পার্থসারথি সেনগুপ্ত
সরকারি সহায়তা/অনুদানপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগে দুর্নীতির অভিযোগ ঘিরে গোটা রাজ্যই উত্তাল। এর প্রতিবাদে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ মাসের পর মাস ময়দানে অবস্থান-বিক্ষোভও চালাচ্ছেন। অভিযোগের তদন্তে কেন্দ্রীয় এজেন্সি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, শিক্ষা দপ্তরের একাধিক শীর্ষ আধিকারিক এবং শাসকদলের জনাকয়েক বিধায়ককেও গ্রেপ্তার করেছে।

এ বার শিক্ষাসচিবের কাছে রাজ্যের স্কুলশিক্ষা সংক্রান্ত পারফরম্যান্স অডিট রিপোর্টে ক্যাগ জানাল, নানা মহল থেকে হস্তক্ষেপের জেরেই সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগে বড় ধরনের ‘গোলমাল’ ঘটেছে। এ ক্ষেত্রে নিয়োগকারী ওয়েস্ট বেঙ্গল স্কুল সার্ভিস কমিশন কাগজেকলমে ‘স্বশাসিত’ হলেও তা আদতে রয়েছে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের অধীনেই।

চলতি পরিস্থিতির ময়নাতদন্তে ক্যাগের অডিটররা সরকারি স্কুলগুলির গঠনগত বিন্যাসেরও ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, স্কুলশিক্ষা দপ্তরের আওতায় একদিকে রয়েছে সরকারি স্কুল, অন্য দিকে সরকারি সহায়তা/অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল। সরকারি স্কুলগুলি পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। এগুলিতে শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের নিয়োগ হয় পাবলিক সর্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। খরচখরচা আসে রাজ্য সরকারের কনসলিডেটেড ফান্ড থেকে। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা কাজ করেন ওয়েস্ট বেঙ্গল সার্ভিস রুলস ১৯৭১-এর নিয়মনীতি মেনে। অডিটরদের বক্তব্য, ‘স্কুলশিক্ষা দপ্তরের আওতায় একমাত্র সরকারি স্কুলগুলির কর্মীরা সরকারি কর্মী হিসাবে গ্রাহ্য হন।’

অন্য দিকে, সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলগুলির নিয়োগ হয় স্কুল সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে। খরচখরচা আসে স্কুলশিক্ষা দপ্তরের গ্রান্টস ইন এইড থেকে। তবে ওয়েস্ট বেঙ্গল বোর্ড অফ স্কুল এডুকেশন রুলসে’র আওতায় এই সব স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরা অবশ্য সরকারি কর্মী নন। এই স্কুলগুলির পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছে সংশ্লিষ্ট ম্যানেজিং কমিটি। পরিসংখ্যানের নিরিখে, স্কুলশিক্ষা দপ্তরের ৮৪ হাজার স্কুলের মধ্যে সাকুল্যে ১২৯টি সরাসরি স্কুল। বাকিগুলি সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত। অর্থাৎ, সরকারি শিক্ষা পরিকাঠামোয় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের সংখ্যাগরিষ্ঠই সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলের সঙ্গে যুক্ত।

রাজনীতির জেরে অধঃপতন শিক্ষার মানে, জানাল ক্যাগ
এই প্রসঙ্গেই ক্যাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে, রাজ্য পাবলিক সার্ভিস কমিশন সাংবিধানিক ভাবেই একটি ‘স্বাধীন’ সংস্থা। এক সরকারি কর্তার কথায়, ‘একটি সাংবিধানিক সংস্থা হিসেবে নিরপেক্ষতার শর্ত মেনে প্রভাবমুক্ত ভাবে কমিশন নিয়োগের কাজ করবে, এমন রক্ষাকবচ পিএসসি পাচ্ছে সাংবিধানিক ভাবেই।’ এর বিপরীতে এসএসসি যে ‘চাপে’র মধ্যে রয়েছে, তা বলা হয়েছে ক্যাগ রিপোর্টেই। এমন জানিয়েছে ক্যাগ যে ‘… হালে এসএসসি’র যা অবস্থা দাঁড়িয়েছে তার অন্যতম প্রমাণ হলো এসএলএসটি ২০১৬-র মাধ্যমে সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগের প্রক্রিয়া এখনও থমকে। বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন।’ সরকারি কর্তার মতে, ‘সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলগুলিও রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুদানেই চলে। ফলে ক্যাগের রিপোর্টের সূত্র ধরে পিএসসি’র হাতেই এগুলির শিক্ষক-কর্মী নিয়োগের দায়িত্ব দিলে ভালো।’



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version