কালীপুজোর আগে নদিয়ার নবদ্বীপে পাওয়া গেল ‘অস্ত্র তৈরির কারখানা’। না না আপনি যেমন ভাবছেন, এ তেমন অস্ত্র নয়। চলছে উৎসবের মরশুম। আর এই সময় দেবদেবীর হাতে যে অস্ত্র লক্ষ্য করা যায়, এখানে তার কথাই বলা হচ্ছে। দুর্গাপুজো চলে গিয়েছে, সামনেই আসছে কালীপুজো। তারপরেই জগদ্ধাত্রী পুজো, আর তারপরেই আসছে নবদ্বীপের অন্যতম উৎসব রাশ। এই সমস্ত উৎসবে আরাধ্য দেবদেবীর হাতে যে সমস্ত অস্ত্র লক্ষ্য করা যায়, সেই অস্ত্র তৈরির কারখানাই রয়েছে নবদ্বীপ শহরের বুকে ছোটো একটি জায়গায়।

থানার পাশেই ‘অস্ত্র কারখানা’
নবদ্বীপ থানার একদমই পাশেই একটি বাড়িতে সারাবছর ধরে পিতলের সেই অস্ত্র তৈরি হয়। যদিও সারা বছর অস্ত্র তৈরি হলেও, উৎসবের মরশুমে এই ক’টা দিন কর্মীদের ব্যস্ততা থাকে তুঙ্গে। মূলত পিতল দিয়ে তৈরি করা হয় এই অস্ত্রগুলি। ছেনি হাতুড়ি দিয়ে লাগাতার পিটিয়ে ও কারুকার্য সহকারে এই অস্ত্রগুলি তৈরি করা হয়।

কারিগর রাজু অধিকারীর জানান, তিনি ৩০ বছর ধরে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। মূলত এই পেশা ছিল তাঁর পূর্বপুরুষদের। তিনি আরও জানান, আগে এই অস্ত্র অন্য ধাতু অর্থাৎ টিন দিয়ে অস্ত্র তৈরি হত। আর বর্তমানে পিতল বা অন্য কিছু ধাতু দিয়ে এই অস্ত্র তৈরি করা হয়। অন্যান্য বছরে তুলনায় এই বছর তাঁদের অস্ত্রের চাহিদাও বেশি বলেও জানান রাজু। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় কাঁচামালের দাম বেশি হওয়ায় কিছুটা অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের। তবে যেহেতু তাঁদের তৈরি অস্ত্রের চাহিদা বেশি, তাই সেই অসুবিধা থেকে তাঁরা বেরিয়ে আসতে পারবেন বলেই মনে করছেন।

দাম কত?
এই বছর এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৭ ফুট উচ্চতার খাঁড়া বা অস্ত্র তৈরি করেছেন তাঁরা। ছোট থেকে বড়, আকার অনুয়ায়ী নির্ধারিত হয় অস্ত্রের মূল্য। সেক্ষেত্রে ১০০ থেকে শুরু করে ৮ হাজার টাকারও অস্ত্র পাওয়া যায় ওই কারখানায়। রাজু অধিকারী ছাড়াও ওই কারখানায় কাজ করেন আরও ১৫ জন কর্মী।

সমস্ত দেব-দেবীর অস্ত্র তৈরি হয় ওই কারখানায়। বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। সমস্ত পুজোতেই দেব-দেবীর প্রতিমার সঙ্গে অস্ত্রের প্রয়োজন হয়। তাঁরা মা কালী, দেবী দুর্গা, দেবী জগদ্ধাত্রী ও রাশের বিভিন্ন প্রতিমার থেকে শুরু করে অন্যান্য সমস্ত দেবদেবীর অস্ত্র তৈরি করে থাকেন। যেহেতু সামনেই কালীপুজো, তাই এখন তাঁরা কালী প্রতিমার অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত। সমস্ত পুজোর আগেই তাঁরা নির্দিষ্ট সেই দেবদেবীর অস্ত্র তৈরি করে থাকেন বলে জানান রাজু অধিকারী। তাঁদের তৈরি খাঁড়া বা অস্ত্রগুলি সারা বাংলা তো বটেই, এমনকী বিহার, ওড়িশা ও ভিনদেশেও পাড়ি দেয়।



Source link

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Exit mobile version