেষ নজরকাড়া সাবেকিয়ানা রয়েছে। শ্রী শ্রী চণ্ডীতে মায়ের যেমন মূর্তির কথা উল্লেখ আছে, সেই অনুযায়ী এখানে মূর্তি তৈরি হয়। এখানে দেবীর মুখ ছাঁচে নয়, বংশপরম্পরার প্রতিমাশিল্পীরা হাতে তৈরি করেন। তাই এই পরিবারের দেবীর মুখ, আশেপাশের কোনও দুর্গা প্রতিমার সঙ্গে মেলে না। সেই সময়ে উপচে পড়েছিল জমিদারির বিপুল আয়, আর তার ছাপ পড়েছিল পুজোয়। পাইক, বরকন্দাজ, বিভিন্ন রাজকর্মচারী ও প্রজাদের আনাগোনায় দুর্গাপুজো কার্যত উৎসবের চেহারা নিত।

Top 10 Durga Puja Pandal In West Bengal : কলকাতাকে টক্কর দেবে জেলার সেরা ১০ পুজো, না দেখলে বড় মিস
পুজোর সেই জেল্লা এখন অনেকটা কমেছে ঠিকই, আজও দেবীর পুজোয় নিষ্ঠার ঘাটতি নেই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারে। আজও প্রাচীন রীতি মেনে পুজো এলেই ভাঁড়ার থেকে বের করে আনা হয় নবপত্রিকা, রুপোর পালকি ও পুজোর যাবতীয় রুপোর বাসন। পাশাপাশি আজও পুজো এলেই প্রাচীন জমিদারবাড়ির দেবোত্তর এস্টেটে ভিড় জমান দূর দূরান্তে থাকা এই পরিবারের সদস্যরা। হইহই করে কাটে পুজোর দিনগুলি।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version