এই সময়: ভয়াবহ বিপর্যয়ের পর কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। কিন্তু প্রতিকূল আবহাওয়ার জন্য এখনও সিকিমে আটকে পড়া পর্যটকদের ফেরানোর কাজ শুরু করতে পারেনি প্রশাসন। এরই মধ্যে নতুন করে বিপর্যয়ের শঙ্কা তৈরি হলো বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, উত্তর সিকিমের থাঙ্গু এলাকার শাকো-চো লেকে হড়পা বানের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গ্যাংটকের জেলাশাসক তুষার নিখারে জানিয়েছেন, উপগ্রহ মারফত পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, শাকো-চো লেকের উপরের হিমবাহের তাপমাত্রা অস্বাভাবিক ভাবে বাড়ছে। সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই লেকের আশপাশের এলাকার বাসিন্দাদের নিরাপদ এলাকায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যেহেতু আগের দুর্ঘটনার ফলে নদীতে পলি বেড়ে গিয়েছে, ফলে নতুন করে জলস্তর বাড়লে বিপর্যয়ের মাত্রা বাড়বে।

Puja Tour Plan : হোটেল থেকে গাড়ি-সব বুকড, পুজোয় কি যাওয়া যাবে পাহাড়ে? প্রশ্ন পর্যটকদের
সিকিম প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্ভবত আজ, শুক্রবার থেকে এয়ার লিফট করে পর্যটকদের ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু হবে। কেউ কেউ অবশ্য নিজেদের উদ্যোগে সড়ক পথে ফেরার চেষ্টা করছেন। বাংলা ও সিকিমের সঙ্গে প্রধান সংযোগকারী রাস্তা ১০ নম্বর জাতীয় সড়কের একটা বড় অংশ তিস্তার গর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে। তাই আপাতত সেখান দিয়ে গাড়ি চলাচল সম্ভব হচ্ছে না।

সরকারি সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এই মুহূর্তে প্রায় ৩ হাজার ট্যুরিস্ট সিকিমে আটকে রয়েছে। তার মধ্যে ২ হাজার বাংলার। লাচেন এবং উত্তর সিকিমের দুর্গম এলাকায় মোট ৪৫০ জন পর্যটক আটকে রয়েছেন। সকলেই বাংলার বাসিন্দা। বিপর্যয়ের পর থেকে বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ। সরকারি ভাবে এ পর্যন্ত মোট ৩২টি দেহ উদ্ধার হয়েছে।

Sikkim Flash Flood Update: হড়পা বানে উধাও রাস্তা, ভেঙেছে সেতু! সিকিমের কোথায় কোথায় আটকে পর্যটকরা?
জলপাইগুড়ি জেলার মাল, ময়নাগুড়ি এবং কোতয়ালি থানা এলাকায় তিস্তা নদী থেকে ১৮টি এবং সিকিমে ১৪টি দেহ বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত ভেসে এসেছে। তাদের মধ্যে চারজন সেনাকর্মী। মৃতদের মধ্যে একজনের বাড়ি কোচবিহারের ভেটাগুড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের রুইয়েরকুঠি গ্রামে। নাম রাহুল মোদক (২৭)। রবিবার শেষবারের মত বাড়িতে এসেছিলেন। যাওয়ার সময় ঠাকুমা খুকিবালা মোদককে বলে গিয়েছিলেন, এবার পুজোয় তাঁকে ঠাকুর দেখাতে নিয়ে যাবেন।

তার আগেই নাতির এই পরিণতি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না খুকিবালা। চোখের জল ফেলে তিনি বলেন, ‘এতো হাসিখুশি ছেলেটা আর নেই, এটা মেনে নিতে বড় কষ্ট হচ্ছে।’ জানা গিয়েছে, সিকিমের রংপোতে একটি ব্যাঙ্কে কাজ করতেন রাহুল। সেখানেই বন্ধুর সঙ্গে ভাড়া বাড়িতে থাকতেন৷ মঙ্গলবার রাতে প্রবল জলোচ্ছ্বাসের সময় বাড়ির ছাদে ছিলেন রাহুল ও তার বন্ধু। গাছ আকঁড়ে বন্ধুটি কোনও মতে প্রাণে বাঁচলেও জলের তোড়ে ভেসে যায় রাহুল।

PM Modi Sikkim Flash Flood: হড়পা বানে কী অবস্থা সিকিমের? মুখ্যমন্ত্রীকে ফোন করে খোঁজ নিলেন মোদী
বুধবার রাতে সোশ্যাল মিডিয়ায় সিকিমের প্রাকৃতিক দুর্যোগে উদ্ধার হওয়া মৃত ব্যক্তিদের ছবি দেখে সন্দেহ হয় পরিবারের। পরে শিলিগুড়ি উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে গিয়ে দেহ শনাক্ত করে পরিবারের লোকেরা। রাহুল ছাড়াও পরিবারে রয়েছে তার বাবা মা দিদি। বাবার সব্জি ব্যবসা করে চলত সংসার। বাড়তি আয় করে বাবা মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে অভাব দূর করার স্বপ্ন ছিল রাহুলের।

তবে সব স্বপ্নই অধরা থেকে গেল রাহুলের৷ এরই মধ্যে এদিন দুর্গত এলাকায় যান বাংলার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তার আগে রাজ্যপালকে তৃণমূলের পক্ষ থেকে কালো পতাকা দেখানো হয়।

https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version