তাপস প্রামাণিক

বিরিয়ানির নাম শুনলেই অনেকেরই জিভে জল আসে। নবাবি খানা হলেও অনেক দিন ধরেই বাঙালির রসনা-তৃপ্তির অন্যতম উপাদান বিরিয়ানি। পাড়ার অলিতে-গলিতে গজিয়ে উঠেছে অসংখ্য বিরিয়ানির স্টল। হাতের সামনে বিরিয়ানি পেলে অনেকেই চেটেপুটে খান। কিন্তু রাস্তাঘাটে যে বিরিয়ানি বিক্রি হয়, তা কতটা নিরাপদ? স্বাস্থ্য দফতরের রিপোর্ট বলছে, খদ্দের টানতে বিরিয়ানিতে এমন সব ক্ষতিকারক রং মেশানো হচ্ছে যা শুনলে অনেকেই হয়তো বিরিয়ানি খাওয়ার আগে দু’বার ভাববেন।

স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা জানাচ্ছেন, খাদ্যে ভেজাল ধরতে সম্প্রতি দিঘা পর্যটন কেন্দ্রে আচমকা অভিযান চালান আধিকারিকরা। তাঁরা জানতে পারেন, কাঠের আসবাবপত্র পালিশ করার জন্যে যে রং ব্যবহার হয়, সেটাই বিরিয়ানিতে দেওয়া হচ্ছে। প্রশ্নের মুখে দোকানদাররা স্বীকারও করে নেন, খরচ বাঁচাতেই বিরিয়ানিতে কাঠের রং ব্যবহার করছেন।

পুজোয়ে বাঙালির প্রথম পছন্দ বিরিয়ানি! কলকাতার সেরা 5টি রেস্তোরাঁয় কত দাম? জেনে নিন
চিকেন তন্দুরিতেও সেই রং দেওয়া হচ্ছে। যদিও সেই রঙের প্যাকেটে স্পষ্টই লেখা, শুধুমাত্র শিল্পক্ষেত্রেই সেটা ব্যবহার করা যেতে পারে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছেন, এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বিশেষ করে ছোট দোকানদাররা বিরিয়ানিতে কামধনু ব্র্যান্ডের এক ধরনের রং মেশাচ্ছেন৷ এ-সব দিয়ে সাধারণত কাঠ পালিশই হয়। মানবদেহের পক্ষে এই রং অত্যন্ত ক্ষতিকর। এই পরিপ্রেক্ষিতে নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য দফতর।

আর ক’দিন বাদেই পুজো। সেই সময়ে অনেকেই রাস্তাঘাটে বিরিয়ানির স্টল দেন। তা থেকে যাতে মানুষের বড় বিপদ না ঘটে, সে জন্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর। খাবারে নিষিদ্ধ রাসায়নিকের ব্যবহার ঠেকাতে পুজোর আগে রাজ্যজুড়ে অভিযান শুরু হচ্ছে। খাবারে ভেজাল ধরার জন্যে অফিসারদের সুনির্দিষ্ট টার্গেটও বেঁধে দেওয়া হচ্ছে।

আঙুলের ছাপের ‘ফিক্সড রেট’, সস্তায় দেদার বিক্রি বায়োমেট্রিক তথ্য! আধার-তদন্তে নেমে তাজ্জব পুলিশ
প্রবীণ চিকিৎসক প্রদীপ রায়চৌধুরী বলেন, ‘বিরিয়ানিটা যাতে দেখতে ভালো হয়, সে জন্যে অনেক দোকানদার রং মেশান। কিছু খাবারের রং পাওয়া যায়, সেগুলি মানবদেহের পক্ষে অতটা ক্ষতিকর নয়। কিন্তু তার দাম বেশি বলে অনেকে কমদামের রাসায়নিক ব্যবহার করেন। সে-সব খুবই ক্ষতিকারক। দীর্ঘদিন ধরে এই রাসায়নিক মানুষের শরীরে ঢুকলে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। শরীরের অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের উপরেও বিরূপ প্রভাব পড়বে।’

কলকাতার জানবাজারের এক ফুডস্টল মালিক জানাচ্ছেন, খাবারে যে রং দেওয়ার কথা, সেটা কিনতে ৭০-৮০ টাকা খরচ। সেখানে কাঠ পালিশের রংয়ের প্যাকেটে ১০-১৫ টাকা লাগে। সে জন্যে ছোট দোকানদাররা বাধ্য হয়েই ওই রং ব্যবহার করছেন। তাঁর কথায়, ‘বড় দোকানে এক প্লেট বিরিয়ানি খেতে ২০০-২৫০ টাকা লেগে যায়। সেখানে আমরা মাত্র ৮০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি খাওয়াচ্ছি। দামি রং ব্যবহার করলে বিরিয়ানির দামও বাড়াতে হবে। আমাদের থেকে অত দামে লোকে বিরিয়ানি খাবে না।’

Jal Jeevan Mission: পানীয় জল পৌঁছনোয় দেরি, প্রবল ক্ষুব্ধ নবান্ন
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২৩-’২৪ অর্থবর্ষে এখনও অবধি ১৫ হাজার খাবারের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। খাবারে ভেজাল মেশানোর কারণে ২০০০টি কেসও করা হয়েছে।

অনুমোদিত ফুড কালার:
লাল রং- এরিথ্রোসিন, পনসিউ ৪ আর
হলুদ রং- টারট্রাজিন, সানসেট ইয়েলো এফসিএফ
নীল রং- ইন্ডিগো কারমোসিন, ব্রিলিয়ান্ট ব্লু এফসিএফ
সবুজ রং- ফাস্ট গ্রিন এফসিএফ

নিষিদ্ধ রং মিশছে কীসে:
বিটা ক্যারোটিন- শাক, সব্জি, সন্দেশ
মেটানিল ইয়েলো – জিলিপি, লাড্ডু, বোঁদে, ঘুগনি
অরেঞ্জ ওয়ান-টু- লজেন্স, স্কোয়াস, ঠাণ্ডা পানীয়
রোডামিন বি- টমাটো শস, আইসক্রিং, জ্যাম, জেলি
লেড ক্রোমেট- হলুদ গুড়ো

https://whatsapp.com/channel/0029Va9zh58Gk1Fko2WtDl1A



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version